সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
দেশে চলমান হত্যাকাণ্ডে সরকারের অবস্থা জানানো পাশাপাশি মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে শক্ত অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেন ক্ষমতাসীন দলের এই মুখপাত্র।
রাবি অধ্যাপকের পর ঢাকায় ঘরে ঢুকে সমকামী অধিকারকর্মী ও নাট্যকর্মীকে কুপিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
আশরাফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বিশেষ করে ব্লগার বা সাংস্কৃতিককর্মীদের উপর আঘাত হচ্ছে। এটা সরকার সহজে নেবে না। সরকার কারো উপর আক্রমণ করে নয়, আইনি প্রক্রিয়ায় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কেউ বাঁচতে পারবে না।’
সোমবার হত্যাকাণ্ডের স্বীকার ইউএসএআইডির কর্মকর্তা জুলহাজ মান্নান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনির খালাত ভাই। তার বাড়িতে নিহত অন্যজন মাহবুব রাব্বী তনয় নাট্যকর্মী।
তার দুদিন আগে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই মাসে ঢাকায় একইভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ।
গত বছরও বেশ কয়েকজন লেখক, প্রকাশক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের পাশাপাশি শিয়া, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের পাশাপাশি বিদেশি ও যাজক-পুরোহিতরাও আক্রান্ত হন।
এসব হত্যাকাণ্ডের পর আইএস কিংবা আল কায়দার নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও তা ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়ে পুলিশ বলছে, বাংলাদেশি জঙ্গিরাই এসব ঘটাচ্ছে।
খুনি ধরতে ব্যর্থতার সমালোচনার পাশাপাশি বিএনপি বলছে, ‘ভোটারবিহীন নির্বাচনের’ মাধ্যমে গঠিত সরকারের ‘আস্কারায়’ একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটে পরিস্থিতি নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছে।
বিএনপির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আশরাফ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিএনপি তো এখন ক্ষমতায় নেই। সময় আছে অনেক, তারপরও তারা রাজনীতিতে সময় দেয় না। মাঝে মাঝে আসে, একদিন দুই দিন কথা বলে। তিন মাস, চার মাস খবর থাকে না। বিএনপিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সরকারের ব্যর্থতা কিসের?’
আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সংগঠন ওলামা লীগের নানা বক্তব্যে জঙ্গিরা হামলার উসকানি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠার বিষয়টিও নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন আশরাফ।
উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (মাহাবুব-উল আলম হানিফ) ক্লিয়ার করেছেন, ওলামা লীগ আমাদের সহযোগী সংগঠন নয়। তারা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিলে এটা তাদের বিষয়। এখন অনেকেই আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে,’ ওলামা লীগের নেতাদের আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতার পরিচয় দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন তিনি।
ধানমণ্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন আশরাফ।
ভোট জালিয়াতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনা আগেও ঘটেছে, এখনো কিছু ঘটছে। তবে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যেটা জাতির জন্য চিন্তার কারণ কিংবা চ্যালেঞ্জ হবে। নির্বাচন শেষ হলে এটা মানুষ ভুলে যাবে।’
এবারের ইউপি নির্বাচন ‘সবচেয়ে বেশি শান্তিপূর্ণ’ হচ্ছে দাবি করে এই মন্ত্রী বলেন, ‘আগে মারামারি-কাটাকাটি সারাদেশেই ছিল। এবার সেটা হয়নি। রাজনৈতিক শৃঙ্খলার কারণে সহিংসতা মিনিমাম পর্যায়ে নেমে এসেছে।’