প্রতিবছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার আগে নানা প্রস্তুতি নেয় প্রশাসন।বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ নানা প্রস্তুতির বাইরে মেস মালিক, পরিবহণ মালিক, হোটেল মালিকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজশাহী সিটি করপোরেশনও নানা সিদ্ধান্ত নেয়। মেস মালিক, পরিবহণ মালিক, হোটেল মালিকরাও সে আলোচনায় দুর্ভোগহীন সেবা দেওয়ার নানা আশ^াস দেন। কিন্তু সে আশ^াস ও পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরের চিত্রের মিল কখনও খুঁজে পাওয়া যায় না। এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষাকে কেন্দ্র কওে শিক্ষানগরীখ্যাত রাজশাহীতে পরিবহণ, আবাসন ও হোটেল ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যের চিত্র এবারও বদলায় নি!
মঙ্গলবার ৫ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতক শ্রেণিতে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত চার শিফটে ‘সি’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯ টার পরিক্ষায় অংশ নিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই সকাল ৮ টার আগেই বাসা থেকে বের হয়েছেন। তারপরও তীব্র যানজটের সম্মুখীন হয়েছেন। তবে দুর্ভোগের শুরু যানজট দিয়ে নয়। বরং পরিবহণ ও আবাসন দিয়েও।
ভর্তি পরিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনদের ভাষ্য, রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে গত এক মাস থেকেই আসা-যাওয়া ও থাকার পরিকল্পনা করছেন। তবে যারা একটু দেরি করেছেন, তারা চরম দুর্ভোগের মুখে পড়ছেন। আর এতো অগ্রিম পরিকল্পনার পরেও ন্যায্যমূল্যে হোটেল কিংবা মেস পান নি। অনেকে দূরপাল্লার টিকিটও কেটেছেন নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে।
রাজবাড়ী জেলা থেকে ছোট ভাইকে বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছিলেন রাসিব মোস্তফা। তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে তিনি রাজশাহী আসার টিকিট ও এখানে থাকার মতো রুম খুঁজছিলেন। টিকিট তো সোনার হরিণ। আর তার চেয়েও দামি আবাসন। কোথাও কোনো সিট নেই। বাধ্য হয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় অনেক কষ্ট করেই রাত কাটাতে হয়েছে। কিন্তু যাদের রাজশাহীতে কেউ নেই, তাদের কী অবস্থা!
ভর্তি পরীক্ষাকে সামনে রেখে নগরীতে আবাসন ব্যবসা বেশ জমে উঠেছে। এবার মৌসুমি কথিত উদ্যোক্তার দেখা মিলেছে।
কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কাস্টমার খুঁজছেন। যোগাযোগ করা হলে এদের একজন জানান, ভর্তি পরিক্ষাকে সামনে রেখে তারা নগরীতে, যেটি বিশ^বিদ্যালয়ের অদূরেই বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে খাটসহ বাসা-বাড়ির মতোই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর তারা এক রাতের জন্য আড়াই হাজার টাকা নিচেছন। আর কেউ খাবারের ব্যবস্থা চাইলে সেটাও করে দিচ্ছেন। এরজন্য খাবারের বিল দিতে হবে। আড়াই হাজার টাকায় শুধু থাকার ব্যবস্থাই করা হচ্ছে।
এদিকে, নগরীর মেসসহ হোটেলগুলোতেও একই নৈরাজ্য চলছে। নজরদারি আদৌ আছে কী না তা বোঝার উপায় নেই।
রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান জানান, রাজশাহী শহরে ৪ হাজারের বেশি মেস আছে। এরমধ্যে ২ হাজার ২০০ মেস তাদের সংগঠনের অধীনে। সংগঠনের অধীনে থাকা মেসগুলো তারা নজরদারি করছেন। তবে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে একাধিক অভিভাবক আসছেন। একারণে নানা সংকট তৈরি হচ্ছে। শুধু আবাসন নয়, পরিবহণ চালকরাও যেন সুবর্ণ এক সুযোগ পেয়েছেন। যা ভর্তি ছাড়া অন্য সময়ে তেমন একটা দেখা যায় না। যাটজটের তকমা লাগিয়ে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে পাঁচ-দশগুণ পর্যন্ত। যারা রাস্তা চেনেন, তারা অনেকে পায়ে হেঁটেই বিশ^বিদ্যালয়ে যাচেছন। আর যারা প্রথমবার এসেছেন তারা ১০ টাকার ভাড়া ১০০ টাকাও গুণছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এর অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়গুলো আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা নির্দিষ্টভাবে যেখানেই অভিযোগ পাচ্ছি, সেগুলো সমাধান করছি। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।