মনিরুল ইসলাম মনির :
দিনদিন রিকশার ব্যবহার কমে যাচ্ছে। ইজিবাইকের দাপটে অচিরেই হারিয়ে যাবে গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এ রিকশা। যার ফলে রিকশাচালকরা পড়েছে বেকায়দায়। স্বল্পসংখ্যক রিকশা রাস্তায় দেখা গেলেও আগের মতো যাত্রী না পাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে রিকশাচালকরা।
রিকশাচালক জাবেদ রহমত আলী (৫০) জানান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের কারণে মানুষ আর রিকশায় চড়তে চায় না। কয়েক মাস আগেও সারা দিন রিকশা চালিয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হলেও বর্তমানে ১০০ টাকা রোজগার করা কঠিন হয়ে পড়ায় ছেলেমেয়ে নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ৬ মাস আগেও রাস্তা দখল করে থাকতো রিকশা, এখন আর আগের মতো রিকশা চোখে পড়ে না। অলি-গলিসহ প্রধান প্রধান সড়কে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি ইজিবাইক অবৈধভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। যার ফলে বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা। রিকশা ও ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ভাড়ার ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য নেই বরং ইজিবাইকের ভাড়া কম এবং দ্রুসময়ে আরামদায়ক অবস্থায় গন্তব্যে পোঁছে যায়।
এ ছাড়া ৫-৭ জন যাত্রী অনায়াসে যাতায়াত করতে পারায় মতলব উত্তরবাসীর কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক। একটি রিকশায় ২ জন যাত্রী ছেংগারচর থেকে কলাকান্দাা বউবাজার যেতে ভাড়া নেয় ৫০ টাকা, অপরদিকে একই ভাড়ায় (৩০ টাকায়) ৪ জন যাত্রীকে আরামে এবং দ্রুত সময়ে পৌঁছে দিচ্ছে ইজিবাইক। রিকশায় শেয়ারে যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। ইজিবাইকে শেয়ারে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় ইজিবাইক যাত্রীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। যার ফলে রিকশায় যাতায়াত দিন দিন কমে যাচ্ছে। অল্প সময়ে ও কম খরচে আরামদায়কভাবে অধিকযাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারায় লাভবান হয় যাত্রী ও চালক উভয়ে। রিকশাচালক আবু সমসের বলেন, আমি আগে রিকশা চালাতাম, বর্তমানে ইজিবাইক চালাচ্ছি। আগে সারা দিন রিকশা চালিয়ে ১৫০ টাকা রোজগার করতে মাথার ঘাম পায়ে পড়তো। বর্তমানে আমি ইজিবাইক চালিয়ে খরচ বাদে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করতে পারছি।
তিনি আরো বলেন, রিকশা চালানো অনেক কষ্টের কাজ। সারা দিনে কমপক্ষে ৫-৬ বার নাস্তা খেতে হয়। তার পরও শরীর দুর্বল হয়ে যায়। শরীরের ওপর অধিক চাপের ফলে যৌবনেই বার্ধক্য দেখা দেয়। তাই শহরের অধিকাংশ রিকশাচালকই এখন ইজিবাইক চালাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে আগের তুলনায় অনেক ভালো আছি।তবে সরকার রিকশার লাইসেন্স ফি ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বাবদ লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করতো। বর্তমানে ইজিবাইক চালাতে কোনো লাইসেন্স ফি বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না থাকায় সরকারকে কোনো রাজস্ব দিতে হয় না। শুধু প্রতিদিন রাতের বেলা (সারা রাত) একবার ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে হয়। মতলব উত্তরে ২ হাজারেরও বেশি চার্জার ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল করলেও সরকারি কোনো নিয়মনীতি না থাকায় সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অথচ প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে এ ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দিতে। যার ফলে বাসা-বাড়িতে বিদ্যুতের লোডশেডিং অনেক বেড়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত ইজিবাইক রাস্তায় চলাচল করায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা বাড়ছে। অধিকাংশ ইজিবাইকের হেডলাইট ও হর্ন না থাকায় রাতের বেলা প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সুস্পষ্ট নীতিমালা দাবি করছেন ভুক্তভোগী জনগণ।