দুপুর দেড়টা, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের সাজানো রয়েছে চেয়ার ও টেবিল। পাশেই প্লেটে প্লেটে সাজানো হচ্ছে সাদা ভাত ও মুরগির মাংস, সবজি ও ডাল।
এটা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান বা রেস্টুরেন্টের চিত্র নয়। এখানে যাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে তারা সবাই সমাজের অসহায়, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ভিক্ষুক। সপ্তাহে প্রতি বুধবার তাদের আমন্ত্রণ জানান তরী রেস্টুরেন্টের মালিক সাদ্দাম হোসেন অনন্ত। স্বল্প আয়ের এ মানুষগুলো অপেক্ষা করছেন সাদ্দাম ভাইয়ের রেঁস্তোরায় বিনা পয়সায়পপপভভভভপট ভরে একবেলা খাবারের জন্য।
বিনা পয়সায় খাবার পেয়ে খুশি গরিব অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষজন। হোটেল মালিকের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজারের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে অবস্থিত তরী চাইনিজ ও বাংলা রেস্টুরেন্ট। প্রতিদিনই গরিব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষরা হোটেলটিতে বসে বিনা পয়সায় খাবার খান। তবে বুধবার একটু ব্যতিক্রম। বাজারের দিন হওয়ায় এদিন অনেক ভিক্ষুক আসেন জৈনা বাজারে। তাই দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত হোটেল মালিক সাদ্দাম হোসেন অনন্ত কয়েকধাপে দুই শতাধিক মানুষের জন্য খাবারের আয়োজন করেন। খাবারের তালিকায় থাকে সাদা ভাত, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, বড়, ছোট মাছ, সবজি, ডাল এবং মাঝে মধ্যে খিচুড়িও থাকে। ব্যবসার পাশাপাশি অনাহারী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজের শান্তি খুঁজে পান। প্রায় ৩ বছর ধরে এই মানবিক কাজটি করছেন সাদ্দাম হোসেন।
প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সাদ্দামের দাওয়াতে এসেছেন আসমা বেগম। তিনি বলেন, ‘গরীব মানুষ, ভাল খাওয়ার অবস্থা নেই। দুপুর বেলা খিদে লাগলে সাদ্দাম বাবার কাছে চলে আসি। হোটেলে খেতে অনেক টাকা লাগে তাছাড়া হোটেলে গিয়ে বড় মাছ আর মাংস খাওয়ার সাধ্য আমাদের নাই। এখানে আসলে বিনা পয়সায় পেট ভরে খেতে পারি।
বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বলেন, ‘সারাদিন ভিক্ষা করার পর দুপুরে খাবার খেতে আসলে আমাদের পেট ভরে খাবার খেতে দেয়। তাও আবার গরু ও মুরগির মাংস দিয়ে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই হোটেল মালিকের জন্য।
ভিক্ষুক সুফিয়া বানু দুপুরে খেতে এসে বলেন, ‘পেট ভরে খাইছি, এইনের খাওন খুব স্বাদ লাগে। আমরা তার লাইগ্যা হাত তুইল্লা দোয়া করি।’
তরী রেষ্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, ‘এই রেস্টুরেন্টে আমি অনেকদিন ধরে কাজ করছি। মানুষদের খাবার পরিবেশন করি আমি। মালিকের অর্ডার আছে বুধবার ছাড়াও যেকোনও দিন বিশেষ করে গরিব অসহায় পথচারী মানুষজন খেতে চাইলে তাদের খেতে দিতে হবে। তাই যদি কোনও ক্ষুধার্ত মানুষ আসেন, সবার আগে তাকে খেতে দেই।’
ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকের স্থানীয় প্রতিনিধি মাজহারুল ইসলাম বলেন, যখন সবাই একসাথে খাবার খায় তা দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। সমাজের স্বল্প আয়র সাধারণ মানুষদের নিয়ে সাদ্দামের এমন আয়োজন সত্যিই অনুকরণীয় এবং সাদ্দাম যে কাজটি করছেন, এটি একটি মানবিক দৃষ্টান্তমূলক কাজ। ভিক্ষুক-পথচারীসহ ক্ষুধার্তরা বিনা পয়সায় খাবার পাচ্ছেন। তিনি এই কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তবে তার পাশাপাশি এলাকার আর যে বৃত্তবান মানুষজন আছেন তারাও যেন এমন কাজে এগিয়ে আসেন। ’
তরুণ উদ্যোক্তা তরী রেস্টুরেন্টের পরিচালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি জানি ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে আহার তুলে দিলে আল্লাহ খুশি হন। তাছাড়া অনাহারী মানুষের কষ্ট দেখলে আমার নিজের খুব কষ্ট হয়। তাই ব্যবসার পাশাপাশি যতটুকু পারি এসব অসহায় মানুষের সেবা করি। এটা করে নিজের মধ্যে একটা আলাদা সুখ অনুভব করি। বিশেষ করে প্রতি বুধবার আমি দুপুরে যে খাবার খাই আমি তাদেরকে একই খাবার খেতে দেই। আমার ইচ্ছা আছে, যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন এসব অনাহারী, গরিব, ছিন্নমূল মানুষের মুখে আহার তুলে দিবো ইনশাআল্লাহ। আমি সমাজের বিত্তবানদের আহবান জানাই গরিবদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।