এম দুলাল আহাম্মেদ,গুইমারা(খাগড়াছড়ি)প্রতিনিধি:
ফাল্গুনের ছোঁয়ায় ফাগুন সেজেছে,পলাশ শিমুলের বনে লেগেছে আগুনরঙা ফুলের মেলা।শীতের জড়তা কাটিয়ে কোকিলের সেই সুমধুর কহুতানে মাতাল করতে আবারও ফিরে এলো ঋুুতুরাজ বাসন্তরানী।পাহাড়ের রঙিন বনফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে। তেমনি নতুন সাজে যেন জেগে উঠেছে মাটিরাঙ্গা ও গুইমারার আ¤্রপালির বাগানগুলো।আ¤্রমুকুলের সাজ সাজ রব ঘ্রান আর মেী’মাছির মৌ মৌ সুর দুটি উপজেলার সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমনি বার্তা।শোভা ছড়াচ্ছে আ¤্রমুকুল তার নিজস্ব মহিমায়।মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে দুটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাগানগুলো।প্রায় শতভাগ গাছেই মুকুল এসেছে।বাগান মালিক, কৃষিবিদ,আমচাষীরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ,মাটিরাঙ্গা ও গুইমারা উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে।আমচাষী, বাগান মালিকরা বাগানে পরিচর্চা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন ।
অবশ্য গাছে মুকুল আশার অনেক আগে থেকেই গাছের পরিচর্চা করে আসছেন চাষীরা।যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।মুকুল থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছিরা মধু আহরনে ব্যস্ত, মৌ মৌ সুবাসে মুখরিত এখন আ¤্রপলির বাগান।বাগানের সারিবদ্ধ গাছে ভরপুর আমের মুকুল যেন শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায় ।
কথা হয় মাটিরাঙ্গার কৃষক ফরিদ মিয়া,মোহাম্মদ উল¬াহ,গুইমারা থানার বড়পিলাক গ্রামের আবদুর রব, ডাঃশাহ আলম,শাহজাহান গাজী, মেম্বার সৈয়দ হোসেন ও সিদ্দিক মিয়া এবং মো:লিটন মিয়ার সাথে।তারা জানান শীতের জড়তা কাটিয়ে বসন্তে আগমনে ধীরে ধীরে উষ্ণ হাওয়া বইতে শুরু করায় প্রতিটি বাগানের প্রায় শতভাগ গাছে মুকুল শোভা পাচ্ছে।এবছর ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ কম থাকায় এবার কাঙ্খিত ফলনের আশা করছেন তাঁরা।সর্ব সময় কৃষকরা বাগানে দিকে খেয়াল রাখছেন এবং কখন কোন ধরনে ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে সে ব্যাপারে ও খুব সচেতন রয়েছেন কৃষকরা।
পার্বত্যাঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া আ¤্রপলি, ফজলি,নেংরা,মালদাসহ অন্যান্য জাতের আম চাষের উপযোগি হওয়ায় দিন দিন বাগান ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।আ¤্রপালিসহ অন্যান্য জাতের আম চাষে তাদের আগ্রহ বা উদ্বুদ্ধ হওয়া প্রথম কারন জানতে চাইলে মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও গুইমারা এলাকার আম চাষীরা, আমচাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিতি সাবেক সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুইয়ার কথা স্মরণ করে চাষীরা জানান, গত বিএনপি সরকারের আমলে ওয়াদুদ ভুইয়া উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বিনামুল্যে চারা, পরিচর্চার খরচ, শ্রমের মুজুরীসহ প্রতিটি বাগানে একটি করে ঘর তৈরী করে দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের চাষীদের কে আমসহ মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করেছেন।বিশেষ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে পুর্নবাসন প্রকল্পের আওতায় শতশত একর মিশ্র ফল বাগান সৃজন করে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ।এছাড়া বাগানে সেচ দেওয়ার জন্য স্যালো মেশিন দিয়ে মিশ্র ফল চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষকদের।এসব বাগানের সুবিধা ভোগীদের সুফল দেখে চাষীরা আম চাষে উৎসাহিত হয়ে চাষীরা নিজ উদ্যোগে প্রথমে রাজশাহী, চাপাই নবাবগঞ্জ, কুড়িগ্রাম থেকে চারা সংগ্রহ করে আমের বাগান সৃজন করলেও বর্তমানে তারা নিজেরাই চারা উৎপাদন করে নিজ নিজ উদ্যোগে নতুন নতুন বাগান সৃজন করছেন এবং অন্যত্র বিক্রি করে তাদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।ধীরে ধীরে পার্বত্যাঞ্চলে সম্প্রসারিত হচ্ছে আমের বাগান।পার্বত্যাঞ্চলে উৎপাদিত আম গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে অনেক বেশি।অনেকেরই ধারনা একটি সময় পার্বত্য চট্রগ্রামের উৎপাদিত আম দেশের যে কোন অঞ্চলকে ছড়িয়ে যাবে।
মাটিরাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান,এবছর আমের মুকুল খুব ভাল হয়েছে।বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের উৎপাদন গত বছরের চাইতে অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন তারা।