তথ্য গোপন করে দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানির টাকা তুলছেন এক শ্রমিকলীগ নেতা। গত দেড় বছর ধরে তিনি এই টাকা তুলছেন বলে স্বীকার করেছেন। অপরদিকে তার একই নামে রয়েছে দুইটি ভোটার আইডি কার্ড। তবে জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি মোঃ কামাল হোসেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য এবং একই ইউনিয়নের মধ্য বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী। ইউপি সদস্য হিসেবে প্রতি মাসে সরকারি কোষাগার থেকে সম্মানী নিচ্ছেন ৩ হাজার ৬শ টাকা। অপরদিকে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরির বিপরীতে নিয়মিত হাজিরা দেখিয়ে প্রতি মাসে বেতন নিচ্ছেন ১৪ হাজার ৪শ ৫০ টাকা।
কামাল হোসেন ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগে ২০১৩ সালে ওই বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে নিয়োগ পান। তবে লাইলী বেগম নামে এক নারী তার হয়ে বিদ্যালয়ে প্রক্সি দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আকতার। তিনি বলেন, কামাল মাঝেমধ্যে থাকেন না। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক নারী দায়িত্ব পালন করেন। পরিষদের সকল কার্যক্রমে নিয়মিত অংশ নেন। অন্য কোথাও চাকরি করেন কি না তা জানেন না বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা ও ইউপি সচিব প্রভাংশু রায়।
কামাল হোসেন ২০০৮ সালে প্রথম ভোটার আইডি করেন। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মোঃ কামাল হোসেন, পিতা নূর মোহাম্মদ। জন্ম ১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি। এরপর বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরি নিতে প্রায় ১০ বছর বয়স কমিয়ে ২০১৩ সালে নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখিয়ে আরও একটি ভোটার আইডি করেন। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৯৯৪ সালের ১৫ জুলাই। নাম লেখা হয়েছে মোঃ কামাল হোসেন খান।
দুইটি ভোটার আইডি কার্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সার্ভার দেখে বলেন, ’কামালের দুটি ভোটার আইডি সচল রয়েছে। যার প্রথমটির নম্বর ০১১০৫২৮৩৮১০৫ (২০০৮) এবং দ্বিতীয়টির নম্বর ০১১০৫২০০০১৭৪ (২০১৩)। তবে জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।
দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় সব তথ্য দিয়েছি। তখন তো আমার নমিনেশন ফর্ম বাতিল করা হয়নি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি কেউ আগে জানায়নি। শোনার পরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ইউপি সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানীর টাকা তুলেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের করনিক দিপক কুমার দেবনাথ।
জানতে চাইলে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম তারেক সুলতান বলেন, বিদ্যালয়ের দপ্তরী ও ইউপি সদস্য হিসেবে দুটি পদে একই ব্যক্তির একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Please follow and like us: