নয়া আলো ডেস্ক- সাভারে একটি ডেইরি ফার্ম থেকে একই পরিবারের তিন কিশোর শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার শহিদুল ইসলামের মালিকানাধীন প্রান্ত নামের একটি গরুর ফার্ম থেকে লাশগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন, রংপুরের এলাকার জিয়ার ছেলে জীবন (১৪) ও তার ছোট ভাই নাসির (১৫) , এবং তাদের ফুফাতো ভাই শাহাদাত হোসেন (১৫)। এদিকে নিহতের স্বজনেরা জেনারেটরের বিষাক্ত ধোয়া ও অক্সিজেনের অভাবে তিন কিশোরের মৃতু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পুলিশ ও নিহতদের পরিবার জানায়, সাভারের হেমায়েতপুর এলাকার প্রান্ত ফার্মের কাজ করেন জিয়ারুল। এরই সুবাদে সে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে ও বোনের ছেলেকে নিয়ে ওই ফার্মের একটি কক্ষে থাকেন। শুক্রবার রাতের খাবার খেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এরই পাশের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন তার দুই ছেলে ও এক ভাগ্নে। পরে শনিবার সকাল ১০টা অবদি তারা ঘুম থেকে না উঠায় তাদের সন্দেহ হয়। পরে এক পর্যায়ে ওই কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে তিন কিশোরের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। খবর পেয়ে সাভার মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে নিহতদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহত জীবনের মা নাসরিন আক্তার বলেন রাত ১১টার দিকে কাজ শেষে ওরা তিন ভাই এক সাথে পাশের কক্ষে ঘুমাতে যায়। তাদেরকে কারা এভাবে মারলো তা আল্লাহই জানেন। তিনি আরও জানান সকাল ১০টায় ঘুম থেকে না ওঠায় ডাকতে গিয়ে তাদের লাশ দেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে সাভার মডেল থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যম কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছার পূর্বেই দ্রæত তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।স্বজন, রিনা বেগম ও জিয়া অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার রাতে প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ায় তাদের ফার্মে বিদ্যুৎ ছিল না। আর তিন কিশোর ওই জেনারেটরের কক্ষেই ঘুমিয়েছিলেন। এছাড়াও বৃষ্টির কারনে তারা কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে কেউ কেউ ধারনা করছে রাতভর জেনারেটর চলার কারনে বিষাক্ত ধোয়ায় কিশোরদের মৃত্যু হয়। এছাড়াও ওই কক্ষে বাহির থেকে আলো-বাতাস প্রবেশের কোন সরু পথ ছিল না। স্বজনরা এছাড়াও অভিযোগ করেন কক্ষের ভেতরে থাকা জেনারেটরের ধোয়া বের হওয়ারও কোন ব্যবস্থা না থাকায় জেনারেটরের ধোয়া থেকেই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন। এদিকে হেমায়েতপুর এলাকার প্রান্ত ডেইরী ফার্মের পার্শ্ববর্তী ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডক্টস লিমিটেড নামক একটি কারখানার নিরাপত্তা প্রহরী মাহফুজ বলেন, শুক্রবার রাত নয়টার পর থেকে তাদের এলাকায় বেশ কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। এসময় প্রান্ত ডেইরী ফার্মের ভেতর জেনারেটর চালু ছিল বলে তিনি জানান। এব্যাপারে সাভার পল্লীবিদ্যুৎ ৩ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রচন্ড বৃষ্টির কারনে হেমায়েতপুর এলাকায় রাত নয়টার পর থেকে বেশ কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল। তবে জেনারেটর কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলে জেনারেটর থেকে বের হওয়া ধোয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের কারনে অক্সিজেনের ঘাটতি হতে পারে। আর সে কারনে যে কোন মানুষের মুত্যু হতে পারে বলেও তিনি জানান। এব্যাপারে সাভার মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ বলেন, নিহত তিন কিশোরের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কি কারনে তাদের মৃত্যু হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।