
রাশিদুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম থেকেঃ
নামেই সরকারি গণগ্রন্থাগার। বাস্তবে ভিন্ন। ২৬ হাজার বইয়ের এই লাইব্রেরিতে নিবন্ধিত সদস্য মাত্র ৯৪জন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ১ হাজারের অধিক বই থাকলেই পাঠক নাই। এ যেন গরু শূন্য গোয়াল ঘর। তবুও যতজন পাঠক আসছে তাও আবার ক্যাটালগ অনুসারে বইয়ের তালিকা না থাকায় উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন পাঠকরা। ফলে দিন দিন প্রায় পাঠক শূন্য হয়ে পড়ছে কুড়িগ্রাম জেলা গণগ্রন্থাগারটি।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারটিতে বিষয় ভিত্তিক নির্ধারিত র্যাকে বই গোছানো বা ক্যাটালগ অনুসারে তালিকা না থাকায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে পাঠকদের। অপরিকল্পিত ও বিক্ষিপ্তভাবে বইগুলো সংরক্ষণ করায় অনেক প্রয়োজনীয় বই থাকলেও তা খুঁজে না পেয়ে ফিরে যেতে হয় পাঠকদের।
সরেজমিনে গণগ্রন্থাগারে গিয়ে দেখা যায়, একতলা ভবনটির পাঠকক্ষে ৪টি টেবিলে ৩০/৩৫ জন পাঠক পড়ছেন। এর মধ্যে পত্রিকার পাঠকই বেশি। বই পড়ছেন মাত্র ১০/১২ জন। নারী পাঠক দেখা যায় ৩ কলেজ ছাত্রীকে।
বিষয় ভিত্তিক সাজানো না থাকায় বিভিন্ন র্যাকে হণ্যে হয়ে নির্দিষ্ট বইটি খুঁজে পেতে হয়। চাহিদা অনুসারে বই পেতে হিমশিম খেতে হয় বলেও অভিযোগ পাঠকদের।
কুড়িগ্রাম জেলা গ্রন্থাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে বই রয়েছে ২৬ হাজার ১১২টি। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক বইয়ের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। অথচ বর্তমানে নিবন্ধিত সদস্য সংখ্যা মাত্র ৯৪ জন!
প্রতিদিন গড়ে অর্ধশত পাঠক গ্রন্থাগারে আসেন। তাদের ১৫ শতাংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ২৫ শতাংশ বেকার বা চাকরির সন্ধানকারী এবং বাকি ১০ শতাংশ অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক পাঠক। তরুণ প্রজন্মের পাঠকদের সাহিত্যে, গল্প, উপন্যাস ও কবিতায় আগ্রহ বেশি।
গ্রন্থাগারটিতে ৩টি কম্পিউটারসহ দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও আইটি বিশেষজ্ঞ ও কম্পিউটার অপারেটর না থাকায় মাঝে মধ্যেই বিঘেœ সৃষ্টি হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র তমাল আহমেদ জানায়, নির্ধারিত স্থানে বই সাজানো-গোছানো না থাকায় খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
নারী পাঠক কম হওয়ার বিষয়ে কুড়িগ্রম মজিদা আদর্শ ডিগ্রী কলেজের ছাত্রী বিংকি আখতার বলেন, মেয়েদের মাঝে এখনো গ্রন্থাগারে ঢুকতে সংকোচবোধ রয়েছে। এজন্য স্কুল-কলেজগুলোতে বই পড়ার সুযোগ-সুবিধার কথা জানিয়ে কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মেয়েদের উদ্বুদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, জেলা গ্রন্থাগারটিতে প্রয়োজনীয় ও গবেষণাধর্মী বইয়ের মারাত্মক সঙ্কট রয়েছে, যা বাড়ানো উচিত।
কুড়িগ্রাম জেলা গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান কে.এম মেহেদি হাসান বলেন, ক্যাটালগার না থাকায় ও জনবল সংকটে ক্যাটালগভিত্তিক বইয়ের তালিকা করা সম্ভব হয়নি। কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে পাঠক বাড়ানোসহ পাঠকের চাহিদা অনুসারে বই বাড়াতে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চাহিদা পত্র দেয়া হয়েছে।