নয়া আলো ডেস্ক- আসেম নেতারা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন এবং তারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আসেম নেতৃবৃন্দ অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে স্থিতিশিলতা বজায় থাকা এবং ধীরে ধীরে অগ্রগতি হওয়ারও প্রশংসা করেছেন। মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটরে সদ্য সমাপ্ত আসেম শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট সাখিয়াজিন এলবেগদোর্জ, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিন কাও, জার্মান চ্যান্সেলর এঙ্গেলা মার্কেল, ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারি এবং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বৈঠক করেন। সেখানে নেতৃবৃন্দ এ প্রশংসা করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহিদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জার্মান চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান এবং সন্ত্রাস বিরোধী লড়াইয়ে তার সরকার বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেন। হক আরো বলেন, এঙ্গেলা মার্কেল বাংলাদেশের পল্লী উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাকে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য মাইগ্রেশন ও ডেভেলপমেন্ট গ্লোবাল ফোরামে যোগ দিতে বাংলাদেশে সফরে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং বলেন এ সময়ে এ সকল বিষয়ে সাফল্য সরাসরি অবহিত হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ গ্রহণের আহবান জানান। জিএফএমডি’র বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ পরবর্তী মেয়াদের জন্য জামার্নের কাছে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। জামার্ন চ্যান্সেলর খুব অল্প সময়ে বাংলাদেশে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন। এ ঘটনাকে তিনি বিপ্লব হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসার দাবিদার। তিনি বৈশ্বিক উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে এবং নিরাপদ মাইগ্রেশনে মাইগ্রেশন ও উদ্বাস্তু ইস্যুতে কাজ করতে জার্মান দলের সঙ্গে বালাদেশের সহযোগিতা কামনা করেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিদ আনসারির মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সন্ত্রাস দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে বিশেষ করে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। হামিদ আনসারি আগামী অক্টোবর মাসে ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিমস্টেক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান ও ১৯৯৬ সালে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পাশাপাশি বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার রাজী থাকলে সেদেশের সমস্যার সমাধানে সহায়তাকল্পে তাঁর এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেদারল্যান্ডেসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গেও বৈঠক করেন। এসময় তারা ডেল্টা প্লানের সফল বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। ডাচ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেন যে তাঁর সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে থাকবে। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, শেখ হাসিনা আসেম সম্মেলনের প্লানার বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে সকল বিষয়ে বিশেষ করে কাউন্টার টেরোজিম ও উগ্রজঙ্গিবাদ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। বৈঠকে তিনি সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রজঙ্গিবাদের শেকড় খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, এই অশুভ শক্তি মূল হোতাদের খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে তাদের নির্মূল করতে এর পৃষ্ঠপোষক, পরিকল্পনাদাতা, অর্থদাতা, অস্ত্র সরবরাহকারী ও প্রশিক্ষকদেরও খুঁজে বের করতে হবে। শেখ হাসিনা পুনরুল্লেখ করেন যে জঙ্গিবাদের কোন অঞ্চল ও কোন সীমানা নেই। জঙ্গিরা কেবল জঙ্গিই। প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার এই দুশমনদের মোকাবেলায় অত্যন্ত কঠোরহস্ত। তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কমিউনিটি ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। আসেম নেতৃবৃন্দ তার এই বক্তব্যের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।