রাজশাহীতে নানা কর্মসূচি মধ্য দিয়ে পালিত হলো আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। দিবসটি উদযাপনের অংশ হিসেবে বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে, পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে ‘প্রোটেক্ট ইয়োর ইয়ার, প্রোটেক্ট ইয়োর হেলথ’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
এসময় পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মুহা. আহসান হাবিবের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ কানে কম শোনা থেকে শুরু করে স্থায়ীভাবে বধির হচ্ছে। এই ক্ষতির প্রভাব পাখির প্রজননের উপর ফেলছে। শব্দের উৎস চিহ্নিত করে শব্দদূষণ হ্রাসে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। রাজনৈতিক সভা থেকে শুরু করে বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পিকনিক সকল ক্ষেত্রে এর কান ফাটানো শব্দ চলে। তবে আইনে শর্ত সাপেক্ষে এর অনুমতিও রয়েছে। তবে তার জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত শব্দদূষণের মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবল। সেই লক্ষ্যে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প শুরু করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে শব্দ সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শব্দদূষণের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে হবে। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় শব্দদূষণ সহনীয় পর্যায় নেমে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মোঃ আক্তার জামীল, রাজশাহী রেঞ্জ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অপারেশন) মোঃ মনিরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোঃ আশরাফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ হেমায়েতুল ইসলাম।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সকলের সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেন। বক্তারা বলেন- শব্দদূষণ এক ধরনের পরিবেশ দূষণ। এক নীরব ঘাতক। আর পরিবেশদূষণ আমাদের সঠিক অনুধাবনের অভাবে দিন দিন এই দূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে। অনেক পরিবেশবাদী বাংলাদেশের শব্দদূষণের বর্তমান পর্যায়কে ‘শব্দ-সন্ত্রাস’ নামে অভিহিত করেছেন।
‘শব্দ-সন্ত্রাস’ আমাদের মাথাব্যথার কারণ। শব্দ দূষণ, শব্দদূষণের ক্ষতিকারক দিকসমূহ, শব্দদূষণ রোধে করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা ও সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান।
শব্দদূষণের সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করেন রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাহমুদা পারভীন। তিনি বলেন, রাজশাহী পরিবেশ অধিদফতরের অভিযানে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মোট ১৭টি অভিযান পরিচালানা করে ৪২জন গাড়ীচালককে ৩৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা এবং ৮০টি হাইড্রোলিক হর্ণ ধ্বংস করা হয়।
এছাড়াও শব্দদূষণ রোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের ২০০ জন শিক্ষার্থী, রাজশাহী কলেজের ১৮০ জন শিক্ষার্থী এবং ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে ১০১ জন ইমামদের নিয়ে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। এছাড়াও টিটিসিতে প্রায় ১৬০ জন মটর-পরিবহন শ্রমিকদের ও ৫৫ জন সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে।