সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি:
জহিরুল হক খাঁন (সজীব)-
ফেনীতে চাঁদা না দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার উন্নয়ন কাজে বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ জেলার সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যম পালগিরী গ্রামের চাঁদার দাবিতে সড়ক উন্নয়ন কাজ বন্ধ করে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ডিপুটি কমান্ডার ইসমাইল হোসেন। এসময় মহিলা মেম্বারকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল মাসে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যে পালগিরী গ্রামের সড়ক উন্নয়নের জন্য হতদরিদ্র তহবিল থেকে সংরক্ষিত ১নং
ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার সেলিনা আক্তার শিরিকে ২ লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। প্রকল্পের কাজ করার জন্য৷ শ্রমিকদের নিয়ে মহিলা মেম্বার পালগিরী
গ্রামে কাজ শুরু করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডিপুটি কমান্ডার ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসী , নুর নবী
নুর আলম, কামাল ও মো. আলমসহ বেশ
কয়েকজন লোক ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি
করে ৷ এবং বলেন ইসমাইল ভাইয়ের সাথে দেখা করার পরে কাজ শুরু কর৷ এবং শ্রমিকদের তাড়িয়ে দিলো।
এসময় ইউপি সদস্য সেলিনা আক্তার তাদেরকে বাধা দিতে চাইলে ডিপুটি কমান্ডার ইসমাইল হোসেন তাকে অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে ও
শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করে চাঁদা না দেওয়া পর্যন্ত কাজ না
করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। বিষয়টি ইউপি সদস্যের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা করেও
কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে একাধিকবার শ্রমিকদেরকে নিয়ে কাজ করতে চাইলে চাঁদা না দেওয়া
পর্যন্ত কাজ করতে দেয়নি ইসমাইলের সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা।
মঙ্গলবার মহিলা মেম্বার পুনরায় প্রশাসনকে জানিয়ে কাজ
করতে গেলে আবারও শ্রমিকদেরকে পিটিয়ে মহিলা মেম্বারকে লাঞ্ছিত করে টাকার জন্য কাজ বন্ধ করে
দেয়। পরবর্তীতে মহিলা মেম্বার সেলিনা আক্তার প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় গত বৃস্পতিবার বিকেলে প্রতিকার চেয়ে সুষ্ঠুভাবে উন্নয়ন কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফা
হকের নিকট ইসমাইলসহ তার বাহিনীর চাঁদা দাবি ও অত্যাচার
নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরে লিখিত আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার উপজেলা
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে একজন
ইঞ্জিনিয়ার গিয়ে কাজ শুরু করে দিয়ে আসেন। ইঞ্জিনিয়ার
চলে আসার পর ইসমাইলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা এসে
আবারও দাবিকৃত ৫০ হাজার টাকা না দেওয়ায় মহিলা মেম্বারকে
জুতা পেটা করে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করে কাজ বন্ধ করে দেয়। তাৎক্ষণিক বিষয়টি উপজেলা
নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি মহিলা মেম্বারের আবেদনকৃত দরখাস্তটি সোনাগাজী মডেল থানার
পুলিশকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়। সোনাগাজী মডেল থানার এসআই
সোহেল মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়ে রাতেই
উভয়পক্ষকে নিয়ে থানায় অফিসার ইনচার্জের কক্ষে
বৈঠকে বসেন। অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন কবির
উভয়পক্ষের কথা শুনেন। উন্নয়ন কাজে বাধা ও চাঁদা দাবি
করায় ডিপুটি কমান্ডার ইসমাইল দোষি-সাব্যস্ত হলে
তাৎক্ষণিক ইসমাইল নিজের ভুল স্বীকার করে ভবিষ্যতে
এ ধরনের কাজে কোনো প্রকার বাধা না দেয়ার
প্রতিশ্রুতি দিয়ে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে দেয়ার জন্য মহিলা
মেম্বারকে অনুরোধ করেন।
মহিলা মেম্বার সেলিনা আক্তার ইসমাইল মিয়ার অত্যাচার
নির্যাতনে তিনিসহ এলাকার অনেক লোক অতিষ্ঠ হয়ে
পড়েছেন। তাকে চাঁদা না দিলে এলাকায় কোনো
ধরনের উন্নয়ন কাজ করা যায় না। তার ভয়ে এলাকার মানুষ ও
মুখ খুলতে চায়না। আমাকেও একাধিকবার চাঁদার জন্য সেই
নিজ হাতে লাঞ্ছিত করেছেন। আমি এর সুষ্ঠু বিচার দাবি
করছি। এলাকাবাসী আরও জানায় ইসমাইল মিয়া এলাকার
উন্নয়নমূলক কাজকর্মে বাধা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম বিক্রি করে চাঁদা দাবি করে থাকেন। অন্যথায় তিনি সরকার দলের লোক বলে কাজ বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেন। থানায়
বৈঠকের পর শুক্রবার সকাল থেকে উক্ত উন্নয়ন
প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন মহিলা মেম্বার সেলিনা আক্তার জানান।
সোনাগাজী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হুমায়ুন
কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।