সাইফুল আলম সুমন,শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধিঃ- গাজীপুরের শ্রীপুরে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে কেন্দ্র সহকারী সচিবের কাছে প্রশ্নপত্র পাওয়ায় তাকে আটক করেছে শ্রীপুর থানা পুলিশ। শনিবার সকাল সোয়া দশটায় উপজেলার মাওনা কেন্দ্রের পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ভেন্যুতে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষকের প্যান্টের পকেট থেকে একটি প্রশ্নপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আটক প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন নাহিন (৪৫) শ্রীপুর পৌর এলাকার বেড়াইদের চালা গ্রামের সুলতান উদ্দিনের ছেলে। সে স্থানীয় আলহাজ্ব ধনাই বেপারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে মাওনা কেন্দ্রের (শ্রীপুর-১৪৮) পিয়ার আলী কলেজ ভেন্যু থেকে তাকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত শিক্ষককে তাৎক্ষণিক কেন্দ্রের সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
দায়িত্বরত পুলিশ ও কেন্দ্র সচিবের সাথে কথা বলে জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে গণিত পরীক্ষা চলছিল। আধা ঘন্টার এমসিকিউ পরীক্ষা প্রায় শেষের পথে। সোয়া দশটায় ওই কেন্দ্রের সহকারী সচিব ও উপজেলার আলহাজ্ব ধনাই বেপারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন নাহিন শিক্ষার্থীদের দেওয়ার জন্য সংরক্ষিত লিখিত প্রশ্নপত্রের বান্ডেল থেকে একটি প্রশ্ন সরিয়ে নিজের পকেটে রাখেন। এ সময় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্বে থাকা শ্রীপুর পুলিশের শিক্ষানবিশ উপপরিদর্শক নয়ন ভূইয়া ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখে ফেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই কেন্দ্র সহকারী সচিব প্রশ্নপত্রসহ কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার জন্য পিয়ার আলী কলেজ ভেন্যুর মূল ফটকের বাইরে যেতে চাইলে পুলিশের ওই কর্মকর্তাও তাকে অনুসরণ করতে থাকেন। ফটকের বাইরে গিয়ে প্রশ্নপত্রটি অন্য কাউকে হস্তান্তরের চেষ্টা করছিলেন তিনি। এ সময় শিক্ষককে প্রশ্নসহ হাতেনাতে ধরে ফেলেন পুলিশ কর্মকর্তা। তাৎক্ষণিক শিক্ষক তার কাছে প্রশ্নপত্র থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলে তাকে নিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষে গিয়ে ওই কক্ষে সংরক্ষিত প্রশ্নপত্রগুলো গণনা করে একটি প্রশ্নপত্র কম পাওয়া যায়। পরে পুলিশ ওই শিক্ষকের পকেট থেকে প্রশ্নটি উদ্ধার করেন
প্রশ্নপত্রসহ শিক্ষককে আটক করা পুলিশের শিক্ষনবিশ উপপরিদর্শক(পিএসআই) নয়ন ভূইয়া জানান, প্রশ্ন পকেটে রাখার ঘটনাটি দেখে তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই ওই শিক্ষক প্রশ্নপত্র নিয়ে কেন্দ্রের বাইয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তার পিছু নেই। ফটকের বাইরে গিয়ে তিনি প্রশ্নটি অজ্ঞাত কাউকে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সয়য় আমি তাকে ধরে ফেলি। মাওনা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব শাহজাহান সিরাজ জানান, শনিবার ৬৭৭ জন শিক্ষার্থীর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। অভিযুক্ত শিক্ষক আমজাদ হোসেন এই কেন্দ্রের সহকারী কেন্দ্র সচিব হিসেবে কর্মরত ছিল। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা পাট উন্নয়ন অফিসার আশরাফুজ্জামান জানান, গণিত পরীক্ষার প্রায় ৭’শ প্রশ্নপত্র থেকে ৬৭৭টি প্রশ্নপত্র পরীক্ষার হলে বিতরণ করা হয়। অবশিষ্ট ২৩ প্রশ্ন থাকার কথা থাকলেও সেখান থেকে একটি প্রশ্নপত্র কম পাওয়া যায়। পরে কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা কেন্দ্রের সহাকরী কেন্দ্র সচিব আমজাদ হোসেন নাহিন প্রশ্নপত্র বাহিরে নেয়ার অভিযোগে আটক করে।
শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে তাঁর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং শোকজ করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, পরীক্ষা চলাকালীন সময় দায়িত্বরত অবস্থায় আমজাদ হোসেন নাহিদ নামের শিক্ষকের কাছে প্রশ্নপত্র পাওয়ায় তাকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।