
নয়া আলো ডেস্ক- সম্মেলনকে ঘিরে সরগরম আওয়ামী লীগ। স্মরণকালের বৃহৎ ও জাঁকজমকপূর্ণ সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে দেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি। সম্মেলন ঘিরে তৈরি হওয়া চাঙ্গাভাব আগামী নির্বাচনের জন্য উজ্জীবনী শক্তি হিসেবে দেখছেন নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতারাও চাইছেন সম্মেলনের পর নতুন নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়বেন নির্বাচনী বার্তা নিয়ে। সম্মেলনের মাধ্যমে দলের সাংগঠনিক স্থবিরতাও কেটে যাবে বলে মনে করছেন নেতারা। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের পরে হচ্ছে এবারের সম্মেলন। সর্বশেষ কাউন্সিলের পর যথাসময়ে সব জেলা ও উপজেলা সম্মেলন হয়নি। জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত প্রায় সব জেলা ও উপজেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। এজন্য শেষ মুহূর্তে হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা দৌড়ঝাঁপ করেছেন দেশজুড়ে। দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, নির্বাচন মাথায় রেখেই করা হয়েছে তৃণমূলের কমিটি। এবার জাতীয় সম্মেলন ঘিরে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সর্বত্র চাঙা আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এখন এ নিয়ে আলোচনা। দলের শীর্ষ পর্যায়ে কোনো পরিবর্তন আসছে না- এমন ধারণা বদ্ধমূল আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কারা আসছেন। বিদায়ী কমিটির নেতাদের কার কি ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে এ নিয়ে চলছে নানা হিসাব নিকাশ। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সম্মেলন থেকে চূড়ান্ত বার্তা আসছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, কাউন্সিলের পর দলের পরবর্তী টার্গেট হবে নির্বাচন। দলের নেতৃত্ব নির্বাচন এবং প্রতি ক্ষেত্রে নির্বাচনকেই গুরুত্ব দেয়া হবে। দলের নেতারা মনে করছেন এতদিন নানা কারণে দলীয় কর্মকাণ্ডে যে স্থবিরতা ছিল নতুন নেত্বত্ব এলে তাও কেটে যাবে। একই সঙ্গে নতুন নেতৃত্ব দলকে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করে তুলতে পারবেন। সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শনি ও রোববার দু’দিন কাউন্সিলের কার্যক্রম চললেও ইতিমধ্যে অনেক কাউন্সিলর ডেলিগেট ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সম্মেলনের বিভিন্ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন, অংশ নিচ্ছেন। এদিকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেষ রেহানা, তার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা হোসেন পুতুল দলের সম্মেলনে কাউন্সিলর হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে ভূমিকা রাখবেন এমনটা প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে বিষয়টি কাউন্সিলর এবং দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
এদিকে দলের পরবর্তী কমিটি নিয়েও জোর আলোচনা রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কে হবেন দলের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক এ নিয়েও আলোচনা রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। তবে নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করছেন সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিকল্প নেই। এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য সেরকম কোনো নেতা নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ এ পদে পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নাম আলোচনায় আছে। যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কঠোর পরিশ্রম করে তিনি ইতিমধ্যে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। একই সঙ্গে দলীয় কার্যক্রমেও তিনি সক্রিয়। দেশের সর্ববৃহৎ উন্নয়ন অবকাঠামো পদ্মা সেতু নির্মাণেও তিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ পদে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নাম সামনে আসছে। সৎ, পরিশ্রমী এবং সজ্জন নেতা হিসেবে তিনি দলের নেতাকর্মীদের মাঝেও জনপ্রিয়। দলীয় সূত্র বলছে, পর পর দুই বার সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা সৈয়দ আশরাফ বরাবরই বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিলেন। সততা ও বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে তিনি দলের শীর্ষ পর্যায়ে সব সময়ই আস্থার পরিচয় দিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে তার বিকল্প কোনো নেতার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চিন্তা নেই। অতীতে দলের সঙ্কট মুহূর্তে সৈয়দ আশরাফ কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেছেন। শীর্ষ পর্যায়ে অনেক নেতা নানা বিতর্কে জড়ালেও তিনি ছিলেন বিতর্কের বাইরে। তাই সামনের দিনে দলের জন্য তিনি আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো নেতাই প্রকাশ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। বড় রদবদল না হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে কিছুটা পরিবর্তন আসছে। এক্ষেত্রে প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সম্পাদকমণ্ডলীতে নতুন কারা আসছেন, এ নিয়ে কৌতূহল বেশি নেতাকর্মীদের মাঝে। দলীয় সূত্র বলছে, প্রেসিডিয়ামে বেশ কয়েকজন নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। আর সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন নেতার পদোন্নতি হচ্ছে। বাদ পড়তে পারেন দু’একজন। সেই স্থলে আসবে নতুন মুখ। গতকাল সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে শক্তিশালী নেতৃত্ব আসবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের প্রতি আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারও ব্যক্ত হবে।
এদিকে দলের গঠনতন্ত্রের সংশোধনী ও ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে গতকালের কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকে। কাউন্সিলের আগে এটিই ছিল দলের বর্তমান কমিটির শেষ বৈঠক। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কিছু পরিবর্তন এসেছে গঠনতন্ত্রে। সম্মেলনের দিন কাউন্সিলের ভোটে গঠনতন্ত্র চূড়ান্ত হবে। আর ঘোষণাপত্রে থাকছে দলের পরবর্তী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা। ২০৪১ সালকে লক্ষ্য ধরে দেশের উন্নয়ন রোডম্যাপও থাকছে এ ঘোষণাপত্রে। সম্মেলনে পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে দিকনির্দেশনা এবং নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে সম্মেলনের ঘোষণায়। সম্মেলন পরবর্তীতে নির্বাচনকেই দলের পরবর্তী লক্ষ্য হিসেবেই নির্দেশনা দেয়া হবে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। নেতারাও মনে করছেন পরবর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হচ্ছে এই কাউন্সিলের মাধ্যমে। এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ জানিয়েছেন, যেহেতু এই কাউন্সিলের পর যে কমিটি আসবে তারাই আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় দলের দায়িত্বে থাকবেন তাই নির্বাচন মাথায় রেখেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে।
সম্মেলনে জামায়াত ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিত্বশীল দলের প্রতিনিধিদেরও। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি দেশের রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রতিবেশী ভারতের ক্ষমতাসীন দলসহ শীর্ষ রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন। তবে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বারবার বিতর্কিত অবস্থান প্রকাশ করায় পাকিস্তানের কোনো রাজনৈতিক দলকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সম্মেলনকে ঘিরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও প্রাণচাঞ্চল্য বিরাজ করছে। নগরীর অলি-গলিতে শোভা পাচ্ছে সম্মেলনের ব্যানার ও পোস্টার। প্রধান প্রধান সড়কগুলো সাজানো হয়েছে রঙিন সাজে। ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে পদ প্রত্যাশী নেতারাও নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এদিকে শুধু রাজধানীতেই নয়, সারাদেশে দলের পদ প্রত্যাশা করেন এমন নেতারা নানা ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন সম্মেলনকে ঘিরে। পোস্টার, ব্যানারে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন এবারের সম্মেলন হবে স্মরণকালের মধ্যে দলের সবচেয়ে বড় সম্মেলন। এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে দেশে এবং দেশের বাইরে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ কতোটা সংগঠিত তারও একটি বার্তা পৌঁছে যাবে।