এম এ মালেক, সিরাজগঞ্জঃ- ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এমন প্রবাদ বাক্যটি বাস্তবায়নে যুদ্ধ করছেন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ বাজারের চা বিক্রেতা শ্রী প্রকাশ কুমার মোদক। তিনি এলাকার একজন ভাল চা বিক্রেতা হিসেবেও পরিচিত ব্যক্তি।
রায়গঞ্জ সদর এলাকার এক অতি অভাবি হতদরিদ্র পিতার ঘরে জন্ম নেয়া প্রকাশ বাবুর উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার সুপ্ত বাসনা বিকশিত হতে পারেনি। নিজের হৃদয়ে লুকায়িত সেই সুপ্ত বাসনা দুই কন্যা সন্তানের মাধ্যমে বিকশিত করতে নিরন্তর যুদ্ধ করে চলছেন তিনি।
চা বিক্রি করেই সংসার চালানোর পাশাপাশি ২ মেয়েকে আলোকিত মানুষ করার যুদ্ধ করছেন তিনি। তার বড় মেয়ে কুমারী প্রিয়াংকা রানী মোদক, প্রকৌশলী হিসেবে ডিগ্রী লাভ
করার শেষ বর্ষে। পড়াশুনা করছে ঢাকার সোনারগাঁ বে-বেসরকারী প্রকৌশলী বিশ্ব বিদ্যালয়ে আর ছোট মেয়ে প্রত্যাশা রানী মোদক স্থানীয় পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত ৯ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী।
এ দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে তার আয়ের একমাত্র উৎস চা,মিষ্টির দোকান এবং তাও মেরামতের অভাবে ভেঙ্গে পড়েছে এই চা ঘরটি। এ রোজগারের ঘরটি মেরামত
করার ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক সংকটে তা মেরামত করতে পারছেন না। খেয়ে না খেয়ে তার ওই ২ মেয়েকে মানুষ করায় মূল উদ্দেশ্য।
সম্ভভব্য সাফল্য এ পিতার গ্রামের বাড়ী রায়গঞ্জ থানা সংলগ্ন হত দরিদ্র প্রাণ গোপাল মোদকের মেঝো ছেলে প্রকাশ কুমার মোদক। তার পিতা প্রাণ গোপাল মোদক বাড়িতে বসে তৈরি করতেন রসগোল্লা, খাজা, বাতাসা, খুরমা, কদমা, গুড়ের কটকটিসহ হরেক রকমের মিষ্টি। এসব মিষ্টি, বাতাসা মৌসুমী বৈশাখী মেলাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতেন। এ থেকে যা আয় হতো তা দিয়ে পরিবারের পাঁচ সদস্যের আহার
যোগানই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ত। কতদিন কাটত অনাহারে উপবাসে। হাট বাজারে দৌড় ঝাপ করতে করতে যেন হাপিয়ে উঠেছে। অবশেষে ১৯৭৫সালের শেষ দিকে রায়গঞ্জ থানা অদূরে
রায়গঞ্জ বাজারে পাঁচ শতক খাস জমির উপর গড়ে তোলেন চা,মিষ্টির দোকান। যে জায়গা টুকুর উপর রয়েছে স্থানীয় ভূমি গ্রাসী প্রভাবশালীদের দৃষ্টি।
স্কুলে অদ্যায়নরত অবস্থায় বৃদ্ধ পিতাকে সাহায্য করতেন দুই ভাই মিলে। পিতার ব্যবসার
যোগান দেওয়া তার উপর অভাব অনটনের তারনায় লেখাপড়া এগোইনি বেশিদূর রায়গঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কোন রকমে এস.এস.সি শেষ করলে স্বর্গবাসী হন পিতা প্রান গোপাল মোদক। সংসারের ঘানি এসে পড়ে তারই কাঁধে। লেখাপড়া বন্ধ করে দিয়ে শুরু করেন পুরোদমে ব্যবসা। বিয়ে করেন টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার সবিতা রানী নামের কুলবতী নারীকে। তাদের কোলজুড়ে আসে দুই কন্যা সন্তান। নাম কুমারী প্রিয়াংকা রানী মোদক ও কুমারী প্রত্যাশা রানাী মোদক।
দুই মেয়েকে পড়াশোনার খরচ চালাতে গিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেও হাপিয়ে উঠেছেন তিনি। তার জীবন যুদ্ধ করেও বড় মেয়েকে প্রকৌশলী আর ছোট মেয়েকে ব্যাংক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন এমন টাই প্রত্যাশা।
Please follow and like us: