নাজিম হাসান,রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী জেলা জুড়ে কয়েন ও খুরচা টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যবসায়ীরা। ১, ২ ও ৫ টাকার কয়েনের স্তুপ পড়েছে একাধিক ব্যবসায়ীর কাছে। এছাড়া ২ ও ৫ টাকা মূল্যমানের কাগজী নোট নিয়েও তাদের দূর্ভোগের শেষ নেই। ব্যাংক কর্তৃপক্ষও এসব কাগজী নোট জমা নিতে আগ্রহী নয়। সরকারি ভাবে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও অজ্ঞাত কারণেই কেউ এসব কয়েন নিতে চান না। ফলে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানান শ্রেণি পেশার মানুষ এগুলো নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। বেকারি ব্যবসায়ী সুমন জানান, বেকারি পন্য বিভিন্ন দোকানে দিলে যে বিল হয় তার তিন ভাগের দুই ভাগেই এই কয়েনে বিল নিতে হয়। এগুলো না নিলে পন্য নেওয়া বন্ধ নতুবা টাকা বকেয়া রাখতে বাধ্য করেন। ডিমের আড়ৎদার হানিফ মিয়া বলেন, ডিম খামারি পলিথিনের ব্যাগ ভরে ভরে এই কয়েন দিয়ে থাকেন। বাধ্য হয়েই তা নিতে হয়। নতুবা বকেয়ার পাহাড় জমে যায়। এছাড়া আমি যখন কাস্টমারকে ৫ টাকার কয়েন প্রদান করতে চাই তখন তারা পকেট থেকে হারিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে আর খুচরা কয়েন নেয় না। ভবানীগঞ্জ হাটের কয়েকজন মিষ্টির দোকানী জানান, যখন মুদ্রার স্বাভাবিক প্রচলন ছিল তখন আপত্তি ছিল না। তাদের মতে এখন কয়েন শুধু ফকিরকে ভিক্ষে দেওয়ার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাও অনেক ফকির (ভিক্ষুক) ১, ২ টাকার কয়েন নিতে বিরক্ত প্রকাশ করে। সাধারণ যাত্রীরা বলেন সিএনজি ও আটোরিকশায় চড়লে এই কয়েনে ভাড়া দিতে গেলেই বিপত্তি শুরু হয়। চালকরা কোন ক্রমেই কয়েনের মাধ্যমে ভাড়া নিতে চান না। ব্যবসায়ীদের অনেকেই এক ও দুই টাকার কয়েন বাজার থেকে উঠিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। জানা গেছে, কয়েন বিপত্তির এই সুযোগে কয়েকটি আসাধু কয়েন ব্যবসায়ী চক্র মাঠে নেমেছে খুরচা ব্যবসায়ের কাজে। তারা কমিশন ভিত্তিতে মাঠ থেকে কয়েন উঠিয়ে নিচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মতে, তারা এক হাজার টাকার কয়েন দিলে ওই চক্র তাদে ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা ক্যাশ (কাগজী মুদ্রা) প্রদান করে থাকে। তবে এই কয়েন তারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এ ব্যাপরে ব্যবসায়ীরা কিছু জানেন না বলে জানান।সরজমিনে ঘুওে জানাগেছে,বাগমারা, দুর্গাপুর ও পুঠিয়া উপজেলার হাট-বাজার ও গ্রাম-গঞ্জের সবত্রই এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েন নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছে এলাকার সাধারণ মানুষরা। সেই সাথে ভুগান্তিতে পড়েছে খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। যেন ওইসব কয়েন টাকার কোন মূল্য বা দাম নেই। কিছু বে-সরকারী কোম্পানীর জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও বে-সরকারী ব্যাংকগুলো সরকারের তৈরিকৃত এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েন টাকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, সাধারণ ক্রেতারা বিভিন্ন দ্রব্য মূল্য কেনার জন্য যাচ্ছে খুচরা দোকানগুলোতে। আর খুচরা বিক্রেতারা যাচ্ছেন তাদের প্রাইকারী মহাজনদের দোকানে। কিন্তু খুচরা দোকানদাররা ক্রেতাদের জিনিস না দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন এবং বলছে, এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েন দিয়ে কোন জিনিস পত্র বিক্রি নাই। কারণ প্রাইকারী মহাজনরা ও বে-সরকারী কোম্পানীর সেলসম্যানরা অফিসের কর্মকর্তাদের নিষেধ আছে বলে তারা কয়েন টাকা নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।এবিষয়ে সরকারী-বে-সরকারী ব্যাংক গুলোতে জানতে চাওয়া হলে কেন আপনারা ব্যবসায়ীদের বা ব্যাংকের গ্রাহকদের কাছ থেকে এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকার কয়েন টাকা ব্যাংকে জমা নিচ্ছেন না। তিনি জানান, ব্যাংকে লেন দেনের সমস্যা, টাকা সংরক্ষিত রাখার জায়গা সংকট, গণনা করা সমস্যা ও ব্যাংকে লোকবল সংকটের কারণে ওই কয়েন টাকাগুলো নেয়া হয়নি