
আব্দুল আজিজ,হিলি(দিনাজপুর)প্রতিনিধি।
আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি কমেছে । গত অর্থবছর এ বন্দর দিয়ে দৈনিক ৪০-৫০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। কিন্তু চলতি অর্থবছরে বন্দরটি দিয়ে চাল আমদানি অনেক কমেছে।
হিলি স্থলবন্দর শুল্কস্টেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাল আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ক দেয়া ছিলনা। সে সময় বন্দর দিয়ে দৈনিক ৪০-৫০ ট্রাক চাল আমদানি হতো। ওই অর্থবছরের জুনে পণ্যটি আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করে সরকার। পরবর্তীতে দেশে উৎপাদিত ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে শুল্কের পরিমাণ আরো ১০ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। আমদানিতে ২০ শুল্ক ধার্যের পর থেকে বন্দর দিয়ে চাল আমদানি পুরোপুরি কমে গেছে। বর্তমানে মাঝে-মধ্যে দু-এক ট্রাক চাল এ বন্দর দিয়ে আমদানি হয় বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারকরা জানান, ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্কহার দুই দফায় বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। চলতি বছর ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে তা ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা ১ কেজি চালে ১১ টাকা শুল্ক গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ভারতীয় বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় বন্দর দিয়ে চাল আমদানি হচ্ছে না বললেই চলে।
জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে চাল আমদানি কমে যাওযায় মিল মালিকদের কাছ থেকে সরকার চাল কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্যার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলে চাল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বাজারে পণ্যটির সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে চালের দাম। চালের দাম বাড়তির দিকে থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন নিম্নআয়ের মানুষ।
এ সম্পর্কে বাংলাহিলি বাজারের পাইকারি চাল বিক্রেতারা জানান, অধিক শুল্কারোপের কারণে বন্দর দিয়ে ভারতীয় চাল আমদানি বন্ধ রয়েছে। সরকারিভাবে মিলারদের কাছ থেকে এরই মধ্যে বেশি দামে চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ কারণে মিল মালিকরা চাল উৎপাদন করতে পারেননি।
তারা আরো জানান, বর্তমানে বাজারে চালের সংকট রয়েছে। পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দিন দিন দাম বাড়ছে পণ্যটির। তবে সম্প্রতি ফেয়ার প্রাইজের মাধ্যমে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে ১০ টাকা কেজি দরে সরকারিভাবে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে শহরের শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এগুলো শুরু হলে পণ্যটির দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাহিলি স্থল বন্দর ও পার্শ্ববতী হাট বাজারে বর্তমানে স্বর্ণা জাতের চাল পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, যা দুই সপ্তাহ আগে ৩২-৩৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া আটাশ ৩৯ টাকা, মোটা চাল ৩২ টাকা, ঊনত্রিশ ৩৭ টাকা, মিনিকেট ৪২-৪৩ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে এসব চালের দাম এর চেয়ে ৫-৭ টাকা হারে কম ছিল।
হিলি বাজারে চাল কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে আলাপ করলে জানায় দুই সপ্তাহ আগে তারা যে চাল ২৭ টাকা কেজি দরে কিনেছিলেন, একই চাল এখন তারা কিনেছেন ৩৩ টাকা দরে।
পর্যক্ষেক মহলের ধারনা আমদানিতে শুল্কারোপ সরকারি সিদ্ধান্ত। সরকার ভালো মনে করেছে বলেই আমদানি শুল্ক বাড়িয়েছে। আবার প্রয়োজনে কমাতেও পারে। এতে কিছু মানুষ সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সার্বিকভাবে সবার মঙ্গলই হয়।