স্টাফ রিপোর্টার : বাগেরহাট জেলা বিএনপি দুটি গ্রুপে বিভক্ত। সাবেক এমপি এম এ এইচ সেলিমের দল থেকে সরে যাওয়ার পর ২০০৮ সাল থেকে মূলত দলের মধ্যে প্রকট আকারে দ্বিধাবিভক্তি দেখা যায়। সে কারণে বাগেরহাট জেলা বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা একেবারে নাজুক অবস্থায় পৌঁছে গেছে। একক সিদ্ধান্ত, নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন, এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহারের কারণেই বিগত কমিটির সভাপতি এম এ সালাম কে আহ্বায়ক না করে আকরাম হোসেন তালিম কে আহ্বায়ক করা হয়। কিন্তু বর্তমান আহ্বায়কও সাবেক সভাপতির পথ অনুসরণ করেছে। তিনিও দলে আধিপত্য বিস্তার এবং মাই ম্যান সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। এদের কারো হাতেই নিরাপদ নয় বাগেরহাট জেলা বিএনপি বলে মত প্রকাশ করছে অনেকে। অনেকে বলছে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে, খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে, কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন প্রোগ্রামে এদেরকে দেখা যায় না। ঘরের মধ্যে বসে নিজেরা নিজেরা হাতাহাতি-মারামারি করে দলের কর্মী-সমর্থকদের মনোবল নষ্ট করছে।
জানতে চাইলে বাগেরহাট জেলা বিএনপি নেতা মনজুর মোর্শেদ স্বপন বলেন বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র ৮০% ক্ষতি করেছে ১২ বছর ধরে জেলার সভাপতি পদে থাকা এমএ সালাম। বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। সে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি। সে নিজেই অফিসার নিজেই সিপাহী ছিলেন। সে বাগেরহাটে মাইনাসের রাজনীতি করতো। বিষয়টি বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক তালিম সাহেবকে আহ্বায়ক করে কমিটি ঘোষণা করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই আহবায়ক তালিম সাহেব এমএ সালামের দেখানো পথে হাটা শুরু করেন। মাইম্যান তৈরির চেষ্টা করেন। দুঃসময়ে তার পাশে থাকা নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অবমূল্যায়ন শুরু করেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও একটি টাকা দল কিংবা দলের নেতাকর্মীদের পিছনে খরচ করতে তিনি রাজি নন। গত ৭ই জুন কেন্দ্র থেকে দেওয়া নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ না করে আহবায়ক সাহেব তার খেয়াল খুশিমতো সদস্যদের নিয়ে প্রোগ্রাম সাজিয়েছেন। জেলা বিএনপি’র সকল সদস্যকে অন্তত তার অবহিত করা উচিত ছিল।
আন্দোলন সংগ্রামে আজ পর্যন্ত তারা দুজনের কেউই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন নাই এমনকি তাদের নামে কোন মামলা পর্যন্ত নাই। তারা দুজনেই দলকে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করেছে। তৃণমূলে ক্ষোভ ও হতাশা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গত ৭ই জুন এর প্রোগ্রামে যার প্রতিফলন ঘটেছে। বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র নেতৃত্বে অবশ্যই পরিবর্তন দরকার। তৃণমূল নেতাকর্মীরা এই দুই লিমিটেড কোম্পানির হাত থেকে মুক্তি চাই।
ছাত্রজীবন থেকে জাতীয়তাবাদী দলের সাথে আছি। শ্রম মেধা ও টাকা ব্যয় করে দলকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছি। অসুস্থ অবস্থায় কয়েকবার কারাবরণ করেছি। জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এর খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি। বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সদস্য মনোনীত হয়েছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাকে মনোনীত করেছেন তার সঙ্গেই কাজ করেছি। দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।
জেলা বিএনপি’র দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জনাব স্বপন বলেন: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানের প্রতি আমি আস্থাশীল। এই দল সালাম তলিমের ব্যক্তিগত দল নয়। এই দল শহীদ জিয়ার হাতে গড়া কালোত্তীর্ন দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী আঠারো কোটি জনগনের দল। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল-বিএনপি চোখের সামনে এভাবে দুর্বল হতে দিতে পারিনা। দলের অনেকেই আমাকে বাগেরহাট জেলা বিএনপির এই দুঃসময়ে হাল ধরার জন্য বলেছেন। দেশনায়ক তারেক রহমান এবং কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাগন যদি আমাকে উপযুক্ত মনে করেন তাহলে অবশ্যই আমি বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি।
জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এমএ সালাম বলেন, বর্তমান আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিমের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। তারা চাইনা সকল সদস্য মিলে জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম একসাথে পরিচালনা করি। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি এই দেড় বছরে একটিও কর্মীসভা করতে পারেনাই। সভায় তার অনুসারী ৫/৬ জন সদস্য ছাড়া বাকি সকল সদস্য অনুপস্থিত থাকে। জেলার সকল নেতা কর্মীর সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে হলে কেন্দ্র থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পুরনো লোকদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে ।সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি কোন গ্রুপ করি না। আমার কাছে যে আসে সেই আমার লোক। আমি মানুষের জন্য দল করি। আমি বিএনপি নেতাকর্মীর সাথে আছি।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার এটিএম আকরাম হোসেন তালিম বলেন, দেশনায়ক তারেক রহমান বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা মাত্রই জেলার সাবেক সভাপতি এমএ সালাম আহ্বায়ক কমিটিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেন। গত ২২ বছর ধরে তারা বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র দায়িত্বে থাকা কালিন মাই ম্যান তৈরি করে বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল করে দিয়েছে। এম এ সালাম এ পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটির কোন সভায় অংশগ্রহণ করে নাই। এমনকি তার যারা অনুসারী তারাও উপস্থিত হয় না। এখানে শেখ পরিবারের আধিপত্য রয়েছে। করোনার কারণেও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রয়েছে প্রশাসনিক ঝামেলা।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন মিডিয়া এবং কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে আমার বিরুদ্ধে বদনাম বলা ই তার প্রধান কাজ। শহীদ জিয়ার আদর্শে গড়া এই দল। দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে হলে সবার সহযোগিতা দরকার। বাগেরহাট জেলা বিএনপি এখনো খুব শক্তিশালী আছে। সবাইকে নিয়েই কাজ করে বিএনপিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।