খোকন হাওলাদার,বরিশাল থেকেঃ
হঠাৎ করেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বরিশাল নগরী। গতকাল একদিনে সরকারি বিএম কলেজ, সরকারি বরিশাল কলেজ ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালেও এ ঘটনার জের ধরে হামলা পাল্টা হামলার খবর পাওয়া গেছে। বিএম কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্র“পে সংঘর্ষ ॥ বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে রিফাত নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে গুরুত্বর আহত অবস্থায় বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রিফাত জানিয়েছে, সে কেন্দ্রীয় আ.লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক স ম রেজাউল করিম এর ভাইয়ের ছেলে। চাঁদার দাবীতে তাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে বলে দাবী করেছে রিফাত। সে জানায়, এক সময়ের কাউনিয়া এলাকার আলোচিত ক্যাডার নব্য আ.লীগ নেতা জিহাদ এর ভাইয়ের ছেলে সাউদ দীর্ঘদিন পর্যন্ত বিএম কলেজে এলাকায় সাধারণ ছাত্রদের উপর হামলা চালিয়ে মোবাইল ফোনসহ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিচ্ছে। গতকাল রোববার বিএম কলেজের জিরো পয়েন্টে এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের দুই গ্র“পের মধ্যে এক গ্র“প বহিরাগত। কলেজ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন যাবৎ সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব চলছিল কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী ও হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র রিফাত এবং বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতা সাউথের মধ্যে। এই নিয়ে রোববার সকালে বিএম কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী রিফাত তার প্রতিপক্ষ বহিরাগত সাউথের অনুসারী তাজিন ও সিহাবকে বেধড়ক মারধর করে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাউথ ধারালো অস্ত্র নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে শোডাউন দেয়। এতে মূহুর্তের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে ক্যাম্পাসে। একপর্যায়ে কলেজের মসজিদ গেটের সামনে বসে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে সাউথ ও তার অনুসারীরা। এই ঘটনার পরপরই রিফাতের ও সাউথের অনুসারীদের মধ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েক জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে রিফাতকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রিফাতের অনুসারীরা কলেজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে এবং কলেজের সামনের সড়কে অবরোধ ও টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে। এরপরে পুনরায় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সেকেন্ড অফিসার সত্যরঞ্জন খাসকেল জানান, থানায় কয়েকজনকে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে নিশ্চিত না হয়ে কাউকে আটক বলা যাচ্ছে না। এছাড়া ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং অতিরিক্ত পুলিশও মোতায়ন করা রয়েছে।
ববির ছাত্রদের সাথে আ.লীগ নেতার ভাইয়ের হামলা-পাল্টা হামলা ॥ বরিশাল নগরের রূপাতলী এলাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রদের সঙ্গে নগর আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির মোল¬ার ছোট ভাইয়ের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এসময় একটি খাবার হোটেলে ভাংচুর চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়াগেছ। গতকাল রোববার বিকেল ৩টার দিকে মোটরসাইকেল এ বসাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানাগেছে। এ ঘটনায় সীমান্ত মন্ডল রনি নামে এক ববি ছাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল মোটরসাইকেল এর উপর বসাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গে রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা মামুন মোল¬ার বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা জনান, তাদের এক ছাত্র মামুন মোল¬ার মটর সাইকেল উপর একটু বসছিল। এ ঘটনায় মামুন মোল¬া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে থাপ্পর মারে। এ ঘটনার জের ধরে কিছুক্ষণ পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১৫ জন যুবক মোটরসাইকেলের মালিক মামুন মোল¬াকে মারধর করে এবং ভোজনবিলাস নামের একটি খাবার হোটেলে ভাংচুর চালায় বলে অভিযোগ। পরে তারা সেখান থেকে সরে পরলে ববির ফিন্যান্স বিভাগের সীমান্ত মন্ডল রনি নামে এক ছাত্রকে ধরে মারধর করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং রনিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। আহত রনির সহপাঠীরা জানান, মোটরসাইকেলে হেলান দেওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারেক ও সীমান্ত মন্ডল রনির সঙ্গে রূপাতলী এলাকার স্থানীয় এক ব্যক্তির বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ওই ব্যক্তি রনিকে আটকে মারধর করে। এদিকে মামুন মোল¬ার ভাই বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির মোল¬া জানান, কথা কাটাকাটি শেষে তার ভাই মামুন বিষয়টি সেখানেই সীমাবদ্ধ রেখে হোটেল ভোজনবিলাসের ঢুকে অতিথিদের নিয়ে খেতে বসেন। এর কিছু পরেই ২০-২৫ জন যুবক হোটেলের ভেতরে গিয়ে মামুনকে মারধর করে এবং হোটেলে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন বলে জানান।
বরিশাল কলেজে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ॥ সরকারি বরিশাল কলেজে দুই গ্র“পের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রোববার (১১ ফেব্র“য়ারি) দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ছাত্রদল ক্যাডার রফিকুল ইসলাম টিপু ও তার সমর্থকদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রদলের কর্মীরা হৃদয় নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধর করেন। এরপরপরই দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। কিছু সময় বাদে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে সটকে পড়লে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজে থাকা ছাত্রদলের সব ব্যানার-পোস্টার খুলে ও ছিঁড়ে ফেলেন। এদিকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পাশাপাশি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম টিপুর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি আটক করে। বরিশাল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুর রহমান মাসুম বাংলানিউজকে জানান, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আমরা সকাল থেকে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক দাবিদার রফিকুল ইসলাম টিপু তার সহযোগীদের নিয়ে আমাদের একটি ছেলেকে মারধর করেন। এনিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছে। এ বিষয়ে ছাত্রদল কর্মী শাহাদাৎ জানান, আগে থেকেই হামলার প্রস্তুতি নিয়ে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের লোকজনকে মারধর করেছেন। কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মামুন হাওলাদার জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি একটি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে।
ববিতে ছাত্র শিবির সন্দেহে দুই ছাত্রকে মারধর ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যাওয়া ছাত্রলীগ কর্মীদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে দুই শিবির কর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল রোববার বেলা দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহত দুই ছাত্র হচ্ছেন মো. রিপন ও মো. শিহাব। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র। তারা ছাত্র শিবিরের কর্মী বলে ছাত্রলীগ দাবী করলেও তারা দাবী করেছেন সাধারণ ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন আহম্মেদ শিফাত বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রূপাতলি কাঠালতলা এলাকায় একটি ভবনে মেস করে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির কর্মীরা থাকে। শিবির কর্মী রিপন ও শিহাব থাকে ওই মেসে। সেখানকার কিছু ছাত্র রয়েছে ছাত্রলীগের সমর্থক। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যেতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মিছিলে যোগ দেয়। এ কারনে শিবির কর্মী রিপন ও শিহাব মেসে থাকা ছাত্রলীগ সমর্থকদের লাঞ্ছিত করেছে। এতে ক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা গতকাল বেলা দেড়টার দিকে রিপন ও শিহাবকে ক্যাম্পাসে পেয়ে বেদম মারধর করেছে। এব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ রুমী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।