গাজীপুরের শ্রীপুরে প্রথমে তিন বন্ধুর শখের বশে এবং পরে বানিজ্যিক ভাবে চাষ করেছেন ড্রাগন ফলের। গতানুগতিক কৃষির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে লাভজনক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন শ্রীপুরের চাষীরা। যার ফলাফল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রাগন ফলের চাষ। শ্রীপুরের মাটি ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী। পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন এ উপজেলার অনেক চাষী।
শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের গাড়ারন এলাকায় তিন ইঞ্জিনিয়ার বন্ধু মনিরুল হক, আলী হায়দার ও আশরাফ হোসেন মিলে ৭৮ শতাংশ জমিতে এ ফলের চাষ শুরু করেন। শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনও। ৩ বছর ধরে তারা ড্রাগন ফলের চাষ করে আসছেন।
ড্রাগন ফল এক ধরনের ফণীমনসা (ক্যাক্টাস) প্রজাতির ফল। এর ইংরেজী নাম Pitaya এবং বৈজ্ঞানিক নাম Hylocereus undatus . গণচীনের লোকেরা এটিকে ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট এবং ড্রাগন পার্ল ফ্রুট বলে, থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল, ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুট নামে পরিচিত। অন্যান্য স্বদেশীয় নাম হলো স্ট্রবেরি নাশপাতি। ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। পাতাবিহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার ও লাল রঙের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো। এই রূপকথার ড্রাগনের মতো কিছুটা মিল থাকার জন্য একে ড্রাগন ফল বলে। এ ফলটিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত। জুস তৈরিতে জন্যও ফলটি অত্যন্ত উপযোগী।
বাগানের মালিক তিন বন্ধুর এক জন ইঞ্জিনিয়ার মনিরুল হক (কাঞ্চন) জানান, বর্তমানে আমাদের বাগানে প্রায় ৫ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৬-১৭ লাখ টাকা। প্রতিটি গাছেই ফল আসা শুরু করেছে। আশা করছি এ বছর ৬-৭ টন ফল সংগ্রহ করা যাবে। যার প্রতিটন ফলের বাজার মূল্য রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মধ্যে।
বাগানের ম্যানেজার মোতালেব হোসেন জানান, বাগানটির নিরাপত্তার জন্য ১৪ টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। এখান থেকে ফলের চারাও বিক্রি করা হয়। সাইজ অনুযায়ী চারার মূল্য নির্ধারণ করা হয়। ছোট চারা ৩০ টাকা, মাঝারী ৫০, বড় চারা ৭০ টাকা করে বিক্রি করা হয়।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মূয়ীদুল হাসান বলেন, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল। শ্রীপুরে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। দুই ধরণের ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে শ্রীপুরে। তারমধ্যে একটি ভিতরে বেগুণী বর্ণের এটি খেতে অনেক মিষ্টি,আর অন্যটি ভিতরে সাদা বর্ণের এটি খেতে নুনতা নুনতা লাগে। এ ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অল্প খরচে অধিক লাভ হয় বলে অনেকেই এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। দেশে বানিজ্যিকভাবে এ ফল চাষ হলে বাহির থেকে আর আমদানি করতে হবে না ।