মেহেদী জামান লিজন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিঃ- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯টি বিভাগের বিপরীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা পাঁচ হাজারের অধিক এবং শিক্ষক একশত পঞ্চাশ জন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছরের স্নাতক কোর্স শেষ করতে এখন ৫/৬ বছর আর এক বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স শেষ করতে শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে দুই বছর পর্যন্ত। এ নিয়ম ও সময়কাল যেন উচ্চশিক্ষা শেষ করার অঘোষিত শর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। সেশনজটের যাতাকল থেকে মুক্তি মিলছে না শিক্ষার্থীদের । একে একে সময় চলে গেলেও সময় মতো সেমিস্টার শেষ না হওয়াতে হতাশা ও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ইংরেজি,নাট্যকলা,চারুকলা,ইইই,মানব সম্পদ, অর্থনীতি,বিভাগ এ রয়েছে ১ থেকে ২ বছরের সেশনজট। লোকপ্রশাসন বিভাগে সেশনজট কিছুটা কম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগে সেশনজট থাকলেও তুলনামূলকভাবে বেশি জটে রয়েছে বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল অনুষদের বিভাগগুলো। সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের বিভাগের কোনো কোনো বিভাগে রয়েছে এক থেকে দেড় বছরের সেশনজট। বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইইই বিভাগে এক বছরের জট রয়েছে ২০১২-১৩সেশনে। ২০১৩-১৪ সেশন এর মানব সম্পদ বিভাগ রয়েছে ১ বছরের সেশন জট।
শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষ সংকটসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় সেশনজটের কবলে পড়েছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।কোনো কোনো বিভাগে চলমান ৪টি ব্যাচের জন্য মাত্র ২টি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যা পর্যাপ্ত নয়। এ জন্য কোনো ব্যাচের সঙ্গেই শিডিউল ঠিক রেখে যথাযথভাবে ক্লাস-পরীক্ষা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করতে নিয়ম অনুসারে ৫ বছর সময় লাগার কথা। কিন্তু সেখানে কোনো কোনো বিভাগে ৬ বছরের অধিক সময়েও শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় শিক্ষাজীবন শেষ নিয়ে হতাশা আর অনিশ্চয়তায় আছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি ক্যাম্পাসে সেশনজটের কারণে আত্মহত্যার মত ঘটনাও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেমিস্টার পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের বিধান থাকলেও ৯ মাসেও ফল প্রকাশ করতে পারে না কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষকরা অজুহাত দেখান, এক্সটার্নাল শিক্ষকরা খাতা সময়মতো জমা দেন না। অথচ এক্সটার্নাল শিক্ষকরা খাতা সময়মতো জমা না দিলেও তার জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, সবাই মিলে উৎসব করে আমাদের সেশনজটে ফেলছেন যার ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, আমাদের এডাডেমিক এবং প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে। এতে আমরা চাকরি বাজারেও প্রতিযোগিতায় আসতে পারছি না।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে অর্থনীতি বিভাগ এর এক শিক্ষার্থী বলেন, সেমিস্টারের শুরুতে শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস নেন না। এমনও হয়, ক্লাস শুরু নির্ধারিত তারিখ থেকে আরো প্রায় দুই মাস পরে গিয়ে কেউ কেউ ক্লাস শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান,শিক্ষকদের প্রধান দায়িত্ব হল ক্লাস, পরীক্ষা এবং রেজাল্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা। তবে আমাদের অনেক সহকর্মী এটা নিয়মিত করছেন না, ফলে সেশন জটে পড়ছে ছাত্ররা। আমরা শিক্ষকরা যদি নিয়মিত রুটিন মাফিক ক্লাস নিই এবং শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকে, তাহলে সেশন জটের মতো ভয়াবহ সমস্যার প্রায় সবটাই সমাধান হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড.হুমায়ুন কবীর জানান, সেশনজটের সমস্যা নিরসনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দ্রুত সময়ে সেশনজট সমস্যা থেকে আমরা মুক্ত পাব।