
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টারঃ- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, সাধারণ মানুষ ধোকাবাজির শিকার হচ্ছে। এখন আমরা সবাই অসহায়। খুবই কষ্টে আছি। বিচারপতিরাও অসহায়। দেশে স্বৈরশাসন চলছে অথচ আমাদের পুলিশ আমাদের আর্মি তারা কোন কথা বলে না। আমরা যত কথা বলছি দেশের অবস্থায় ততই খারাপ হচ্ছে। আওয়ামী লীগে আপা যা বলেন তাই আর বিএনপিতে ম্যাডাম যা বলেন তাই চলছে। মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সুবিধা পেয়েছেন তারই এখন কোন কথা বলেন না। বীরমুক্তিযোদ্ধারা ভুলেই গেছেন তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তাদের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য ১৯৭১ সালে আমরা কেউ যুদ্ধ করিনি। গণতান্ত্রিক দেশকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সেদিন যারা যুদ্ধ করেছিল তারা যখন নীরব থাকে তখন সাধারণ মানুষের নীরব কান্না ছাড়া আর কিবা করতে পারেন। ছাত্ররা কোটা নিয়ে রাজনীতি করেনি। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে এসেছে। অথচ আমি দারুনভাবে আশাহত হয়েছি যখন সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের সন্তানদেরকে রাজাকার বলে গালি দিল। শুধু ভারতে গেলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধা হতে গেলে দেশপ্রেমিক হতে হয়। সাংবাদিক ও আইনজীবীরা দলীয় কর্মীর মত আচরণ করলে তখন মানুষ কোথায় গিয়ে বিচার চাইবে আর সাধারণ মানুষের হয়ে কেই বা লিখবে। সবাইকে একসাথে জেগে উঠতে হবে। কিন্তু কে জাগাবে ? এখন তো আর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা, মওলানা ভাসানীর মত নেতার অভাব। আমি কোন রাজনীতি করি না। কিন্তু যারা রাজনীতি করেন তারা কি করছেন ?
ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ভিসির বাসভবনে যারা হামলা করেছে তারা সকলেই চিহ্নিত। সরকারই তাদেরকে চিহ্নিত করে ফেলেছে। পুলিশ বলেছে পেশাদাররাই এই হামলার সাথে জড়িত। তাহলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নামে ৪টি মামলা কেন ? অবিলম্বে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের নামে মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় এই কাজটি সুকৌশলে ‘র’ করেছে। তারা আমাদেরকে কখনো স্বস্তিতে থাকতে দেবে না। আমরা কেন তাদেরকে হুজুর হুজুর করবো। তিনি আরো বলেন, আমি বেগম জিয়ার মুক্তি চাই না, ন্যায় বিচার চাই। ন্যায় বিচার পেলে তিনি অবশ্যই মুক্তি পাবেন। জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগে যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন তাদেরকে স্পষ্ট করতে হবে তারা যদি ক্ষমতায় যায় কি কি করবেন। আমরা দেশে গুম-খুন দেখতে চাই না। আমরা চাই গণতান্ত্রিক একটি সুন্দর বাংলাদেশ। যেই বাংলাদেশে সবাই তার অধিকার সমানভাবে ভোগ করবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, কি দিয়ে শুরু করবো জানি না। খালেদা জিয়া যে মামলায় কারাগারে সেই মামলা কখনো একটি সাধারণ মানুষও কারাগারে থাকে না। অথচ ৩ বারের প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারে পাঠিয়ে দিলো বিএনপি কিছুই করতে পারলো না। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা যদি নিম্নে আদালতের স্বাধীনতা দিত তাহলে আজকে বিচারকগণ সরকারের ক্রীড়ানক হয়ে এভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠাতেন না। দেশে আজ সবাই অসহায়। আমার জীবনে এত খারাপ ও ভয়ংকর সরকার দেখিনি। এই সরকার সবকিছুই করতে পারে। নিজেদের ক্ষমতায় রাখার জন্য আরো অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। যা আমরা কেউ চিন্তাও করতে পারছি না। তিনি ছাত্রদের সফল আন্দোলনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য ছাত্র সমাজ জেগে উঠেছিল। তাদেরকে বিভিন্নভাবে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন কিছুতেই তারা তাদের আন্দোলন থেকে সরে আসেনি। আমি বিশ্বাস করি ছাত্ররা তাদের অধিকার আদায় না করে এভাবে নিশ্চুপ থাকবে না। বিগত দিনেও যেকোন আন্দোলনের পিছনে ছাত্র সমাজের বিশাল ভূমিকা ছিল। আজো সেই ভূমিকা ছাত্র সমাজই পালন করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। জাতীয় ঐক্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থে আমি বিএনপি’র সাথে ঐক্য করতে প্রস্তুত। কিন্তু আমার শর্ত আছে। আমার প্রথম শর্ত বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি করা যাবে না। দেশে গুম-খুনের রাজনীতি করা যাবে না। সবাইকে গণতান্ত্রিক অধিকার দিতে হবে। এইটুকু করলেই যেকোন ঐক্যের সাথে আমি যেতে প্রস্তুত আছি।
আদর্শ নাগরিক আন্দোলন’র ২য় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজ ১৫ এপ্রিল’ ২০১৮, রবিবার, সকাল ১১.০০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে “গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন ‘জাতীয় ঐক্য’ : আগামী নির্বাচন কোন পথে?” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আদর্শ নাগরিক আন্দোলন’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো: আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহিল মাসুদ, এনডিপি’র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসা প্রমূখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এড. মো. এজাজ হোসেন, আদর্শ নাগরিক আন্দোলনের সহ সভাপতি এম.জে সৌরভ, এস.এম আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শাহনূর ইসলাম শাহীন, এস.এম কামাল উদ্দিন ইসমাইল, এম. সাইফুল ইসলাম মজুমদার, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মহিউদ্দিন মাহি, সহ-তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো: রিয়াদ হোসেন, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীম আহমেদ, সহ দপ্তর সম্পাদক জিয়াউল হক প্রমূখ।