
নয়া আলো ডেস্ক- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সরকার কোন মিথ্যা মামলা দায়ের করেনি। সৎ সাহস থাকলে আদালতে গিয়ে যেনো তিনি মামলা মোকাবিলা করেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলাই তার ব্যক্তিগত দুর্নীতি এবং আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা সম্পর্কিত। প্রধানমন্ত্রী বুধবার তাঁর সরকারি বাসভবণ গণভবনে জাতীয় শ্রমিক লীগের ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) সব জায়গায় নালিশ করে বেড়ান এসব মিথ্যা মামলা, আমি বলব এখানে কোনটা মিথ্যা। বুকে বল থাকেতো আদালতে গিয়েই প্রমাই করুন।
শ্রমিক লীগের সভাপতি শুকুর মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে-শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ বক্তৃতা করেন ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেখি এতিমের টাকা মেরে খাওয়া লোকজন বলে আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। আপনারা (বিএনপি নেতৃবৃন্দ) আদালতে এসে প্রমাণ করেন, কোনটা মিথ্যা মামলা। মামলা সত্য না মিথ্যা সেটা আদালতে গেলেই (মামলা ফেস করলে ) বোঝা যাবে। আপনারা কোর্টেই যেতে চান না, কনটেস্ট করতে চান না। উপরন্ত আদালত থেকে পালান। চোরের মন শুধু পুলিশ পুলিশ। আর যদি সাহস থাকতো, বুকে যদি বল থাকতো- না আমি এ অপরাধ করিনি, তাহলে নিশ্চই সে আদালতে যেত।
২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়ার প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি কোন ভয় পাইনি। কারণ আমি কোন অপরাধ করিনি। তাই মামলা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি আমি আদালতে গিয়ে মামলা ফেস করবো।
মামলাদাতারা সে সময় তাঁর কোর্টে যাবার ক্ষেত্রে উল্টো বিঘœ সৃষ্টি করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ঘাবড়ে গেল। বলল না আপনি আসবেন (আদালতে) না। আমি বললাম- মামলা দিয়েছেন ওয়ারেন্ট ইস্যু করেছেন, কাজেই আমি আদালতে যাব এবং মামলা ফেস করব। এখন আবার বাধা দিচ্ছেন কেন।
তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে ঐ মহিলা (খালেদা জিয়া) আদালতে গিয়ে মামলা ফেস করতেই সাহস পান না। যার একটাই কারণ- এতিমের টাকাতো তিনি চুরি করেছেন। আর এই যে এতগুলো মানুষকে পুড়িয়ে মারলেন। তার হুকুমের আসামীতো তিনিই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা যে হুকুম দিয়েছে-হুকুম দিয়ে দিয়ে যে মানুষ পুড়িয়েছে। আগুনে পোড়া শরির নিয়ে ভূক্তভোগী এখনও অনেকে বেঁচে রয়েছেন, স্বজনহারাদের আর্তনাদ যে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে এগুলো তারা কিভাবে অস্বীকার করবে। তারা (বিএনপি) হুকুম দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারবে আর তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হবে না, কত আহ্লাদের ব্যাপার- আমি সেটাই চিন্তা করি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর মাধ্যমে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত জাতীয় পতাকা রাজাকারদের গাড়িতে তুলে দেয়ায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, যারা এদেরকে মন্ত্রী করেছে, আমার ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে, তাদের বিচারও এই বাংলার মাটিতে হবে।
তিনি বলেন, ঐ সব সাজাপ্রাপ্ত চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী- ভোট চুরি করে এমপি বানানোতেই পরবর্তীতে দেশে ধর্মের নামে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয় এবং ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান ধরা পড়ার মত অপরাধ সংঘটিত হয়।
এ সময় তিনি ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তি সহিংসতা, ২০১৪ এবং ১৫ সালে আন্দোলনের নামে মানুষ পোড়ানো, সহিংসতা জঙ্গি তৎপরতায় নিহতসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের মাটিতে অনুষ্ঠানের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতাদের অনেকেই আজকে বড় বড় কথা বললেও আমরা দেখেছি- ২০০১ সাল থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বাংলাভাইদের যত রকম মদদ দেয়া, শেল্টার দেয়া এমনকি আপরাধ সংঘটনের পর নিরাপদে পালাবার জন্য আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী দিয়ে পাহাড়া দেয়া-সবই তারা করেছে। সারাদেশে ৫শ’ স্থানে বোমা হামলা-এসবের বিচার হতে হবে। পাশাপাশি আমরা যে উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো শুরু করেছি সেগুলোকে অব্যাহত রাখতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ শ্রমিকদের স্বার্থ দেখে। আমাদের রাজনীতিই হচ্ছে তাদের জন্য। কারণ আমরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারি দল। কাজেই আমরা ক্ষমতায় আসলেই সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশের জিডিপি বতমানে ৭ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, এতো এমনি এমনি আসেনি। আমরা সঠিকভাবে দেশকে পরিচালনা করছি বলেই এটা অর্জন সম্ভবপর হয়েছে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের কাউকে অবহেলার চোখে দেখা যাবে না। মনে রাখতে হবে সে কাজ করে, তারও মর্যাদা আছে। তাঁর কাজের গুরুত্ব আমাদের দিতে হবে। আমি খাবো কেউ খাবে না, এই নীতি আমাদের জন্য নয়।
আমাদের রাজনীতিটাই হচ্ছে এদেশের সাধারণ মানুষ, একবারে নিন্মে পদে থাকা মানুষদের ভাগ্যোন্নয়ন। তাদের উন্নত জীবন দেয়া এবং তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে সেই ব্যবস্থা করা । শ্রেণী পেশায় যারা অবহেলিত ছিল, যেমন বেদে, হরিজন-তাদেরকেও আমরা একটা মর্যাদা দিয়েছি। কারণ তারাও মানুষ,তাদের কর্মের কারণে খাটো করে দেখার উপায় নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নীতি যদি ঠিক থাকে আর সঠিক পদক্ষেপ যদি নেয়া যায়, তবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আমরা সেটি করে দেখিয়েছি।’
সকলকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে নিষ্টার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সংগঠনটাকে শক্তিশালী করুন। কারণ সংগঠনটা সবথেকে বেশি দরকার। সমস্ত সেক্টরেই যেন আমাদের সংগঠনটা সক্রিয় থাকে সে বিষয়ে জোর দেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্টদের আহবান জানাচ্ছি।