জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ করে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার প্রতিবাদে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত টানা ২৪ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার জামায়াতে ইসলামী ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে এই হরতাল আহ্বান করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, একজন খ্যাতিমান পার্লামেন্টারিয়ান ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, ইসলামী চিন্তাবিদ, একজন পরিচ্ছন্ন জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা। সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্বশূন্য করার উদ্দেশ্যেই এই সংগঠনের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিথ্যা মামলা দায়ের করে।’
তারা বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক। যার প্রমাণ তার জন্মস্থান পাবনার একজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ ৩ জন বিশিষ্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য দিয়েছেন সেখানে তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন, মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।’
তারপরও মাওলানা নিজামীর মৃত্যুদন্ড রাখায় দেশবাসী বিস্মিত, হতবাক ও গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছে এবং মাওলানা নিজামী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের নামে মাওলানা নিজামীকে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। শুরু থেকেই সরকার এই বিচার কার্যক্রমকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।’
‘২০১৩ সালে তদানীন্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিশরে গিয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আব্দুল কাদের মোল্লার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করে বক্তব্য রাখেন। সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় নেতাগণ নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে মর্মে দফায় দফায় ঘোষণা দেন। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী গণজাগরণ মঞ্চের দাবি বিবেচনায় নিয়ে রায় দেয়ার জন্য বিচারপতিদের প্রতি আহ্বান জানান। সরকারের অন্যায়, অযৌক্তিক, বেআইনী ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত হস্তক্ষেপ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।’
তারা অভিযোগ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন উদ্দেশ্যেই সরকার দেশী-বিদেশী সকল মহল ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আহ্বান উপেক্ষা করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করেই চলেছে।’
জামায়াত নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘মাওলানা নিজামীকে হত্যার মাধ্যমে সরকার শুধু জামায়াতে ইসলামীকেই নেতৃত্বশূন্য করতে চায় না, বরং একজন গণতান্ত্রিক জাতীয় নেতৃত্ব থেকে দেশকে বঞ্চিত করতে চায়। আমরা বিশ্বাস করি একের পর এক নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ইসলামী আদর্শকে হত্যা করা যাবে না। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীসহ নিহত নেতৃবৃন্দের সহকর্মীরা হত্যার বদলে হত্যা নয়, ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করেই এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বদলা নেবে ইনশাআল্লাহ।’
এ সময় তারা বলেন, ‘সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে জাতি তা দেখতে চায় এবং মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মুক্ত অবস্থায় পেতে চায়।’
এছাড়া ওই বিবৃতিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ শুক্রবার দেশব্যাপী দোয়া দিবস, এবং ৭ মে শনিবার দেশব্যাপী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
বিবৃতিতে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ী, হাসপাতাল, ঔষধের দোকান, ফায়ার সার্ভিস ও সংবাদপত্রের গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলেও জানানো হয়।