১৪ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ৩০শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • শিক্ষা
  • পাহাড়ে দূর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে প্লাকশ্যের যাত্রা শুরু




পাহাড়ে দূর্গম এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে প্লাকশ্যের যাত্রা শুরু

প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

আপডেট টাইম : ফেব্রুয়ারি ০৩ ২০১৮, ১৬:৫৩ | 1226 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

এম দুলাল আহাম্মেদ,গুইমারা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধিঃ- দেশের মুল ভূখন্ডের সাথে অবিচ্ছেদ্য ৫,০৯৮ বর্গমাইল আয়তনের ৩ পার্বত্য জেলার ২৫টি উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাসহ ১১টি ভাষাভাষির ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীসহ ১২টি সম্প্রদায়ের বসবাস। পার্বত্য চট্রগ্রামের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান জেলায় বসবাসরত নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।তম্মধ্যে খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাসই সর্বাধিক। মারমা জেলার দ্বিতীয় সংখ্যাঘরিষ্ট অধিবাসী। খাগড়াছড়ি’র জেলা সদর ছাড়াও মহালছড়ি, গুইমারা, মানিকছড়ি, রামগড়ে তুলনামূলক মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস বেশী। মারমাদের রয়েছে নিজস্ব ভাষারীতি ও সংস্কৃতি। “প্লাকশ্যে” একটি মারমা শব্দ। মারমা ভাষার এই শব্দের বাংলা অর্থ ছোট পিলাক।
জেলার নবসৃষ্ট গুইমারা উপজেলার ২নং হাফছড়ি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দূর্গম পাহাড়ী জনপথ ছোট পিলাক ও তার আশপাশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় ১৫শ পরিবারের ১০সহ¯্রাধিক মানুষের বসবাস। গুইমারা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত এইসব গ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দুইটি ছোট খাল পেরিয়ে যেতে হয় ঐসব গ্রামে। গুইমারা, রামগড় ও মানিকছড়ি উপজেলা সীমান্তে অবস্থিত অবহেলিত এই গ্রামগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেশের যে কোন এলাকা থেকে কম। ছোট পিলাক ও তার আশপাশে গ্রাম গুলোতে রিয়ংমরমপাড়া, ছোট পিলাক ও ফটিকনালা সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয় নামে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই বলে এসব গ্রামে এখনও উচ্চ শিক্ষিত মানুষ পাওয়া দুষ্কর। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্তই যেন এসব গ্রামের ছেলেমেয়েদের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠি। ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে পড়তে হলেই যেতে হয়, গুইমারা, মানিকছড়ি বা রামগড়ের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু উপজেলায় অবস্থান করে লেখাপড়া করার মত আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় শিক্ষা জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হয় এসব গ্রামের ছেলেমেয়েদের।
এ অনগ্রসর গ্রামের সন্তানদের লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে “শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়–ক, সুষ্ঠ সমাজ গড়ে উঠুক” এ স্লোগানকে সামনে রেখে ছোট পিলাক রে¤্রাপাড়া গ্রামে স্থাপিত হয়েছে প্ল্যাকশ্যে নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে চাইরীপ্রু মারমা’র দান করা ১একর জমি জমিতে নির্মিত হয়েছে প্লাকশ্যে। কথা হয় ভুমি দাতা ষাটোর্ধ্ব চাইরীপ্রু মারমার সাথে। তিনি জানান, ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে সবাই ৫ম শ্রেণীতে পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়া শেষ করতে হয়েছে। কিন্তু নতুন বিদ্যালয়ে স্থাপিত হওয়ায় নাতী রিপ্রুসাই মারমা’র ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়নি তাকে। বাড়ীর পাশেই বিদ্যালয় প্লাকশ্যেতেই ভর্তি করেছেন তিনি। মোটকথা ঘরে বসে লেখাপড়ার সুযোগ পাওয়ায় আনন্দিত শিক্ষার্থীরা। ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী সানুবাই মারমা ও রিপ্রুসাই মারমা জানান, প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে তারা আনন্দিত। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় অজপাড়াগাঁয়ের অন্ধকারের মধ্যে যেন আলোর দেখা মিলল। এবছর ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ১১৭জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপ্রুমং মারমা। গত ৯জানুয়ারী আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে উদ্ধোধন করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাধন কুমার চাকমা। উদ্বোধন শেষে বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমতি সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, এলাকারবাসীর উদ্যোগে সরকারী কোন প্রকার অনুদান ছাড়াই সুন্দর মনোরম পরিবেশে স্থাপিত প্লাকশ্যে নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হাজারো সমস্যা কথা শুনে কিছুটা সংকিত হলেও হাল ছাড়তে নারাজ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও পাড়া কারবারী মংপ্রু মারমা। জীবন সায়াহ্নে এসে পাড়ায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করতে পেরে সফলতার হাসি তার চোখে মুখে। পঞ্চম শ্রেণী পাশ করলে অভিভাবকদের দুঃচিন্তা বদলে হাসি এনে দিতে পেরে উচ্ছাসিত মংপ্রু মারমা দ্রুত বিদ্যালয়টি পাঠদানের অনুমোদন ও সুপেয় পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।
শিক্ষানুরাগী ও ইউপিডিএফ এর সমন্বয় চিনু মারমা’র বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে অন্যন্য ভূমিকা। বাঁশ-কাঠ, টিন দিয়ে গড়া বিদ্যালয়টির প্রতিটি স্তরে স্তরে যেন তার ছোয়া। এই বিদ্যালয়ের সুপেয় পানির সমস্যা প্রকট বিধায় দ্রুত এখানে টিউবওয়েল দেওয়ার দাবী বার বার উঠে আসে তার মুখ থেকে।
২ নং হাফছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী জানান, গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বেশকটি ওয়ার্ড দূর্গম ও অনুন্নত। প্লাকশ্যে স্থাপিত হওয়ায় এলাকার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়বে এবং মারমার সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে।
গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়–য়া জানান, বর্তমান সরকার শতভাগ শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করতে ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। প্লাকশ্যে নি¤œ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের যাবতীয় সমস্যা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
গুইমারা’র দূর্গম পাহাড়ী জনপথ ছোট পিলাক ও আশপাশের অন্ধকারাছন্ন কয়েকটি গ্রামের মানুষদের জন্য প্ল্যাকশ্যে যেন অন্ধকারে আলোকদ্যুতি নিয়ে এলো, এ আলোয় আলোকিত হবে দূর্গমপাহাড়ী গ্রামবাসীরা।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET