
শিশুর মানসিক গঠন ও বিকাশে পরিবারের ভূমিকা অপরিহার্য-সাহিদা সাম্য লীনা
অতিথি লেখক –
কবি বলেছেন – ঘুুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুদের অন্তরে’’। এ কথা অনস্বীকার্য যে, সব শিশুর মাঝে একটা করে আত্বা বাস করে। সে আত্বাই একসময় পরিপুর্ণ মানুষ হিসেবে একদিন জেগে উঠে। এই আত্বাকে সবার মাঝে জাগ্রত করতে হবে । পুর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে আত্বাকে নিজেদের মাঝে ধারণ করার। সুস্থ, সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা; কেবল মানসিক ভাবে পুর্ব প্রসÍুতিই পারে জীবনকে নিরাপদ ও সুশৃঙ্খলভাবে তৈরি করতে। একটা শিশু একটি পরিবার, দেশ, জাতির ভবিষ্যত। সে শিশুর বেড়ে উঠার জন্য পরিবারকে হতে হবে আন্তরিক,ধৈর্যশীল, ও সতর্ক। যে পরিবারে এসব গুনগুলোর আবহ থাকেনা সেখানে একটি শিশু যেন তেন ভাবে বড় হয়। কথাবাত্রা, আচার-আচরনে ভিন্নতা দেখা যায় শিশু বেড়ে উঠার সাথে সাথে। পরিবারই তখন মারাত্বক ভাবে চিন্তিত হন। এই চিন্তা এক সময় রুঢ় হতে বাধ্য করে বড়দের। শিশু বা ছেলেমেয়ের প্রতি তারা শারিরীক, মানসিক অত্যাচার -নির্যাতন করেন। কিন্তু তখন এমন শাসন আর বাঁধ সাধেনা শিশুদের। শিশু যেভাবে এতদিন শিখে বড় হয়েছে ঠিক তেমনি আচরণ করে চলে। বাবা মা তার সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। পারিবারিক অশান্তি দেখা দেয়। তাই প্রতিটি পরিবারকে সচেতন হতে হবে আগে থেকে। শিশুর মানসিক গঠনে পরিবারের ভুমিকাই প্রধান।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুদের উপর নানা রকম অত্যাচার নেমে এসেছে। নিত্যনতুন কায়দা,বর্বররোচিত হামলা,নির্যাতন গণহারে বাড়ছে। এর জন্য পরিবার দায়ী। যারা এসব অমানবিকতায় জড়িত তারা কিন্তু একটা পরিবার থেকে এসেছে । তাদের মধ্যে মানবিকতার মুল্যবোধ এর বীজ রোপণ হয়নি বললেই চলে। অবহেলা-অনাদরে, হিং¯্রতায় এদের জীবন গঠিত। যার দরুন পরবর্তিতে এরা অন্যদের প্রতি অত্যাচার করতে দ্বিধাবোধ করেনা। নিষ্ঠুরতা তাদের অপরিহার্য হয়ে উঠে\ শিশু গবেষকরা প্রায়ই বলেন, সরকারের বিভিন্ন আইন,নীতি থাকার পরও দেশের শিশুরা ভাল নেই। বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ যথাযথ হলে, তদারকি ব্যবস্থা জোরদার হলে এবং সর্বোপরি শিশুদের বিষয়ে আন্তরিক হলে এমন পরি¯িহতি থেকে বেরিয়ে আসা যায় বলে তারা আশাবাদ ব্যুক্ত করেন। ঘরের পরিবেশ সবসময় অনুকূলে রাখতে হবে। নিজেদের স¦ার্থে বাবা-মা,দাদা-দাদী,চাচা-মামা.খালা-খালু,ফুফা-ফুফু সকলকে মুখ্য ভুমিকা নিয়ে এগুতে হবে। শিশুর নিরাপদ জীবন তাদের হাতে। একটি পরিবার সুন্দরভাবে গড়ে উঠলে সেখান থেকে আরেকটি পরিবার দেখাদেখি নিয়মতান্ত্রিকতায় বেড়ে উঠবে।এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
ক্স বাচ্চার খাবারের ব্যাপারে বাবা-মা সারাক্ষণ গভীর উদ্বেগের মধ্যে থাকে। মাঝে মাঝে সেটাই তাদের আলাপের প্রধান বিষয় হয়ে দঁড়ায়। অসংখ্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতামাতার জন্য একটা ভয়ের কারণ এবং তাদের এই সমস্যা দ্বারা ছেলেমেয়েরা সমান আক্রান্ত হয় । অতিরিক্ত চাপের কারণে শিশুরা স্বাভাবিক ভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠে। অথচ, শিশুরা নিজে সব কিছু আন্তরিকভাবে করতে ইচ্ছুক। সবকিছুতে বাবা-মার অতিরিক্ত প্রেসার শিশুদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিশুর সাথে এমন আচরণ হওয়া উচিত যাতে শিশুরা বুজতে পারে সে স্বাধীন,এতে শিশুরা নিত্যনতুন কথার,মেধার পরিস্ফুটন ঘটায় বিভিন্ন মুহুর্তে। শিশুকে মুল্যায়ণ করতে পারলে,শিশুও বড়দের একসময় মুল্যায়ণ করতে শিখবে। শিশুকে একেবারে শৈশব থেকে যখন শক্ত খাবার খেতে শিখে, তখন থেকে প্রতিটা বাবা মা পুষ্টিকর খাবার দিবেন ঠিক,তবে প্রথমে পরিমাণে কম খাবার দিবেন,যদি এতে সে খেতে চায় আর একটু দিবেন।এভাবে শিশুর খাবারের প্রতি আগ্রহী করে ফেলা উচিত। শিশু অবশ্যই খাবার নিয়ে অবহেলা করবেনা। তবে বয়স উপযোগী খাবার দেয়া এবং হজমে যাতে বাচ্চার সমস্যা না হয় সেদিকে বাবা-মাকে আগেই জেনে নিতে হবে। বাচ্চার স্কুল যাবার আগ পর্যন্ত বাবা মা তাকে কথা-আচার-আচরণে নৈতিকতা শিখানো, স্পষ্টতা, স্কুল- লেখাপড়া কী কেন গল্প আকারে বলা যাতে শিশু আগেই মোটামুটি ধারণা নিতে পারে। শিশুতোষ ছড়া,কবিতা,গল্পের বই পড়তে ও দেখতে দেয়া উচিত। এত ওদের মনের জানালা খুলবে। আরো বেশী করে জানার আগ্রহ তার মাঝে গড়ে উঠবে। তবে অন্য শিশু নিয়ে তুলনা, মন্তব্য, প্রশংসা করা ঠিকনা। আপনি আপনার শিশুর প্রতিটি চলার প্রশংসা করুন। সে আত্ববিশ্বাসী হয়ে উঠবে। শিশুকে প্রতি দিন ঘরের তার বয়স,ক্ষমতা অনুসারে ছোটখাট কাজ দিন। পরে সে কাজ সুন্দর হয়েছে বলে প্রশংসা করুন। দেখবেন সে শিশু কর্মঠ হবে। নিজের কাজ,ঘরের কাজ করতে শিখবে। বড়দের প্রতি সন্মান করা সেটাও শিশুকে আগেই থেকেই যতেœ শিখানো উচিত। প্রতিটি দিক যদি বাবা-মা,শিক্ষক, পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত মমতা আর দায়িত্ব নিয়ে সম্পন্ন করেন তবে শিশু পরিপুর্ণ মানুষ রুপে গড়ে উঠবে। এই পৃথিবী হবে সুন্দর থেকে সুন্দরতর। তাদের থেকে সৃষ্টি হবে আরেক আগামীর পরিপুর্ণ শিশু।
লেখক :
সম্পাদক,মাসিক আঁচল।