সাইফুল আলম সুমন, শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:- একটা সময় ছিল যখন স্বল্প সংখ্যক বাড়ির মালিক ছাদে বাগান করতেন। সেই বিষয়টি সম্প্রতি বেশ বিস্তার লাভ করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ অন্য শহরের প্রায় বাড়িতেই এখন দেখা যায় ছোট বাগান কিংবা বৃক্ষবিলাস। বিষয়টিকে খুব ইতিবাচকভাবে দেখছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। তারা মনে করছে, বাড়ির ছাদের এ বাগান শুধু সখের বিষয় নয়-পরিবেশ রক্ষায়ও রয়েছে এর বড় ভূমিকা।
গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুষ্ঠিত উন্নয়ন মেলায় এমনই একটি ছাদ বাগানের প্রদর্শনী করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। পরিপাটিভাবে সাজানো ছাদ বাগানটির নমুনা দেখে আকৃষ্ট হয়েছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এস.এম মূয়ীদুল হাসানের সঙ্গে। তিনি জানান, ছাদ বাগানের মাধ্যমে গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে, বায়ো ডাইভারসিটি সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া তাজা শাকসবজি, ফলমূলের চাহিদাও মেটে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাড়ির ছাদে বাগান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। অবশ্য যেসব বাগান দেখা যায় তার অধিকাংশই অপরিকল্পিত। পরিকল্পিতভাবে বাগান করা হলে এটি প্রাত্যহিক শাকসবজির চাহিদা মিটিয়ে পরিবেশ রক্ষায়ও দারুণ ভূমিকা রাখবে। তিনি জানান একটি আদর্শ ছাদ বাগান তৈরির পদ্ধতি।
একটু পরিশ্রম আর পরিকল্পনা থাকলেই বাড়ির কংক্রিটের ছাদটিই পরিণত হবে সবুজ শ্যামল মাঠে। স্থায়ী বাগান করার জন্য ছাদে সিমেন্টের স্থায়ী টব তৈরি করে নেওয়া যায়। এছাড়া বাজারে কিনতে পাওয়া টবগুলোও ব্যবহার করা যায়।
লোহার হাফ ব্যারেলও ব্যবহার করা যায়। তবে ব্যারেলের দুই পাশে হাতল থাকলে ভালো। টবের নিচে ছিদ্র রাখতে হবে। এরপর তিন ভাগ মাটি, দুই ভাগ গোবর সার আর এক ভাগ পাতা পচা সার দিয়ে মিশ্রণ তেরি করে টব পূর্ণ করতে হবে। বর্ষার আগে টবে চারা বা কলম লাগাতে হবে।
গাছ নির্বাচন ছাদ বাগানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছের প্রজাতির ওপর নির্ভর করে ওই গাছটি ছাদ-বাগানের জন্য কোন কাঠামোতে লাগানো হবে এবং তার পরিচর্যার ধরন কী হবে।
এক্ষেত্রে ছোট আকারের গাছ লাগাতে হবে এবং ছোট আকারের গাছে যেন বেশি ফল ধরে সে জন্য হাইব্রিড জাতের ফলদ গাছ লাগানো যেতে পারে। বীজের চারা নয় কলমের চারা লাগালে অতি দ্রুত ফল পাওয়া যাবে। এছাড়া চৌবাচ্চা আর টবে সবজির বীজ বপন করেও চাষ করা যায়।
চারপাশে বৃক্ষশোভিত ছাদ বাগান সমৃদ্ধ একটি বাড়ির নমুনাপরিচর্যা । ছাদে বাগান করলে তার পরিচর্যা ভূমির বাগানের চাইতে একটু বেশি করতে হবে। সময়মতো পানি না দিলে গাছ মারা যেতে পারে। এছাড়া পরিমিত সার প্রয়োগেরও বিষয় রয়েছে। সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজন, এর কম-বেশি হলে গাছ টিকবে না।
বছরে অন্তত একবার পুরাতন মাটি বদলে নতুন মাটি জৈব সারসহ দিতে হবে। খুব সাবধানতার সঙ্গে চারা বা বীজ লাগাতে হবে। ঠিক মাঝখানে পরিমাণমতো মাটির নিচে রোপণ করতে হবে। চারা বা কলমের ক্ষেত্রে বীজতলা/নার্সারিতে যতটুকু নিচে বা মাটির সমানে ছিল ততটুকু সমানে ছাদে লাগাতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এস.এম মূয়ীদুল হাসান আরও জানান, কেউ যদি ছাদে বাগান করতে চান তাহলে তাকে সহায়তা করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুধু ছাদ নয়, বাড়ির বারান্দা, বেলকনিসহ যে অংশ খালি পড়ে আছে তাতেই লাগানো যাবে গাছ। তার জন্য দরকার সঠিক নিয়মের অনুসরণ।