নয়া আলো-
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সরকার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরও বলেছেন, ইলেকট্রনিক পাসপোর্টসহ নিরাপদ ভ্রমণ ডকুমেন্ট চালুর মাধ্যমে দেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট পদ্ধতি সম্পূর্ণ আধুনিক করে তুলতে সরকার কাজ করছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ডিপার্টমেন্ট অব ইমিগ্রেশন অ্যান্ড পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ ২০১৬ এবং বিভাগীয় ও আঞ্চলিক ১০টি পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
‘পাসপোর্ট নাগরিক অধিকার: নিঃস্বার্থ সেবাই অধিকার’ এই স্লোগান নিয়ে ২৮শে এপ্রিল পর্যন্ত পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ পালিত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাসপোর্ট সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি জেলায় একটি করে পাসপোর্ট অফিস থাকবে এমন অঙ্গীকার করে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন উদ্বোধন করা পাসপোর্ট অফিস জনগণের দোরগোড়ায় উন্নত সেবা পৌঁছে দিতে সহায়ক হবে। নতুন এই পাসপোর্ট অফিসগুলো হলো- ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস এবং আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসগুলো হলো কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালি, ফেনী, মুন্সীগঞ্জ, কুষ্টিয়া, পাবনা ও দিনাজপুর। পাসপোর্টকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসপোর্ট হলো একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতীক। এটি জাতির মর্যাদা বহন করে। হয়রানি ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া প্রতিটি নাগরিকের অধিকার। এ ক্ষেত্রে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিস নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। জনগণের উন্নত সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা শীর্ষক পাসপোর্ট সেবা পক্ষের স্লোগানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
পাসপোর্ট খাতকে সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার ক্ষেত্রে সরকার গত সাত বছরের সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট চালু হওয়ার পরে পাসপোর্ট ইস্যুতে প্রতারণার অবসান ঘটবে। প্রতিনিয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। এই অধিদপ্তরকে ডিজিটাল ডিপার্টমেন্ট হিসেবেই আমরা গড়ে তুলতে চাই। বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে, এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট খাতের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিআইপি এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং ৩ লাখ ২৬ হাজার মেশিন রিডেবল ভিসা দিয়েছে। এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। অনেকে এই পদক্ষেপের সম্ভাব্যতা নিয়ে সন্ধিহান ছিলেন। কিন্তু ডিআইপি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে। এমআরপি নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন যে আমরা সব করে ফেললাম এটা নিয়ে আবার খুব বেশি লেখালেখি করতে দেখি না। যখন একটু খুঁত পায় তখন খুব বড় করে লেখে। কিন্তু যখন সংশোধন বা কাজ করে ফেলি তখন লেখায় একটু কার্পণ্য থাকে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে অনেক হতাশাজনক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। কিন্তু এ প্রকল্পে ব্যাপক সংখ্যক পাসপোর্ট দেয়ার পরও মিডিয়া এই নিয়ে কোনো ইতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বর্তমান সরকারের সময়ে মিডিয়ার অগ্রগতির বিষয়টি উল্লেখ করে মিডিয়া সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি সাফল্যের প্রতিবেদনও প্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান, ডিআইপির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা নগর আদর্শ মহিলা কলেজের নবনির্মিত একাডেমি ভবন উদ্বোধন করেন। এ অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে তিনি নারী শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসংখ্যার অর্ধেক হচ্ছে নারী, এজন্য নারীর ক্ষমতায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সকল ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অর্থনৈতিক মুক্তির প্রধান হাতিয়ার শিক্ষা- এমন বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ বাস্তবতা থেকেই স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। শিক্ষিত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।