নয়া আলো ডেস্কঃ- যশোরের রাজগঞ্জে একটি মাদরাসা কেন্দ্রে অন্যের হয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অপরাধে স্বপ্না খাতুন পাখি (২৪) নামের এক নারীকে আটক করে দুই বছরের সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত। একই সাথে আদালতকে ভুল তথ্য প্রদান করার অপরাধে আবু তৈয়েব আলী (৩৮) নামের এক মাদরাসা শিক্ষককে এক বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার নেংগুড়াহাট দারুল উলুস সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা পরীক্ষা কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান আদালত পরিচালনা করে তাদের এই সাজা দেন। ঐ দিন দাখিল বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা চলছিল।
স্বপ্না উপজেলার পাড়দীয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম দফাদারের মেয়ে। সে পাড়দীয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার পরীক্ষার্থী সোনিয়া খাতুনের হয়ে দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছিল। আর সাজাপ্রাপ্ত আবু তৈয়েব আলী পাড়দীয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক। তিনি স্থানীয় ইউসুফ আলীর ছেলে।
আদালত মূল পরীক্ষার্থী সোনিয়াকে (রোল নম্বর-৩৩৭৬৪৭) তিন বছরের জন্য বহিস্কার করেছেন। একই সাথে স্বপ্নাকে পরীক্ষার্থী সাজিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার কাজে সহযোগিতার অপরাধে আদালত পাড়দীয়া মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা মহিববুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য নেংগুড়াহাট ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মাওলানা আব্দুর রউফকে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ব্যাপারে আদালত সাজাপ্রাপ্ত স্বপ্নার নিকট থেকে একটি লিখিত নিয়েছেন। যেখানে স্বপ্না তার এই অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করার জন্য পাড়দীয়া মাদরাসার সুপার মহিবুবুর রহমানকে দায়ী করেছেন। আর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওই কেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষের দুই পরিদর্শককে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে।
অব্যহতি প্রাপ্তরা হলেন, নেংগুড়াহাট ফাজিল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা ইব্রাহিম হোসেন ও হাজরাকাঠি মহিলা আলীম মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা জয়নাল আবেদীন।
আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাড়দীয়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে সোনিয়া খাতুন। সে পাড়দীয়া মহিলা দাখিল মাদরাসা হতে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল। সোনিয়ার পরীক্ষার কেন্দ্র হচ্ছে নেংগুড়াহাট দারুল উলুম সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা। কিন্তু পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন থেকে সোনিয়ার পরিবর্তে তার চাচাত বোন স্বপ্না খাতুন পাখি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। স্বপ্না গত কয়েক বছর পূর্বে পাড়দীয়া মাদরাসা হতে দাখিল পাশ করেছেন।
এদিকে, একজনের পরিবর্তে অপর একজন পরীক্ষা দিচ্ছেন এমন অভিযোগ পেয়ে বুধবার বাংলা প্রথম প্রত্র পরীক্ষা চলাকালীন ওই কেন্দ্রে যান মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান। তিনি কেন্দ্রের ৬ নম্বর কক্ষে গিয়ে প্রথমে স্বপ্নাকে প্রশ্ন করেন। তারপর প্রবেশপত্রের ছবির সাথে স্বপ্নার চেহারার মিল করান। প্রবেশপত্রের ছবিটি অস্পষ্ট হওয়ায় ছবি দেখে স্বপ্নাকে চিহ্নিত করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তখন ওই কক্ষের পাড়দীয়া মাদরাসার অন্যান্য পরীক্ষার্থীর কাছে জানতে চাইলে তিনি নিশ্চিত হন পরীক্ষায় অংশ নেয়া মেয়েটি সোনিয়া নয়। এরপর পাশের কক্ষে দায়িত্বে থাকা পাড়দীয়া মাদরাসার শিক্ষক আবু তৈয়েব আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি আদালতকে জানান- এই মেয়েটিই সোনিয়া, যা ছিল ভুল তথ্য। পরে অবশ্য স্বপ্না ও আবু তৈয়েব আলী আদালতের কাছে সত্যতা স্বীকার করেন। এরপর আদালত স্বপ্নাকে দুই বছর ও শিক্ষক তৈয়েব আলীকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেন।
এসময় রাজগঞ্জ তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ, গণমাধ্যমকর্মী ও আদালতের সাথে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করায় পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন ১৯৮০ এর ৩(খ) ধারায় স্বপ্নাকে দুই বছর ও শিক্ষক আবু তৈয়েব আলীকে ওই আইনের ১৩ ধারায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে।’