৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার, ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-




সিরাজগঞ্জে একই স্কুলে পিতা দপ্তরি, পুত্র শিক্ষক

প্রেস বিজ্ঞপ্তি।

আপডেট টাইম : ফেব্রুয়ারি ১০ ২০১৮, ২৩:২৫ | 741 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

মোঃ জহির রায়হান,সিরাজগঞ্জ থেকেঃ- সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একসময়ের ছাত্র ফজলুল হক, আর তার ছেলে আলামিন হোসেন বর্তমানে চাকুরী করেন ঐ বিদ্যালয়েই। একই বিদ্যালয়ে বাবা ফজলুল হক দপ্তরি এবং তার ছেলে শিক্ষক। ফজলুল দপ্তরি কখনো কল্পনাও করেনি যে তার কর্মস্থলেই পুত্র শিক্ষক হিসেবে চাকরি করবে। এটা শুধুই শিক্ষা লাভের কারণেই হয়েছে। তাই তিনি বহুকষ্টে ছয় ছেলে-মেয়ের মধ্যে পাঁচজনকেই শিক্ষিত করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থাভাবে লেখাপড়া সে রকম করতে পারেনি এনায়েতপুর থানার রুপসী গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান ফজলুল হক। তাই অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া চলাকালে অভাবের সংসার চালাতে ১৪ বছর বয়সে ১৯৭৮ সালে এনায়েতপুর ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দপ্তরির চাকরি নিতে হয়েছে। তাও মাত্র ১২০ টাকা মাসিক বেতনে বহু বছর চলার পর বিয়ে করেন। তারপর বিদ্যালয়ের নিষ্ঠাবান শিক্ষক আব্দুল মতিনের সহযোগিতায় লেখাপড়া চালিয়ে এই বিদ্যালয় থেকেই এসএসসি পাস করা। এর মধ্যে ফজল দপ্তরির সংসারে নতুন অতিথি হয়ে আসে দুই পুত্রসন্তান। বর্তমানে বিদ্যালয়ের উত্তর পাশেই ছোট্ট একটু জায়গায় তার বাবা, মা, স্ত্রী এবং তিন ছেলে, তিন মেয়েসহ ১০ জনের সংসার। বড় ছেলে আলামিন হোসেনকে বিএ পাস করিয়েছেন। মেজ ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে এসএসসি পাস করিয়ে অর্থাভাবে তার লেখা-পড়া চালাতে পারেননি। তাকে করতে হচ্ছে তাঁত শ্রমিকের কাজ। মেয়ে ফরিদা খাতুন বেলকুচি মহিলা কলেজে বি.কমে অধ্যয়নরত, তাকলিকা খাতুন এই বিদ্যালয়েরই নবম শ্রেণির ছাত্রী, আর লিপি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। আর সবার ছোট ছেলে আলমগীর হোসেনকে কিন্ডার গার্টেন আইসিএল স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াচ্ছেন।
মাত্র সাত হাজার সাতশ’ টাকা বেতনে নিরন্তন কষ্টে তার ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৫০ বছর বয়স্ক সকলের প্রিয় ফজল দপ্তরি।তবে তার এতো কষ্টের পরে সান্ত্বনা একটাই যে স্কুলে সে দপ্তরির কাজ করছেন ঠিক সে স্কুলে তারই পুত্র আলামিন শিক্ষক। সে ২০০৯ সাল থেকে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক হিসেবে তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনে নিয়োজিত। এ স্কুলে পিতা দপ্তরি, আর পুত্র শিক্ষক হওয়ায় বিষয়টি এনায়েতপুর এবং চৌহালী উপজেলা জুড়ে বেশ আলোচিত। অনেকেই বিদ্যালয়ে বিষয়টি প্রত্যক্ষ করতে এসে হতবাক হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ফজলুল হক দপ্তরি জানান, ছোটবেলায় খুব ইচ্ছে ছিল লেখা-পড়া করা। কিন্তু বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে লেখা-পড়া হয়নি। তাই অল্প বয়সে পড়া বাদ দিয়ে দপ্তরির কাজ নিতে হয়েছে। যখন ক্লাস শেষে বেল বাড়ি দিতাম তখনই মনে হয়েছে আমার কোনো সন্তানকেই লেখা-পড়া থেকে বঞ্চিত হতে দেব না। তাই ছয় সন্তানকে লেখাপড়া চালাতে তাকে ঋণ হতে হয়েছে তিন লক্ষাধিক টাকা। প্রতি সপ্তাহে এ টাকার চড়া সুদ দিতে হচ্ছে। তাই সংসারও চলছে ঢিমেতালে। এতো কিছুর পরও আমি সন্তুষ্ট।
শিক্ষক আলামিন জানান, আমি দপ্তরির ছেলে হিসেবে শিক্ষক হতে পেরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, এলাকাবাসীসহ আমার শ্রদ্ধাভাজন নিজ স্কুলের সকল শিক্ষকের প্রতি চির কৃতজ্ঞ। তবে আমি স্থায়ীভাবে এখানে শিক্ষক হলে আমার বাবার আশা পূর্ণ হতো। আশা করছি কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রতি সদয় হবে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলহাজ আব্দুল বাতেন ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল কাদের মিয়া জানান, এ বিদ্যালয়ের ওরা পিতা-পুত্র দুজনেই ছাত্র ছিল। এখন দুজনেই এখানে কর্মরত। এটা তাদের যোগ্যতা। আমরা সকলেই তাদের সম্মান জানাই।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET