
সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি :- ফেনীর আলোকিত সন্তান, একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য নাট্যচার্য ড. সেলিম আল দীনের নামে সোনাগাজীর মতিগঞ্জে শুরু হয়েছে মাসব্যপী শিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলা। সেলিম আল দীনের নামে মেলা হলেও এখানে তাঁর শিল্পকর্ম প্রদর্শনের নেই কোন আয়োজন। বরং র্যাফেল ড্র এর নামে চলছে কোটি টাকার বাণিজ্য। উপজেলা পরিষদ ও সেলিম আল দীন স্মৃতি পরিষদ যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করছে বলে প্রচার করা হলেও ইতিমধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরণ মেলার সাথে উপজেলা পরিষদের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবী করেছেন। একইভাবে সেলিম আল দীন স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি মাহবুব আলতমাস ও পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালিন সদস্য সচিব সাংবাদিক তানভীর আলাদীন বিতর্কিত এ আয়োজনে সেলিম আল দীনের নাম ব্যবহার করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৭ মার্চ থেকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ডাক-বাংলা রাস্তার পাশে ২৮দিনব্যাপি শিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলা শুরু হয়। মেলায় বিভিন্ন ধরনের পল্যের ৬০টি স্টল স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে কাপড়, জুতা, কসমেটিক্স, হোটেল-রেস্তোরা। এছাড়া রয়েছে প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল খেলা প্রদর্শন। এছাড়া শিশুদের জন্য ট্রেন সহ কয়েকটি রাইড রাখা হয়েছে। মেলার প্রবেশ ফি ধরা হয়েছে ২০টাকা। অবশ্য শিশুদের রাইডগুলোতে চড়তে আলাদা ফি দিতে হয়।
এদিকে যে বিষয়কে ঘিরে সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে তাহলো দৈনিক ‘উল্লাস’ লাকি কূপন। প্রতিদিন সকালে অসংখ্য সিএনজি অটোরিক্সা ও রিক্সায় মাইক লাগিয়ে সোনাগাজীর প্রত্যন্ত এলাকা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন উপজেলা এমনকি আশপাশের উপজেলাসমূহেও কুপন বিক্রি করা হয়। প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল, ফ্রিজ, টিভি, স্বর্ণের কানের দুল, এলইডি টিভি সহ নানা প্রকারের লোভনীয় অফার প্রচার করা হচ্ছে। রাতে একটি প্রাইভেট চ্যানেলে প্রতিদিন সরাসরি প্রচার করা হয় লাকী কূপন ড্র অনুষ্ঠান।
এদিকে উদ্বোধনের পরপরই মেলাটির সাথে উপজেলা প্রশাসনের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবী করেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরন। ফেসবুকে দেয়া স্টাটাসে তিনি উল্লেখ করেন, ‘মেলা আয়োজনে উপজেলা পরিষদ নয়, উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুল আনাম, এর কোন দায় দায়িত্ব উপজেলা পরিষদ গ্রহণ করে না।’
অন্যদিকে সেলিম আল দীনের নামে শিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলা আয়োজন নিয়ে ফেনীর সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেলিম আল দীনের নাম ব্যবহার করে মেলার নামে জুয়ার আয়োজনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নির্বাহী সদস্য ও ফেনী থিয়েটারের প্রধান সমন্বয়কারি এডভোকেট রাশেদ মাযহার।
অপরদিকে মেলার সাথে সেলিম আল দীন পরিবারের কোন সম্পৃক্ততা নেই বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নাট্যাচার্যের নামে মেলা হলেও এখানে তাঁর কোন আলোচনা, নাটক প্রদর্শনী, বইয়ের প্রদর্শনী রাখা হয়নি। মেলায় দায়সারাভাবে শুধুমাত্র একটি সেলিম আল দীন প্যাভিলিয়ন রাখা হলেও লেখক-সংস্কৃতিকর্মীদের দেখা মিলেনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সেলিম আল দীনের ছোট ভাই বোরহান উদ্দিনের নাম প্রচার করা হলেও তিনি উপস্থিত হননি।
পরিবারের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এ মেলার সাথে তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা ইতিমধ্যে সেলিম আল দীনের গ্রামে মেলার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করেছেন। ওই সূত্র আরো জানায়, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে মতিগঞ্জে সেলিম আল দীনের নাম ব্যবহার করে মেলাটি আয়োজন করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৬টি শর্ত সাপেক্ষে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমতিপত্রে কোন ধরনের ‘জুয়া খেলা কিংবা র্যাফেল ড্র’ আয়োজন করা যাবে না বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়। মেলায় মাইক ব্যবহারের পরিবর্তে সীমিত সাউন্ডবক্স ব্যবহার ও রাত ৮টা মধ্যে মেলা শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছে, উল্লেখিত শর্ত মানছে না মেলা আয়োজকরা। রাত ১০টা পর্যন্ত মাইকের শব্দ এলাকাজুড়ে শোনা যায়। এতে করে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় দারুনভাবে বিঘ্ন ঘটছে।
জানতে চাইলে মেলা আয়োজক কমিটির আহবায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জেডএম কামরুল আনাম বলেন, বরেণ্য নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার নিজ এলাকায় সেলিম আল দীন শিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলা আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় কোন লটারি হচ্ছে না। তার মতে, র্যাফেল ড্র যে কোন অনুষ্ঠানেই হতে পারে। একটি মহল মেলাকে ঘিরে জুয়া ও অবৈধ কারবার করতে না পেরে অপ্রপ্রচার ছড়াচ্ছে। তাছাড়া আয়োজক প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদ সম্পর্কে ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক হিরনের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন অন্য কেউ নয়। একইভাবে সেলিম আল দীন পরিষদ প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অনেকের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তবে সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ থাকায় তাকে জানানো হয়নি। এ মেলায় সেলিম আল দীন পরিবারের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে তিনি দাবী করেন।