সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে পোশাক কর্মীর কাজ করতেন কৃষ্ণা রানী দাস (৩০)। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল দিন। পাশাপাশি দরিদ্র বাবা-মাকে প্রতিমাসের উপার্জন থেকে সহযোগিতা করতো সে। এরমধ্যে বাবা রতন চন্দ্র দাস মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার শোক কাটতে না কাটতেই একরাতে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার।
একদিনের জ্বরে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়ে কৃষ্ণা। চাকরি হারাতে হয় তাকে। শুধু চাকরি নয়; তার এ অবস্থা দেখে স্বামী সুনীল দাস তাকে ছেড়ে অনত্র্য বিয়ে করেন।
দিশেহারা কৃষ্ণা দাসের আশ্রয় মেলে পাবনার চাটমোহর উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের কুবিরদিয়ার দাসপাড়া গ্রামে বৃদ্ধ মা বেলী রানী দাসের কাছে। বর্তমানে ভিক্ষা করে সংসার চলে মা-মেয়ের। তাদের এমন করুণ অবস্থা দেখে চাটমোহর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হোসেন ধোনী তার জায়গার ওপর বাস করার জন্য একটি ঝুপড়ি বানিয়ে দিয়েছেন।
রোজ সকাল হলেই মা বেলী রানী বেড়িয়ে পড়েন ভিক্ষা করতে আর ঘরে বন্দি হয়ে বসে থাকেন দৃষ্টিহীন কৃষ্ণা। তার একমাত্র ছেলে ইশান মানুষ হচ্ছে খালা অঞ্জনা দাসের কাছে। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন চলে তাদের। চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ নেই তাদের।
মেয়ে কৃষ্ণার চোখের দৃষ্টি ফেরাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বেলী রানী দাস। কোথাও মিলছে না সহযোগিতা। চিকিৎসা করালে কৃষ্ণার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আশায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করে বেলী রানী বলেন, ‘অর্থের অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছি না। যে একসময় রোজগার করে আমাদের সবার মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে; সেই এখন ঘরে বসে শুধু কাঁদে! মেয়ের এমন কষ্ট আর সহ্য হয় না।’
কৃষ্ণা দাস বলেন, ‘মেশিনের শব্দ এখনও আমার কানে বাজে। কিন্তু চোখে না দেখায় হারালাম চাকরি, স্বামী-সন্তান ও সংসার! এখন আমি সবার বোঝা! আমি আমার দৃষ্টি ফিরে পেতে চাই।’
প্রতিবেশী লতিফ রঞ্জু বলেন, ‘ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এক সময়ের পোশাক কর্মী দৃষ্টি হারিয়ে এখন ঘরে বন্দি। মানবেতর জীবন-যাপন করছে পরিবারটি। সত্যিই তাদের দেখে কষ্ট হয়।’