“কেউ ফেরেনা খালি হাতে খাজারে তোর দরবারে”। বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, গান গেয়ে, দীঘিতে স্নান করে, শিং মাছ কিংবা মুরগি দিঘির জলে নিক্ষেপ করে, মাজারের ইট পাথরে চুমু খেলেই আপনার মনের বাসনা পূর্ণ হয়ে যাবে। হ্যাঁ এমনটাই হয়ে আসছে মুসলিম সাধক হযরত খানজাহান আলীর মাজারে। লক্ষ লক্ষ ভক্তদের এমনই ধারণা। তিন দিনব্যাপী মেলা উপলক্ষে পুরো মাজার জুড়ে চলছে মেলা ও উৎসব। সাড়ে পাঁচশত বছরের অধিক সময় ধরে বছরের প্রত্যেক চৈত্র মাসের পূর্ণিমায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় লোকেরা বলে “দরগার মেলা”। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ উপস্থিত হয় বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ ইউনিয়নের দিঘীরপাড় এলাকার এই খাঞ্জেলির মেলা বা দরগার মেলায়। মেলা উপলক্ষে সাজ সাজ রব এবং উৎসব আমেজে ভোরে গেছে দিঘীরপাড় সহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের বাড়িঘর। মনে হয় এ দিনটির অপেক্ষায় ছিল তারা।
পূন্য লাভের আশায় হাজার হাজার নারী পুরুষ মাজারে জড়ো হয়ে তিন দিন অবস্থান করেন। মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্টার আরাধনায় মগ্ন থাকবেন তারা। এই দিনগুলিতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে লালন মুর্শিদি ভাটিয়ালি এবং খান জাহান আলীর নামে গান পরিবেশন করবেন তার ভক্তরা। দিনরাত চলবে শত শত বছর ধরে চলে আসা এই সংস্কৃতি। ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে যে কোনো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সেফা লাভের আশায় ভক্তবৃন্দরা গোসল করছে কালাপাহাড় ধলাপাহাড়ের দিঘী ঠাকুর দিঘিতে। দীঘিতে এখনো ভারতের মাদ্রাজ থেকে আনা পিলপিল ও মাদ্রাজ নামে দুইটি কুমির রয়েছে। এরই মধ্যে ভয়ডরহীন ভাবে অনায়াসে গোসল করছে ভক্তবৃন্দ। মনোবাসনা লাভের আশায় শিং মাছ উন্মুক্ত করছে দিঘীর জলে। আবার কেউ মোরগ মুরগি ছাগল ইত্যাদি দান করছে দিঘী ও মাজারে। শেফার নিয়তে দিঘীর পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে।
মেলা উপলক্ষে পসরা সাজিয়ে বসে আছে হাজারের অধিক ছোট বড় দোকান। তাদের বেচা বিক্রিও ভালো। দোকানী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ প্রশাসন, টুরিস্ট পুলিশের টিম, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক এবং ষাট গম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের পুরো টিম।
মাজারের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলেন, প্রতি বছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা বসে। সাড়ে ৫শ’ বছর ধরে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই মেলা খানজাহানের মৃত্যু বা জন্ম দিনে হয় না। এখানে চৈত্র মাসের পূর্নিমা তিথিতে ভক্তরা এসে জড়ো হয়। যেটা পরবর্তীতে মেলায় রূপ নিয়েছে। খানজাহানের হাজার হাজার ভক্ত তাদের নানা মনোবাসনা নিয়ে হাজির হন। তারা বিশ্বাস করেন খানজাহান এখানে কাউকে খালি হাতে ফিরান না। তাদের সব আশা পূরণ করেন খানজাহান। তাই সব সব ধর্মের মানুষ এই সময়ে হযরত খানজাহানের মাজারে মিলিত হন।
টুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। এবার সাদা পোশাকেও তাদের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। এবার লক্ষাধিক লোকের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন এলাকার বিভিন্ন জায়গায় টুরিস্ট পুলিশের ফোন নাম্বার রয়েছে। মেলায় আগত দর্শনেরথীরা কোন ধরনের সমস্যায় পড়লে আমাদেরকে ফোন দিলে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যাবে।
Please follow and like us: