
নয়া আলো ডেস্ক- বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা শেষ হয়েছে। ‘বাবার বাড়ি বেড়ানো’ শেষে ‘আনন্দময়ী’ দেবী ফিরে গেলেন ‘কৈলাসের দেবালয়ে। মণ্ডপে মণ্ডপে এ উৎসবের সূচনা হয়েছিল দশ দিন আগে, মহালয়ার মধ্য দিয়ে। গতকাল সকালে বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনে’ দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি হয়। বিকালে হয় প্রতিমা বিসর্জন।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এ ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্তী জানান, বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতায় মঙ্গলবার সকাল ৭টা ৩১ মিনিটে হয় দশমী বিহিত পূজা। ষোড়শপ্রচার পূজার পাশাপাশি দেবী প্রতিমার হাতে জরা, পান, শাপলা ডালা দিয়ে আরাধনা করা হয়।
সবশেষে দর্পণ বিসর্জনের সময় প্রতিমার সামনে একটি আয়না রেখে তাতে দেবীকে দেখে তার কাছ থেকে সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেন ভক্তরা। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রতিমা থেকে ঘটে এবং ঘট থেকে আবার ভক্তের হৃদয়ে ‘মাকে’ নিয়ে আসাকে বিসর্জন বলে।
বিসর্জনের আগে সকাল থেকে ঢাকার মন্দিরে মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। দুপুরে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা এনে জড়ো করা হয় পলাশীর মোড় ও ঢাকেশ্বরী পূজা মণ্ডপ এলাকায়।
এরপর সেখান থেকে ক্রমিক নম্বর নিয়ে শঙ্খ আর উলুধ্বনি, খোল-করতাল-ঢাক-ঢোলের সনাতনি বাদ্যের সঙ্গে আধুনিক উচ্চস্বরের সাউন্ড সিস্টেমে দেবী বন্দনার গানে গানে শোভাযাত্রা করেন ভক্তরা।
স্বল্পগতিতে চলা ট্রাক ও পিকআপ ভ্যানে চড়া পূজারিদের পাশাপাশি অনেকে পায়ে হেঁটে শোভাযাত্রায় অংশ নেন। প্রতিমা ঘাটে নেয়ার পর ভক্তকূল শেষবারের মতো ধূপধুনো নিয়ে আরতিতে মেতে ওঠেন। শেষে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে নৌকায় তুলে বিসর্জন দেয়া হয়।
ঢাকার ওয়াইজঘাটে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে টিকাটুলীর ভোলানাথ গিরি আশ্রম পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনে শুরু হয় রাজধানীতে দেবীকে বিদায় জানানোর আনুষ্ঠানিকতা। বিভিন্ন ঘাটে রাত ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর ২২৯টি মণ্ডপের প্রতিমা একে একে বিসর্জন দেয়া হয়। আশুয়িলায় তুরাগ নদীতে ঢাকার উত্তর সিটি এলাকার বিভিন্ন পূজা মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয় সাগর সৈকতে। একইভাবে সারা দেশে বিভিন্ন নদী ও জলাশয়ে দেয়া হয় বিসর্জন।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ বলেন, বিসর্জন শেষে মন্দিরে শান্তির জল নিয়ে আসা হয়; সন্ধ্যায় মণ্ডপে করা হয় আশীর্বাদ। এ বিসর্জন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে পূজা মন্ডপ ও ঘাট এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।