প্রিয় সাংবাদিক এএফএম শোয়ায়েব
আজিম উল্যাহ হানিফ:
একজন সমাজসচেতন, প্রিয় লেখক-সাংবাদিক ও সম্পাদক এএফএম শোয়ায়েব (১৯৭২-২০২৪) ১৯৭২ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার নাঙ্গলকোট উপজেলাধীন আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়নের চাটিতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম আবু ফারাহ মোহাম্মদ শোয়ায়েব। পিতা-বজলুর রহমান ছিলেন মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানাধীন সাতগাও দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা। বজলুর রহমান ১৯৯৮ সালে বন্যার বছর মৃত্যু বরণ করেন। মাতা শামসুন নাহার বেগম এখনো আছেন। এক ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। দাখিলও আলিম পাশ করেছেন নাথেরপেটুয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে। ফাজিল ও কামিল পাশ করেছেন গাজীমুড়া কামিল মাদ্রাসা থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে (জেনারেল লাইনে) ডিগ্রি পাশ করেছেন নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ থেকে। মাস্টার্স করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে। বিপিএড করেছেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অধীনে উত্তরা ফ্রিজিক্যাল এডুকেশন কলেজ থেকে। ছাত্ররাজনীতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। নিজ এলাকা বৃহত্তর আদ্রা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। নাঙ্গলকোট উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সভাপতি ক্যান্ডিটেট ছিলেন,কিন্তু নানান কারণে তাকে দেওয়া হয়নি। ক্যান্ডিটেট ছিলেন নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের একটি গুরুত্ব পদে নিবার্চন করার। কিন্তু নিবার্চনের আগের দিন স্থগিত হওয়ায় আর নির্বাচন করা হয়নি। ১৯৯৪ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই সময়ে এলাকার এমপি হিসেবে একেএম কামরুজ্জামান খান দলের কর্মী হিসেবে এএফএম শোয়ায়েবের চাটিতলার বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া ও বেড়িয়ে আসেন। ১৯৯৮ সালে জয়নাল আবেদীন ভূইয়ার হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন দক্ষিণ শাকতলী হাইস্কুল মাঠে দলের এক জনসভায়। ১৯৮৯ সালে ফাজিলে পড়াকালীন সময়েই আরো ৫জনসহ চাটিতলা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ভোলাইন বাজার স্কুল এন্ড কলেজের কলেজ শাখা প্রতিষ্ঠা করতেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি চাটিতলা আদর্শ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা হিসেবে কাজ করছেন ও আদ্রা দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। ২০০০ সালের পর থেকেই পত্রিকার সাথে সম্পৃক্ত হন। এক ধরণের নেশা হিসেবে বেচে নেন সংবাদপত্রে কাজ করার। দেশের জাতীয় পত্রিকা জাতীয় বানীতে কাজ করতেন। লিখতেন ইনকিলাব, ইত্তেফাকে। ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ সাপ্তাহিক সময়ের দর্পণ পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। নিবার্হী সম্পাদক হিসেবে পত্রিকাটিতে রয়েছেন কলামিষ্ট ও লেখক ফারুক আল শারাহ। ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে এএফএম শোয়ায়েবের বাড়িতে নাঙ্গলকোটের তৎকালীন এমপি হিসেবে জয়নাল আবেদীন ভূইয়া (১৯৩৯-২০০৫) গিয়েছিলেন। ছিলেন ২দিন ১ রাত। এএফএম শোয়ায়েব দায়িত্ব পালন করছেন নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের টানা ২ সেশন ধরে সভাপতি হিসেবে। সাবেক সভাপতি ছিলেন শতদল সংঘের। সভাপতি ছিলেন টানা তিনবার বৃহত্তর লাকসাম কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের। উপদেষ্টা ছিলেন সময়ের দর্পণ পাঠকমেলার। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা নাঙ্গলকোট উপজেলা শাখার সভাপতি ছিলেন, এছাড়াও তিনি লাকসাম লেখক সংঘের সদস্য, নাঙ্গলকোট রাইটার্স এসোসিয়েশনের সদস্য, জাতীয় কবিতা মঞ্চ কুমিল্লা জেলা শাখার সদস্য, নাঙ্গলকোট সাংবাদিক সমিতির উপদেষ্টা, একটু হাসি স্কুলের সহকারী পরিচালক, নাথেরপেটুয়া থানা বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক, লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম সদস্য, সায়েম মাহবুব স্মৃতি সংসদের আহবায়ক, ভাষাসৈনিক আবদুল জলিল পরিষদের সদস্য, শামছুল করিম দুলাল স্মৃতি সংসদের সদস্য, লাকসাম লেখক সংঘের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বপরিবারে হজ¦ পালন করার নিয়ত করেছেন,কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠেনি,তার আগেই চলে গেলেন প্রভুর সানিধ্যে। তিনি ভারত, চীন, হংকং, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ভ্রমণ করে ছিলেন। অনবরত লিখে চলেছেন পত্রপত্রিকাও অনলাইনে। এএফএম শোয়ায়েব ছিলেন নানান গুনে গুনান্বিত একজন মানুষ। এই মানুষটি মাত্র ৫২ বছর বয়সে ৬ জুন বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ^াস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজেউন।