
সৈয়দ মুন্তাছির রিমন:
মৌলভীবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলছে ট্রাফিক পুলিশের নীরব চাঁদাবাজি। জানা গেছে- মৌলভীবাজার জেলা সদরে দীর্ঘদিন যাবৎ অভিনব কায়দায় সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে চলছে পুলিশের চাঁদাবাজি। বৈধ কিংবা অবৈধ, সিগন্যাল দিলেই প্রতিটি গাড়িকে দিতে হবে টাকা। টাকা না দিলে দেয়া হয় মামলা। মৌলভীবাজার জেলায় চলাচলকারী ২হাজার ৫শত টমটম গাড়ি থেকে ২শত টাকা করে মাসোয়ারা আদায় করছে মৌলভীবাজার ট্রাফিক পুলিশ। আর পুলিশের এ দায়িত্ব পালন করছেন প্রতি গাড়ী স্ট্রেন্ডের দলনেতা অথবা ইউনিট প্রধান। প্রতিমাসে শুধু টমটম খাত থেকে ট্রাফিক পুলিশ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রায় অর্ধকোটির উপরে। ট্রাফিকের চাঁদাবাজির কৌশল নিয়ে একাধিকবার জেলার শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি এবং সচেতন মহলের মধ্য ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলে এ নিয়ে জেলা আইনশৃংখলা মিটিংয়ে, পৌরসভার মতবিনিময়সভা ও আয়োজিত থানার মতবিনিময় সভায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বন্ধ হচ্ছে না ট্রাফিকের মাসোয়ারা আদায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাসে লোক দেখানো নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হলেও এতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ট্রাফিক পুলিশের নীরব চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়ে প্রতিমাসে ট্রাফিক পুলিশকে গাড়ি প্রতি ২শত টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে চালকদের। এ নিয়ে টমটম চালকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে-মৌলভীবাজার জেলায় অনুমোদন এবং অনুমোদনহীন প্রায় ২ হাজার থেকে ২হাজার ৫শত টমটম রয়েছে। মৌলভীবাজার সদরে চলাচলকারী টমটমগুলোকে ট্রাফিকের পক্ষ থেকে কয়েকটি স্ট্যান্ডে বিভক্ত করে স্ট্যান্ডের সভাপতি-সেক্রেটারি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মাসের ৫ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত স্ট্যান্ডের সভাপতি অথবা সেক্রেটারির কাছে ট্রাফিক পুলিশের মাসোয়ারা টাকা দিতে হয়। নতুবা রোডে গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ট্রাফিক বিভাগ তালিকা দেখে স্ট্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত গাড়িগুলোর টাকা গ্রহণ করে। এর বাহিরের গাড়িগুলোকে টাকা আদায় ব্যতীত রাস্তায় চলাচল করতে দেয়া হচ্ছে না। স্ট্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত গাড়ির পরিচয়ের জন্য বডিতে সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করা হয়েছে। চাঁদনীঘাট স্ট্যান্ডের গাড়ির পেছনে (সি), চৌমুহনী (এস), বেড়িরপার (বি), ঢাকা বাসস্ট্যান্ড (ডি) ও কুসুমবাগ স্ট্যান্ডের গাড়ির পেছনে (সি) নামক সাংকেতিক চিহ্ন লেখা আছে। ট্রাফিক পুলিশের পরিচয়ের জন্য ওই সাংকেতিক চিহ্ন লেখা হয়েছে । তালিকা দেখে যেসব গাড়ি চাঁদা দেয়নি তাদের আটকে রাখা হয়। মৌলভীবাজারে ড্রাইভারদের নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট রিয়াদ। এসআই আলীম উদ্দিন কুসুমবাগ ট্রাফিক বক্য্রে বসারত অবস্থায় ড্রাইভারদের উদ্যোশে ট্রাফিক সার্জেন্ট রিয়াদ বলেন- “শালা ড্রাইভাররা সব জানুয়ারের বাচ্চা। কু—–শা—মা—- ”সহ অসৎখ্য বিরুপ মন্তব্য করতে থাকেন। এ সময় কুসুমবাগ ট্রাফিক বক্য্র অফিসে সার্জেন্ট এর জন্য অপেক্ষমান এক ড্রাইভারকে ডেকে বলেন- এই তুই কোন স্টেন্ডের। পারভেজকে বলিস আমাকে ফোন দিতে। জরিমানার টাকা যখন দিবে, তখন ১শত টাকা করে কেন ? ২শত টাকা করে দিতে হবে। মৌলভীবাজার জেলা অটো টেম্পু সিএনজি সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ পাবেল মিয়া জানান- ড্রাইভারদ্রে নিয়ে সার্জেন্ট রিয়াদ যে কটুক্তি করেছেন, তা মোটেই কোন সভ্যমানুষ করতে পারেনা। তাছাড়া, সার্জেন্ট রিয়াদ শ্রমিকদের নানা ভাবে নির্যাতন করেন। ট্রাফিক পুলিশের মাসোয়ারা আদায় সর্ম্পর্কে জানতে চাইলে, অতিথিতে কি হয়েছে জানিনা। আমরা সিন্ধান্ত নিয়েছি পুলিশকে আর কোন টাকা দিবনা। আগামী ১১ জুন মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এ ব্যপারে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) রওমনুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন- ট্রাফিক সার্জেন্ট রিয়াদ অবশ্যই এ রকম ভাষা বলতে পারেন না। আমি এখনি বলে দিচ্ছি, যেন এ রকম আর না করে।