বাগেরহাটের মোংলায় নৌকার সমর্থক দুই প্রতিবন্ধী সহোদরের মৎস্য খামার স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবাদ করায় প্রতিবন্ধীদের পিটিয়ে আহত করেছে তারা, হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাদের। থানায় অভিযোগ দিলেও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের গোয়ালের মেঠ এলাকায়। ভুক্তভোগী মোঃ মোস্তফা ফকির (৬০) এবং মোঃ ইব্রাহিম ফকির (৫৫) ওই এলাকার মৃত আব্দুল আজিজ ফকিরের ছেলে। তারা উভয়েই প্রতিবন্ধী এবং সহোদর।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, স্থানীয় মেহের আলী শেখের ছেলে মোঃ জাকির শেখ ও তার সহযোগী আসলাম শেখ, রিয়াদ শেখ, গাউস শেখ, দাউদ শেখ, শাহ আলম, মোকসেদ আলী,আতিয়ার মোল্লাসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি পার্শবর্তী খোনকারের বেড় মৌজায় ভুক্তভোগীর পৈতৃক ও ক্রয়কৃত ২-০৯ একরের মধ্যে .৯৩ একর সম্পত্তির একটি মৎস্য খামার জোর করে দখলে নিয়ে ভেড়ি/ বাঁধ অপসারণ করে খামারে থাকা মাছ লুট করে নেয়। ফলে প্রতিবন্ধী সহোদরের সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় । বাধা দিতে গেলে প্রতিবন্ধীদের খুন করে লাশ ঘেরের পানিতে ভাসাইয়া দেওয়ার হুমকি দেয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দদের জানিয়ে কোনো প্রতিকার না পেয়ে প্রতিবন্ধী সহোদর মোংলা থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগটি গ্রহণ করলেও অজ্ঞাত কারণে আসামিদের বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই বলে জানান প্রতিবন্ধী মোঃ মোস্তফা ফকির।
ভুক্তভোগীর বোন সিয়ারুন্নেছা বলেন, এই সম্পত্তি নিয়ে মামলা হয়েছে, রায় আমাদের পক্ষে এসেছে। জমি আমাদের নামে মিউটেশন করা হয়েছে। আমরা এই জমি দীর্ঘ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। আগেও একবার এই ঘের দখল করার সময় জাকির শেখ ও তার লোকজন পিটিয়ে আমাকে ও আমার ভাই ইব্রাহিমকে আহত করে। সে বার আমরা প্রাণে বেঁচে যায়। আমার ভাইপো মৌজালী আলী ফকিরকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করার সময় আমরা দেখে ফেললে সে ছেড়ে দেয়। জাকির তার আপন মামা লোকমান হোসেনকে পিটিয়ে আহত করে এলাকা ছাড়া করেছে। আমরা নৌকার সমর্থক হয়েও জাকিরের অত্যাচারে এলাকায় থাকতে পারছি না। সে আবার জোর করে ঘের দখল করেছে, মাছ মেরে নিয়ে গেছে।আতংকে আছি কোন সময় যেন সে আমাদের প্রাণে মেরে ফেলে।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মর্জিনা বেগম বলেন, পর পর দুই বার মিঠাখালী ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। আমার জানামতে জাকির একজন ভয়ঙ্কর লোক। সে লোকজন নিয়ে অবৈধ ভাবে আমার বাড়িতেও প্রবেশ করে আমাদের পিটিয়ে আহত করে। সে বিষয়ে থানায় মামলা করেছি। সে জামিন নিয়ে এলাকায় এসে আবারো হুমকি ধামকি দিচ্ছে। প্রতিবন্ধী পরিবারের ঘেরটি জাকির জোর করে দখল করে রেখেছে। ঘেরের মাছও মেরে নিয়ে গেছে। নৌকার সমর্থক হয়েও তারা অসহায় হয়ে আছে, কোনো বিচার পাচ্ছে না।
স্থানীয় নুরুল ইসলাম বলেন, জাকির শেখ অত্যন্ত খারাপ প্রকৃতির লোক। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোঃ মোস্তফা ফকির ও তার পরিবার চিংড়ি প্রতীকের বিপরীতে ভোট দিয়েছে বলে তাদের মাছের খামার জাকির ও তার বাহিনী দখল করে নিয়েছে । এটা জুলুম। প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অভিযুক্ত মোঃ জাকির শেখ বলেন, যে জমির বিষয়ে তারা অভিযোগ করেছে সে জমি ২০১০ সালে আমি ক্রয় করেছি। সালিশের জন্য তাদের ডাকা হয় কিন্তু উপস্থিত হলেও তারা শালিস না মেনে চলে যায়। ২০১৮ সালে আদালত থেকে তারা একটা ডিগ্রি পেয়েছে। সে সময় আমি আপিল করি। এই জমির উপর বর্তমানে আদালতের স্থগিতাদেশ রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি ) কে এম আজিজুল ইসলাম বলেন, যদি অভিযোগ করে থাকে তবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।