সাইফুল আলম সুমন,শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধিঃ- ব্ল্যাক সোয়ান বা কালো রাজহংসী। এদের আদি নিবাস অস্ট্রেলিয়ায়। সে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বেশি সংখ্যায় আকর্ষণীয় এই হাঁস দেখা যায়। গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে গত ২দিনে ব্ল্যাক সোয়ানের ৬টি ছানার জন্ম হয়েছে। আরও ২টি ডিম এখনও ফুটার অপেক্ষায় আছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই তা থেকে ছানা পাওয়া যাবে বলে সাফারি পার্ক সূত্রে জানা গেছে।
গত বুধবার ৩টি ও বৃহস্পতিবার আরও ৩টি বাচ্চা ডিম ফুটে রেব হয়। পার্কটির “ডাক গার্ডেন”এ গত বছর ডিসেম্বরে ৩ ও ৪ তারিখে ৪টি ছানা জন্ম নিয়েছিল। বর্তমানে ৬টি ও প্রাপ্ত বয়স্ক ২২টি ও পূর্বের ৪টিসহ এখানে মোট ৩২টি ব্ল্যাক সোয়ান আছে। ব্ল্যাক সোয়ান অস্ট্রেলিয়ার হলেও সাফারি পার্কেরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা। পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে এদের বংশবৃদ্ধি হচ্ছে। নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এরা কুচকুচে কালো। তবে এদের আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে টুকটুকে লাল ঠোঁট। ব্ল্যাক সোয়ানরা কখনো থাকে একা, কখনো এদের দেখা যায় পালে। অস্ট্রেলিয়ায় ব্ল্যাক সোয়ানের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশটির নানা সরকারি সংস্থার পতাকায় প্রতীক হিসেবে ব্ল্যাক সোয়ানের ছবি ব্যবহার করা হয়।
সাফারি পার্কের ফেন্সি ডাক গার্ডেনে গিয়ে দেখা যায়, লেকে ঘুরছে বিভিন্ন রঙের হাঁসের পাল। লেকের পাড়েই বেষ্টনীতে দুটি কালো মা ব্ল্যাক সোয়ান। সঙ্গে তিনটি করে ছটি ছানা। চলতি মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখ বাচ্চাগুলো ডিম থেকে বের হয়েছে বলে জানান পার্কের ফেন্সি ডাক গার্ডেনের দায়িত্বে থাকা ইন্দ্রজিৎ দত্ত। তিনি জানান, ব্ল্যাক সোয়ান সবজি, ভুট্টা ও দানাদার খাবার খায়। মা সোয়ান সারা দিন বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কাছে গেলে বাচ্চার নিরাপত্তা নিয়ে এরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাই পাখা দিয়ে সজোরে আঘাত করতে আসে। বাচ্চাগুলো ছোট হওয়ায় মূল লেকে এদের আপাতত নামতে দেওয়া হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে লেকের এক পাশে বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে। এর আগে আরও দুটি ব্ল্যাক সোয়ানের জন্ম হয়। এরা বড় হয়ে লেকে সাঁতরে বেড়াচ্ছে।
সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, ব্ল্যাক সোয়ান নিজেরাই গাছের পাতা বা খড়কুটা সংগ্রহ করে তার ওপর ডিম পাড়ে। এরা এক মৌসুমে ৮টি পর্যন্ত ডিম দেয়। এদের লেজ থেকে ঠোঁট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৫৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। স্ত্রী ব্ল্যাক সোয়ান ৭ থেকে ৮ কেজি এবং পুরুষেরা ৯ কেজি পর্যন্ত হয়। এদের চোখ উজ্জ্বল। গলা দীর্ঘ বাঁকানো। লাল রঙের ঠোঁট খুবই উজ্জ্বল। ফেন্সি ডাক গার্ডেনে ব্ল্যাক সোয়ান ছাড়াও মাথায় টুপওয়ালা মেন্ডারিন ও কেরোলিনা জাতের হাঁস আছে। পুরো লেকজুড়ে বিভিন্ন জাতের হাঁস সাঁতরে বেড়ায়। লেকের পাড়ে এদের থাকা ও ডিম পাড়ার ব্যবস্থা আছে।
সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন বলেন, পার্কের লেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস দর্শনার্থীদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। এই লেকে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের পাখির আগমন ঘটে।