৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার, ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • মুক্তমত
  • একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটে প্রার্থী জট ও কিছু কথা




একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জোটে প্রার্থী জট ও কিছু কথা

Khorshed Alam Chowdhury

আপডেট টাইম : ডিসেম্বর ০২ ২০১৮, ১১:১৬ | 1287 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

মোঃ এমদাদ উল্যাহ-
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে সব রাজনৈতিক দল। গ্রামের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। কে হবে-আলোচিত এই নির্বাচনে এমপি। কোন দল গঠন করবে ‘সরকার’। এমন অনেক কথাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে-চায়ের দোকানে। সুষ্ঠুভাবে ভোট দেয়া নিয়ে ভোটাররা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বারবারই বলছেন-নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে ভোটাররা কোন সংঘাত চায় না। নির্বাচন কমিশনের কাছে তাদের দাবি-একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ভোটে বিজয়ী হয়ে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, ভোটারদের কোন সমস্যা নেই। কারণ-সংঘাতময় নির্বাচন দেশে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করবে। এরই মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে মহাজোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে প্রার্থী জট দেখা দিয়েছে।
গত ২৮ নভেম্বর বুধবার মনোনয়ন পত্র জমা দানের শেষ দিনে ২৬৪ আসনে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের ২৮১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২৯৫ আসনে বিএনপির জমা দিয়েছেন ৬৯৬ জন প্রার্থী। বিএনপিতে দ্বৈত প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রার্থী বাতিল হলে বিকল্প প্রার্থী রাখা হয়েছে দাবি করেছে বিএনপি। ৩৬ আসনে নেই আ’লীগের প্রার্থী। পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রার্থী নেই। ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে পাওয়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তথ্য অনুসারে রিটার্নিং অফিসারদের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন ৩ হাজার ৬৭ জন প্রার্থী। রাজনৈতিক দলের প্রার্থী দুই হাজার ৫৬৯ জন। এর মধ্যে আ’লীগের ২৮১, বিএনপির ৬৯৬, জাতীয় পার্টির ২৩৩, এলডিপির ১৫, জাতীয় পার্টি জেপির ১৭, সাম্যবাদী দলের তিন, সিপিবির ৭৭, গণতন্ত্রী পার্টির ৮, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ মোজাফফর) ১৮, ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ৩৭, জাসদের ৫৩, জেএসডির ৫১, জাকের পার্টির ১০৮, বাসদের ৪৯, বিজেপির ১১, গণফোরামের ৬১ ও তরীকত ফেডারেশনের ২০ জন রয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ২৬, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ৪৯, এনপিপির ৯০, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ১৫, গণফ্রন্টের ১৬, বাংলাদেশ ন্যাপের চার, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩, ইসলামী ফ্রন্টের ২৮, কল্যাণ পার্টির ৫, ইসলামী ঐক্যজোটের ৩২, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১২, বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের ২৯৯, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ২১, জাগপার ছয়, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ৩০, খেলাফত মজলিসের ১২, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের ১৭, মুক্তিজোটের এক ও বিএনএফের ৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই এবং ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন পার হলেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রকৃত সংখ্যাটি জানা যাবে। এরপরই জানা যাবে-কোন জোট থেকে কে নির্বাচন করবেন। আর ভোটাররা তাদের যোগ্য প্রার্থী চয়েজ করবেন। (তথ্যসুত্র; কালের কণ্ঠ)।
মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির(এরশাদ) মনোনয়ন বি তরা দল ছাড়তে শুরু করেছেন। ক্ষুব্ধ এসব নেতার কেউ কেউ এরই মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। কেউ রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার কথা বলেছেন। আবার কেউ নিষ্ক্রিয় থাকবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপিতে যোগ দেওয়া জাতীয় পার্টির নেতা রোকন উদ্দিন বাবুল লালমনিরহাট-২ আসনের মনোনয়নও পেয়েছেন। এমনকি মনোনয়নবি তদের একটি অংশ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর করে। এরপর দলের নেতারা পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রুত অফিসে তালা লাগিয়ে দেন। মহাজোটের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ৪৫ আসনের ব্যাপারে জাতীয় পার্টির সমঝোতা হয়েছে বলে দলটির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। এ নিয়েই মুলত দলে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার কথা থাকলেও নেতাকর্মীদের তোপে তা করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগ উঠেছে-পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের।
সংসদ নির্বাচনকে সংঘাতমুক্ত ও স্বাভাবিক করতে আগামী ১৫ ডিসেম্বরের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে নামছে সেনাবাহিনী। এমনই তথ্য দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে তিনি বলেন, নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে দায়িত্ব পালন করতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি। বিনা কারণে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কারো ওপর খবরদারি বা হয়রানি করা যাবে না। নতুন করে কোনো মামলা দায়ের করা যাবে না।(তথ্যসুত্র; দেশসংবাদ)।
সম্প্রতি পুলিশের করা পুলিশের করা ‘গায়েবি’ মামলায় জামিন নিতে হাইকোর্টে বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের ভিড় বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের জন্য আবেদন করেন। এর মধ্যে নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, গত দুই মাসে আটপাড়া ও কেন্দুয়া থানায় নাশকতার আটটি মামলা করে পুলিশ। এতে দুই উপজেলার বিএনপির তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় যেসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বৃহস্পতিবার ওই আটটি মামলায় হাইকোর্টে পৃথক জামিন আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। (তথ্যসুত্র; যুগান্তর)।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক পড়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে মনোনয়নপত্র জমাদান পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন প্রার্থীরা। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপিরা বিধি লঙ্ঘন করে শত শত নেতাকর্মী সাথে নিয়ে মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের আচরণবিধি লঙ্ঘনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে ভোটারদের মধ্যে। এসব বিষয় দেখেও না দেখার ভান করছে নির্বাচন কমিশন। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব ঘটনা ছবিসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও তা মানতে নারাজ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। ২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে সারা দেশে কোথাও কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের সাথে পাঁচ-সাত সমর্থক মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছিলেন। দলীয় কর্মী এবং সমর্থকেরা মূলত বাইরে অপেক্ষা করেছেন। সেটিকে শোডাউন বলা যাবে না।
অন্য দিকে বিরোধী দল সমর্থিত একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ না করার ঘটনাও ঘটেছে। এতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মনোনয়নপত্র জমা নেয়ার শেষ দিন বুধবার রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র জমা নেয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তা। সকালে গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক এনামুল হাবীবের কাছে জমা দেয়ার জন্য নিয়ে যান দলীয় নেতারা। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র জমা নিতে টালবাহানা শুরু করেন। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে শেষ সময় পর্যন্ত মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। (তথ্যসুত্র; নয়াদিগন্ত)।
নির্বাচন বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রার্থীদের প্রথম থেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন চলছে। তাহলে ভোটের দিনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া একেবারেই অযৌক্তিক নয়। এমন চলতে থাকলে মানুষ নির্বাচনের প্রতি অনীহা দেখাতে পারে। এ ছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিরপেক্ষ না হয় তাহলে অর্থবহ নির্বাচন হবে না। তবে-নির্বাচন কমিশনার বলছে, কোন আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার অধিকারের প্রতি মুল্যায়ন করেই নির্বাচন কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী হিসেবে প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবে। ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সংঘাত এড়িয়ে চলবে-এমনই আশা ভোটারসহ সকলের।
লেখক; সাংবাদিক।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি- আলহাজ্ব আবদুল গফুর ভূঁইয়া,সাবেক সংসদ সদস্য, প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

 

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত।

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET