বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ
প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রীদের আনাগোনা কোলাহলে মূখরিত হয়ে উঠত নওগাঁর বদলগাছী মিঠাপুর আদর্শ কলেজ প্রাঙ্গন। উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন পুরুনে হাতে হাতে বই খাতা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের চলাচল যেন নিভৃত পল্লীগ্রামের শোভা মান বর্ধিত করত। এলাকাবাসীর স্বপ্ন প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে চলতে থাকে কলেজটি। এ কলেজ থেকে ছড়িয়ে পড়ে শিক্ষার আলো এলাকায় কিন্তু দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মুখ থুবরে পড়ে এগিয়ে চলার গতি। অবশেষে ছাত্র-ছাত্রীদের কোলাহলে মূখরিত কলেজটি এখন বেহালদশা। তথ্য সংগ্রহ কালে দেখা যায়, টিনের চাল উড়ে গেছে। দরজা জানালা ভাঙ্গাচোড়া। আর শ্রেণী কক্ষের ভেতর ময়লা-আবর্জনা ও মলমূত্র। ২০০৮ সালের ফলাফলের দিক থেকে উপজেলার সেরা ছিল কলেজটি। অথচ ৮ বছর পর ২০১৬ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এই কলেজের একজন শিক্ষার্থীও পাস করতে পারে নি।
নানা প্রতিকুলতার মধ্যে দিয়ে এ কলেজের পাঠদান বন্ধ হলেও কলেজটিতে আবারও শিক্ষার পরিবেশ ফিরাতে অধ্যক্ষসহ কয়েক জন শিক্ষক কলেজে আসা যাওয়া করেন। আড়াই বিঘা জমিতে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজে রয়েছে একতলা দুটি ভবন। একটি সেমি পাকা (টিনের চাল), অন্যটি পাকা। কলেজের মুল ভবনে একটি কক্ষে ভাঙ্গাচোড়া বেঞ্চ-চেয়ার জরো করে রাখা হয়েছে। কলেজেরে দক্ষিন দিকের ভবনটির কয়েকটি টিনের চালা উড়ে গেছে। মড়িচা ধরে ঝড় বৃষ্টিতে খুলে খুলে পড়ছে । দরজা জানালা বা ছাদ না থাকায় শ্রেণিকক্ষগুলো মল-মুত্র আর ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। কলেজে লেখাপড়া করার মত কোনো পরিবেশ নেই। দুপুর সাড়ে ১২টার পর অধ্যক্ষসহ সবাই কলেজ থেকে চলে যান। কলেজ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে মিঠাপুর আখতার হামিদ সিদ্দিকী নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০০ সালে কলেজটি পড়ানোর অনুমতি পায়। ২০০৩ সালে কলেজটি স্বীকৃতি লাভ করে। আখতার হামিদ সিদ্দিকী ওরফে নান্নু সে সময় নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের বিএনপি’র দলীয় সংসদ ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। আখতার হামিদ সিদ্দিকী জোট সরকারের আমলে তার নামে হওয়া কলেজটি এমপিভুক্ত করতে পারেন নি। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নামকরনের কারনে কলেজটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষার প্রদীপ নিভে যায়। অবকাঠামোগত সকল উন্নয়ন থেকেও বঞ্চিত হয়। পরে আখতার হামিদ সিদ্দিকী কলেজের নাম পরিবর্তন করে মিঠাপুর আদর্শ কলেজ নামকরন করা হয়। এর পরেও এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় স্বেচ্ছাশ্রমে র্দীঘদিন কলেজটি পরিচালনার পর অভাব অনটনে শিক্ষক কর্মচারীরা মনোবল হারিয়ে ফেলে। কলেজের শিক্ষক কর্মচারীরা বলেন, শুরুর দিকে কলেজটিতে প্রচুর শিক্ষার্থী ছিল। কলেজের অবকাঠামো নষ্ট ও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে। এখন আর এ কলেজে পড়াশুনা হয়না। অধ্যক্ষ শামছুর রহমান বলেন, কলেজটিতে শিক্ষক-কর্মচারীসহ ২৮ জন কর্মরত রয়েছেন। কলেজটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ার কারনে তারা মানবেতর জীবর যাপন করছেন। বাধ্য হয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনেকে বিকল্প কর্মসংস্থানের পথ বেছে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। তিনি ও কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত কলেজে আসা যাওয়া করছেন। অধ্যক্ষ আরও বলেন, কলেজটি ২০০৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের দিক থেকে বদলগাছী উপজেলার সেরা হয়েছিল। এর পর ধীরে ধীরে সমস্যা বাড়তে থাকে। ২০১৬ সালে পাঁচজন শিক্ষার্থী এ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় কিন্তু কেউ পাস করেনি। ২০১৭ সালে দুজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। তারা পাস করেছেন। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে মানবিক বিভাগে ১৪ জন, বিজ্ঞান বিভাগে ১০ জন ও বানিজ্য বিভাগে ৬ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। এসব শিক্ষার্থী তাদের সুবিধামত অন্য কলেজে পড়াশুনা করছে। শিক্ষক সেলিম হোসেন বলেন, তারা কলেজ থেকে কোনো টাকা পয়সা পান না। কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে বেতন-ভাতা পাবেন, এই আশায় এখানে পড়ে আছি। প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসা করতে প্রায় ১০০ টাকা খরচ হয়। এভাবে কতদিন নিজের পকেটের টাকা খরচ করব। মিঠাপুর আদর্শ কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও মিঠাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন বলেন, কলেজের অনেক কর্মচারী এখন অনাহারে থাকেন। এই কলেজের কিছু শিক্ষার্থী আছে তারা অন্য কলেজে পড়ছে। কলেজটি এমপিভুক্ত করার জন্য এলাকার সাংসদকে তিনি অনুরোধ করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, মিঠাপুর আদর্শ কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। একারনে উপবৃত্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কলেজটি শতভাগ ফেলের তালিকায় ছিল। বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন, মিঠাপুর আদর্শ কলেজ সম্পর্কে তার তেমন কিছু জানা নেই। তিনি এবিষয়ে খোঁজ-খবর নিবেন। এলাকাবাসী বলেন মিঠাপুর কলেজের সম সাময়িক সময়ে উপজেলার কোলা আদর্শ কলেজ, বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজ, গোবরচাঁপা হাট কলেজ, বদলগাছী কারিগরি কলেজ এমপিওভুক্ত হয়েছে এবং কলেজগুলো সফল ভাবে চলছে। গ্রামের অসহায় হত দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েরা এসব কলেজে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। এ এলাকার শিক্ষার্থীরা এসএসসির পর অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। জন্যই এলাকাবাসী মিঠাপুর আদর্শ কলেজটি এমপিওভুক্ত করার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।