১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-




করোনায় ঘর ভাড়া পাব কই? এস এম জহিরুল ইসলাম

নয়া আলো অনলাইন ডেস্ক।

আপডেট টাইম : জুলাই ২৭ ২০২১, ১৮:০৮ | 766 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

ঢাকার খিলগাঁও বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শামসুল আলম। শ্যামবাজার থেকে পাইকারী আদা, পেয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রকম মসল্লা এনে খিলগাঁও বাজার, গোড়ান, তালতলা এলাকায় ফুটপাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে সে আবার পাইকারী বিক্রি করে। সকালে বাকীতে এইসব কাচাঁমাল দোকানীদের কাছে সরবরাহ করে আবার বিকালে সকলের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করে। এই সব দোকানীরা বেশির ভাগই রাস্তার পাশে, ফুটপাতে খোলা জায়গায় ও ভ্যানের উপর ব্যবসা করে। কিন্তু গত দেড় বছর যাবৎ লকডাউনের কারণে ক্ষুদ্র এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ। প্রশাসন তাদের ফুটপাতে ব্যবসা করতে বাধা দেয়। এমনিতেই এলাকার রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় প্রভাবশালী চাঁদাবাজ ও পুলিশকে ম্যানেজ করে এই ব্যবসা পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে ঢাকায় বসবাস করতে হয়। এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় দিয়েই সন্তানদের লেখাপড়া, পরিবারের সদস্যদের পোষাক ও চিকিৎসার টাকা জোগাতে হয়। বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে গত দের বছর যাবৎ ব্যবসা বন্ধ। বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে হাওলাদ করে এনে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। তারা সরকারী কোন সহায়তাও কোথাও থেকে পায় না। এই সব ক্ষুদ্র ব্যবসাীয়দের একটি কথা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটালেও ঘর ভাড়া কোথায় পাব। কে দিবে ঘর ভাড়া। কোথায় পাব টাকা। তারা বলে, কোন বাড়ীর মালিকই ঘর ভাড়া মাফ করেনা। বরং তারা ঘর ভাড়ার জন্য চাপ দেয়াসহ খারাপ ব্যবহার করে থাকে। এইসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন দিশেহারা।
মোঃ জাহিদুর রহমান ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকায় কমিশন ভিত্তিক বিজ্ঞাপন বিভাগে কর্মরত। দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে ঐ বিজ্ঞাপনের মূল্যের উপর কমিশন দিয়েই চলে তার জীবিকা। ঢাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস ও জীবনের প্রয়োজনীয় সব কিছুই নির্ভর করে ঐ বিজ্ঞাপনের কমিশনের টাকার উপর। বিগ দেড় বছর যাবৎ করোনার দীর্ঘ সময় লকডাউন ও স্বাস্থ্য বিধি নিষেধ চলার কারণে বেশিরভাগ সময় সরকারি ও বেসরকরি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এ ছাড়াও করোনা সংকটে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞাপন খাতে কোন বরাদ্দ না থাকাও কাংখিত পরিমাণ বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। ধার হাওলাদ করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করলেও বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে বাসা ভাড়া নিয়ে। বাড়ীর মালিকও কোন রকম ছাড় দিতে নারাজ। এ ছাড়াও একজন সংবাদকর্মী হিসেবে বাংলাদেশ কল্যাণ ট্রাস্ট অথবা কোথাও থেকে কোন প্রনোদনাও পাওয়ার সুযোগ হয়নি তার।
নিপা রহমান। বসবাস করেন ঢাকার গোড়ানে। সংসারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। হাসপাতালের ও ব্যাংকের পুরানো ফার্নিচার কেনা বেচার ব্যবসা করেন তিনি। করোনার কারণে তার এসব ব্যবসা একেবারেই বন্ধ। সরকারি কোন ত্রাণ সহায়তাও তার ভাগ্যে জোটে না। সাহায্যের আশায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অফিসে উকি ঝুকি দিয়েও কোন লাভ হয়নি। তার এখন একটাই চিন্তুা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও বাসা ভাড়া কই পাবে। বাড়ী ওয়ালার একটাই কথা করোনার বুঝিনা আমি ঠিক সময়ে আমার ঘর ভাড়া চাই।
একটি দৈনিক পত্রিকার ফটো সাংবাদিক রুবিনা শেখ। স্ব পরিবারে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন ঢাকার মিরপুরে। স্বামীর ব্যবসা মেটাল ওয়ার্কশপের। গত দেড় বছর যাবৎ করোনা ও লকডাউনের কারণে ব্যবসা একেবারেই বন্ধ। ৮ জনের সংসার চলছে নানা টানা পোড়নে। কিন্তু যতচিন্তা ঘর ভাড়া নিয়েই। রুবিনা শেখ বলেন, তারা সরকারি বা বেসরকরি ত্রাণ সহায়তা কোথাও থেকে পায়নি। সে আরও বলেন, সরকারি ত্রাণ সহায়তার জন্য ৩৩৩ নাম্বারে ফোন দিলে নানা বিরম্বনায় পরতে হয়। তাই সে পথেও যাইনি। শুধু অনেকবার অপেক্ষার পালা কবে আমরা করোনামুক্ত হব।
রিতু বেগম একজন কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। করোনার কারণে সেই চাকুরীও এখন নাই। স্বামীর সামান্য আয়েই কোন রকম চলছে সংসার। কিন্তু মাস শেষে বাড়ী ভাড়া বড় সমস্যা। আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবের কাছ থেকে ধার করে এ পর্যন্ত ঘর ভাড়া চালিয়ে গেলেও সামনের দিকে কি হবে সেই ভাবনায় ঘুম নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনার নানা রকম সাহায্য সহযোগীতা ও প্রণোদনা দিলেও আমাদের ভাগ্যে তা জোটেনি। করোনা পরামর্শক কমিটি লকডাউন, শাটডাউনের পরামর্শ দিলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার কিভাবে জীবন বাঁচাবে ও ঘর ভাড়া দিয়ে শহরে থাকবে সেই পরামর্শ দেয় না।
মহিউদ্দিন গেন্ডারিয়া এলাকার একজন মুদী দোকানী। এই করোনায় বেশিরভাগ সময়ই তার দোকান বন্ধ রাখতে হয়। কিছু দোকান ভাড়া মাস শেষে পরিশোধ করতেই হবে এটা দোকান মালিকের নির্দেশ। বেচা বিক্রি না থাকলে দোকান ভাড়া কিভাবে দিবেন সেই চিন্তায় মগ্ন মহিউদ্দিন। এটা গেল নিম্ন ও মধ্য বিত্তদের কথা। বড় বড় কোম্পানীও দিশে হারা হয়ে পড়েছে। ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ থাকলেও অফিস ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন নিয়মিত চালিয়ে যেতে হচ্ছে। হোটেল, রেস্তোরা, আবাসিক হোটেল, পর্যটন কেন্দ্রের সাথে জড়িত সকলেরই একটাই কথা ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে আছে প্রতিষ্ঠানের ভাড়া পরিশোধ করবো কিভাবে। অনেক গণমাধ্যম মালিকরাও চিন্তিত বিজ্ঞাপন সংকটে প্রতিষ্ঠানের ভাড়া নিয়ে।
ভুক্তভোগীদের অভিমত এ বিষয়ে সরকারের একটি নির্দেশনা থাকা দরকার। যেভাবে করোনা সংকটকালে ভাড়াটিয়ারা মালিকদের অনুকম্পা পেতে পারে।
লেখক
এস এম জহিরুল ইসলাম
চেয়ারম্যান
রুর‌্যাল জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন (আরজেএফ)
Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET