এস, এম. আশরাফুল ইসলাম (জয়) : সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলি ইউনিয়ন কালিদাসগাতিতে কণ্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় অভিযোগে স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাকরে পাষুন্ড স্বামী। স্বামীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার রাজিয়া খাতুন তিনি পাচিলা গ্রামের সলঙ্গা থানার হযরত আলী মাষ্টারে মেয়ে। ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলি ইউনিয়নের কালিদাসগাতি গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে তাঁত ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। নির্যাতনের শিকার রাজিয়া খাতুন জানান, ২০১৩ সালে বাবা-মা পছন্দ অনুযায়ী জহুরুল ইসলামের সাথে ৫০ হাজার টাকা দেমোহর ধার্যে বিয়ে হয়। আমার সুখের কথা ভাবিয়া ছেলের পরিবারে দাবি অনুযায়ী (১,০০০,০০০/) এক লক্ষ টাকা ও ২ ভরি সোনা প্রদান করা হয়। কথা অনুযায়ী ছেলের তাঁতের ব্যবসা সব মিলিয়ে বাবা-মাসহ সকলেই খুশী ছিল। কিন্তু ৫ মাস পর স্বামীর নিষ্ঠুর চেহারা ফুটে। প্রথমে যৌতুকের জন্য নির্যাতন শুরু করে। প্রতিরাতে মারপিট করত। এ অবস্থায় গর্ভে সন্তান আসে। পরীক্ষা করে দেখা যায় কন্যা সন্তান। শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। সন্তান নষ্ট করার জন্য প্রতিরাতে মারপিট করত। কান্নাজড়িত কন্ঠে রাজিয়া খাতুন জানান, বাচ্চা নষ্ট করতে এক পর্যায়ে স্বামী নিষ্ঠুর নির্যাতন শুরু করে পড়ে সন্তান নষ্ট হয়নি। ভেবেছিলাম সন্তানের মুখ দেখে পাল্টে যাবে। কিন্তু কন্যা সন্তান জন্ম নেবার পর আরো নির্যাতন বেড়ে যায়। আমাকে এবং সন্তানের কাপড়-ওষুধ কেনার কোন খরচ দেয় না। চাইলে ফকির মেয়ে বলে নানা ধরনের কটুক্তি ও অত্যাচার-নির্যাতন করত। এ জন্য বাবা-মা প্রতি সপ্তাহে খরচের টাকা নিয়ে আসত। তবুও লোকলজ্জার ভয়ে নির্যাতন সহ্য করে আসছিলাম। কিন্তু একদিন রাতে আমাকে আমার স্বামী জহুরুল ইসলাম, শাশুরী সোনেকা খাতুন ও শশুর গোলজার হেসেন বাতির আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পড়ে প্রতিবেশীর ফোন পেয়ে বাবা আমার কাছে আসে, এবং আমার বাবার কাছে ৮০ হাজার টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয় টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটাতে থাকে। পরে বাবা আমাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে ভর্তি করেন। হাসপাতালে চিকিৎসা থাকাবস্থায় একবারও স্বামী বা তার পরিবারের কেউ খোঁজ নেয়নি। স্বামীর কথা-তুই কেন মেয়ে সন্তান জন্ম দিলি? রাজিয়া খাতুনের প্রশ্ন? কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছি এটা কি শুধু আমার অপরাধ? রাজিয়া খাতুনের বাবা হযরত আলী জানান, ভাল ছেলে ভেবে মেয়েকে সুখের জন্য বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর থেকে নানা কারণেই নির্যাতন শুরু করে। গর্ভবতী অবস্থায় অনেকবার সন্তান নষ্ট করতে চেয়েছিল। শিশু মেয়েটিসহ রাজিয়াকে হত্যা করতে অনেক নির্যাতন করেছে। পড়ে এলাকাবাসি, গ্রাম প্রধান, চেয়ারম্যান দুই পক্ষকে মিমাংশার জন্য চাপদেন কিন্তু আসামি জহুরুল ইসলাম ও পিতা গোলজার হোসেন মানতে নারাজ। প্রতিবেশী আব্দুল হালিম বলেন, রাজিয়াকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে বা হচ্ছে এটি কোন সভ্য সমাজ মেনে নিতে পারে না। নারী সংগঠন ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের রাজিয়া পাশে দাড়ানোর অনুরোধ জানান। ‘কন্যা মানেই বোঝা নয়-করবে তারা বিশ্ব জয়’ ‘নারী নির্যাতন আর নয়’ ‘মানবতার উন্নয়ন-নারীর ক্ষমতায়ন’ সহ নানা শে¬াগানে যখন দেশে কন্যা দিবস-আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে ঠিক সেই নারী কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ায় নিমর্ম নির্যাতন করা হয়েছে। উল্লেখিত বিষয়ে সিরাজগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।