খোকন হাওলাদার, গৌরনদী(বরিশাল)প্রতিনিধি ॥
বরিশালে তীব্র শীতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিউলাইটিস, শ্বাসকষ্ট, ফুঁসফুসে ও ঠান্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত অনেক শিশুকে ভর্তি করা হচ্ছে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ও জেনারেল হাসপাতালসহ নগরের বিভিন্ন হাসপাতালে।
এছাড়াও হাসপাতালগুলোর বহিঃ র্বিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে গত এক মাস ধরে শেবাচিমে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন শিশু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।
শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,শিশু ওয়ার্ডে প্রায় দেড় শতাধিকের বেশী শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। এরমধ্যে প্রায় ২০ শিশুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তবরত চিকিৎসকরা। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ব্যাপারে চিকিৎসকরা বেশী সর্তকতা অবলম্বন করছেন। আক্রান্ত শিশুদের বয়স ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে। শেবাচিম হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.অষিম কুমার সাহা জানান, শীত একটু বেশি পড়ায় শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা ঘণ ঘণ শ্বাস নেয়। জ্বরের সঙ্গে খাবারে অরুচি এবং পালস্ বেড়ে যায়। এ সব শিশুদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোন সমস্যা হয় না। চিকিৎসা নিয়ে বিলম্ব করলে বিপদের আশংকা থাকে।
শেবাচিমের বহিঃ বিভাগের আবাসিক (শিশু) চিকিৎসক ডাঃ ফায়জুল হক পনির জানান, শীতকালে শিশুরা বেশী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে আমার কাছে প্রতিদিন ব্রঙ্কিউলাইটিস, শ্বাসকষ্ট,ফুঁসফুসে,ভাইরাস,ডায়রিয়া ও ঠান্ডা জড়িতসহ বিভিন্ন রোগে প্রায় শতাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে,বহিঃবিভাগে ৪ জন চিকিৎসক প্রতিদিন ৩ শতাধিকের বেশি শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে থাকে।
ডাঃ ফায়জুল হক পনির আরো বলেন,গ্রাম আঞ্চলের মানুষ এখনও শিশুরা ঠান্ডাজনিত শ্বাসকষ্টে ভূগতে শুরু করলে অনেক অভিবাবক তাদের চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে বুকে গরম তেল মালিশ করা ও নানান গাছপালার পাতার রস দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। এতে শিশুরা আরো বেশী র্দূবল হয়ে পড়ে। রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। শিশু বিশেজ্ঞদের মতে ঠান্ডাজনিত যে কোন রোগে শিশু আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা প্রদান না করার পরামর্শ দেন তিনি। একই সাথে শীতকালে শিশুকে ঠান্ডা থেকে দূরে রেখে গরম কাপড়- চোপড় পরিয়ে রাখার পরামর্শ দেন। আবার গরম কাপড় অতিরিক্ত দিতে গিয়ে ঘামেও শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ হয়ে থাকে বলে জানান। তাই এক বছর বয়সের নীচের শিশুদের শীতকালে খুবই যতœ সহকারে তত্বাবধান করা উচিৎ বলে এখানকার চিকিৎসকরা জানান। শেবাচিম হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম আর তালুকদার মুজিব বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা-কাশি-জ্বর হতেই পারে। সামান্য সমস্যাতেই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হালকা জ্বর, কাশি বা নাক থেকে পানি ঝরা সমস্যায় মধু-পানি, লেবু-পানি, আদা বা তুলসী পাতার রস দেওয়া যেতে পারে। এর পাশাপাশি দুই বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের অবশ্যই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
তিনি বলেন, এ সময় ভাইরাসজনিত রোগ ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। কাশির জন্য বাড়িতে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া গেলেও শ্বাসকষ্ট উপশমে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। কখনো এ ধরনের সমস্যায় অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো ঠিক নয়। অন্য দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার তিনগুণেরও বেশি রোগী গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতালের বারতি রোগীদের জন্য নেই বেড, বালিশ, চাদর। এমনকি সরঞ্জামাদিরও অভাব রয়েছে। তার মধ্যে রোগীদের স্বজনদের সঙ্গে দুর্বব্যবহার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসকদের দাবী ধারন ক্ষমতার ৩/৪ গুন রোগী থাকায় ও তাদের স্বজনদের চাপে তারা রোগীদের কাছেই যেতে পারেনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হাসপাতালের নতুন ভবন হচ্ছে। শীঘ্রই সকল সমস্যা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।
দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলার শিশু রোগীরা বেশি ভাগই শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। ধারণক্ষমতার তিন গুণের বেশি রোগী প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। শয্যার অভাবে অনেকে মেঝেতে কাতরাতে হচ্ছে। রোগীরা ভর্তি হইে ওয়ার্ডে গেলেই দেখেন সেখানে তীল ধারনের জায়গা নেই। ফলের বাথরুমের সামেনও ফ্লোরিং করে রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। এমনই অবস্থা রয়েছে শিশু ওয়াডে। শেবাচিম হাসপাতালের অন্তঃবিভাগের শিশু ওয়ার্ডের সামনে একটি বোর্ডে ভর্তি রোগীর তথ্য দেওয়া রয়েছে, ওয়াডটিতে সরকার অনুমোদিত বেড রয়েছে ৩৬ টি। কিন্তু বর্তমানে ঐ ওয়াডে রোগীর সংখ্যা হলো ১০৫ জন।
বাউফল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাব্বিরের স্বজন হামিদ মোল্লা বলেন,হঠাৎ করে ছেলে অসুস্থ হয়ে পাড়ায় বাড়ি থেকে কিছু নিয়ে আসতে পারিনি। মনে করিছি সরকারী হাসপাতালে বেসকারী হাসপাতালের চেয়ে চিকিৎসা ও সুযোগ সুবিদা ভালো। কিন্তু এখানে এসে দেখি তা উল্টো। রোগীদের রাখার জন্য যে পরিমানের বেড থাকার কথা তা এখানে নেই। আমার ছেলে সহ অনেক অসুস্থ কোমলমতি শিশুরা ঠান্ডায় মধ্যে নিচে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
অপরদিকে ঝালকাঠি থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মামুনের মা বলেন,ছেলের ঠান্ডা লেগে অনেক ঝড় ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাই বরিশালে সরকারী বড় হাসপাতালে এনে ভর্তি করছি। কিন্তু ভর্তি হওয়ার দু’দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত একটি বেড পায়নি।
তিনি আরো বলেন,ঠান্ডা জন্য ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি করে কি লাভ। ছেলেকে তো নিচে ফ্লোরেই রাখা হয়েছে।
তার বাবা সুমন বলেন,এখানে রেখে ছেলেকে সুস্থ করা যাবে না। তাই বড় ডাক্তার আসলে নাম কেটে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাবো। এব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা:বাকিব হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমি সাংবাদিকদের কোন তথ্য দেই না।