
অর্পণ মাহমুদ –
“মা” ছোট্ট একটা শব্দ, যে শব্দটাই সকল ক্লান্তি দূরে সরিয়ে দেয়। পৃথিবীতে একজন মা’ সন্তান গর্ভে ধারনের পর থেকে যতদিন বেঁচে থাকেন নিঃস্বার্থভাবে সন্তানকে আগলে রাখেন তার ভালবাসায় । জন্মদাত্রী হিসেবে আমার, আপনার, সকলের জীবনে মায়ের স্থান সবার ওপরে ৷ তাই তাঁকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা জানানোর জন্য কোন বিশেষ দিনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা ৷ মা” কি কখনো তার সন্তান কে দিনক্ষন ঠিক করে ভালবাসে ? আর এই মা” কে ভালবাসতে আলাদা করে কোনো দিনক্ষন ঠিক করা এটা আমার কাছে আধুনিকতাই মনে হয়। আমরা- সন্তানরা এমনই,আজ এই দিনে মা”কে কেউ কেউ নানা উপহার দিয়েও নিজেকে ধন্য মনে করছেন। মা”কে ভালবাসতে এমনটি প্রয়োজন পড়ে কি ? সন্তানের মুখে শুধুমাত্র ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই যে মা জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান, যে মায়ের দোয়ায় সন্তানের সব বিপদের অবশান হয়, সেই মমতাময়ী মা”কে নিয়ে আবার দিন ক্ষন করে পালন !! আমরা-সন্তানেরা যারা মায়ের খুব কাছে থেকে আজ সময়ের স্রোতে বেসে অনেকটা দূরে সরে রয়েছি । তারা কোন দিনক্ষন করে নয়, প্রায় প্রতিটি মুহুর্তেই মা” স্মরণ করেন। আবার মমতাময়ী মা প্রতিটা রাত নির্ঘমে কাটিয়ে দেন সন্তানের চিন্তায় । এটা আমরা ক’জন সন্তানেরা চিন্তা করি ? তবে আমরা -সন্তানেরা দূর থেকে কারণে অকারনে মায়ের সাথে মিথ্যা বলি, আর মা” সেটা সরল মনে বিশ্বাস করেন অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা জেনেও সরল মনে সন্তানের সব অপরাধ ক্ষমা করে দেন। এই হলো মমতাময়ী “মা”। মা” কে নিয়ে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা যা কখনো ভূলবো না। বছর খানিক আগের ঘটনা,,, লিবিয়ার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১ টা এবং বাংলাদেশ সময় তখন রাত সাড়ে ৩ টা। বাসার চারিদিকে গোলাগুলি চলছে। মাঝে মাঝে বোমা হামলার ঘটনায় বিকট শব্দে ঘর-বাড়ি কেঁপে উঠছে। বাড়ী-ঘর কেঁপে ওঠার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল এই বুঝি প্রাণ-প্রদীপ নিভে যাবে! ঘরের মধ্যে অবুঝ ২ শিশু ভয়ে লুকিয়ে আছে আমার বুকের মধ্যে। ভয়ে বার বার বলছ ‘বাবা, চলো এখনই আমরা বাংলাদেশে চলে যাই। তখন বার বার মায়ের মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠছিল । ভাবছিলাম, সত্যি! মা আজ পাশে থাকলে আমাকেও এভাবে বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখতো। অতংক আর নানা দুশ্চিন্তায় কিছু মেলাতে পারছি না। রাত যত গভীর হচ্ছে গুলি আর বোমার শব্দ ততই বেড়ে যাচ্ছিল । হঠাৎ মায়ের ফোন। একটু অবাক হলাম। এত রাতে তো মা কখনো ফোন দেয় না। রিসিভ না করে কেটে দিয়ে সাথে সাথে আমিই ফোন দিলাম। মা’ তুমি ঘুমাও নি! জবাবে ওপাশ থেকে মা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো, ‘ঘুম আসছে না। তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে, তাই ফোন দিলাম। সমো -সামা কি ঘুমিয়ে পরেছে? নেট স্লো তাই কথা তেমন বুঝা যাচ্ছিল না। বড় মেয়ে সমোকে ঘরে রেখে সামাকে কোলে নিয়ে ডাইনিং-এ এলাম। -মা, এখন শুনতে পারছি, বলো মা। -মাঝে মাঝে শব্দ শোনা যাচ্ছে যে, কিসের শব্দ? জিজ্ঞাসা টা মা’য়ের। চমকে গেলাম ! ডাইনিং এর দরজা-জানালা খোলা, তাই শব্দটা একটু বেশীই শোনা যাচ্ছে। মাকে সান্ত্বনা দিতে মিথ্যার আশ্রয় নিতেই হলো। বললাম, ‘মা, পাশে লিবিয়ান বিয়ে বাড়িতে আতশ বাজি চলছে তাই সেই শব্দ শুনছো তুমি। এবার আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা, তুমি এত রাত জেগে আছো যে! ঘুমাওনি কেন ? মা বললো, ‘ক’দিন হলো ফোন দাওনি, তাই চিন্তায় ঘুম আসছে না। কেন জানি মনটা অস্থির লাগছে। তাই ভাবলাম তোমাদের সাথে কথা বলে ফজরের নামাজ পরেই ঘুমাবো। সমো’র আম্মু কোথায় ? ডিউটিতে। আচ্ছা, তোমরা রাত-বিরাতে বাসার বাহিরে যেওনা। ভাল থেকো, সাবধানে থেকো।’ ফোন কেটে দিয়ে মায়ের সাথে এই মিথ্যা কথা বলার জন্য নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছিল। অন্যদিকে সন্তানের বিপদে একজন মায়ের অন্তরে যে অস্থিরতা আসে সেটা ভেবে অবাক হলাম। মা, তুমি আমায় ক্ষমা করো মা। আমি ইচ্ছে করে তোমার সাথে সেদিন এ মিথ্যা কথা বলিনি। সত্যটা জানালে শুধু এই রাত নয়, আরো অনেক রাতের ঘুম হারাম হয়ে যেত মায়ের, তাই সেদিন এই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলাম। তুমি আমায় ক্ষমা করো মা। মাগো তোমার দোয়ায় সকল বিপদ কাটিয়ে তোমার বুকেই ফিরে এসেছি,,,, আর তোমার সাথে মিথ্যা বলার জন্য বিধাতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি,,,,,,,,,,মাগো তুমি যদি ক্ষমা করো সন্তানের সব অপরাধ, বিধাতাও ক্ষমা করে দেবেন এটা অবুঝ সন্তানের বিশ্বাস।