
খাল পুনঃখননের মাটি ভেঁড়িবাঁধের উপর রাখার অজুহাত্বে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা- সমরসিংহ ভেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়নের সরকারি গাছ কাটার মহোৎসব শুরু হয়েছে। টেন্ডার ছাড়াই স্থানীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের সভাপতির নেতৃতে শ্রমিকরা ভেড়িবাঁধের একপাশের (রিভার সাইডের) কয়েকশত গাছ কেটে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের অধীনে ২০১০-১১ অর্থবছরে উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সমরসিংহ পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার পাউবোর ভেড়িবাঁধের দু’পাশে সামাজিক বনায়ন করার আবেদন করেন ।
তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা বন বিভাগের সঙ্গে আবেদনকারী সমিতির পরিচালনা কমিটি সামাজিক বনায়নের চুক্তি সম্পাদন করে বন বিভাগের অর্থায়নে পৃথক তিনটি সমিতির উদ্যোগে ওই বছরের জুন মাসে ভেড়িবাঁধের দু’পাশে শিডলিং ১৪ কিলোমিটারে বিভিন্ন প্রজাতির ১৪ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এক কিলোমিটার ভেড়িবাঁধে ৪ শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছে সুবিধাভোগী কয়েকজন সদস্য। উপজেলার ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সালথা পর্যন্ত বেড়িবাঁধের একপাশের (রিভার সাইডে) শুধু গাছের গোড়া পড়ে আছে। এবং কাটা গাছের অধিকাংশ গোড়াগুলো আমানতগঞ্জ-শশিকর খাল পুনঃখননের মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি জানান, ভেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়নের সহ¯্রাধিক রেন্ট্রি, মেহগনি ও আকাশমনি গাছ কেটে, কিছু গাছ ভেড়িবাঁধের আশেপাশে রাখা হয়েছে। গৌরনদীর ২ বন কর্মকর্তার যোগসাজশে সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় আ’লীগ নেতা সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকির অধিকাংশ কাটা গাছ বিক্রি করে ৩ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এদিকে সামাজিক বনায়নের একটি সমিতির সভাপতি ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি কামাল ফকির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের না জানিয়ে ঠিকাদার আমানতগঞ্জ-শশিকর খাল পুনঃখননের মাটি রাখার ফলে এক কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের গাছ মাটি চাপায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি (কামাল) শ্রমিক দিয়ে ক্ষতিপ্রস্ত গাছগুলো কেটে ৫টি লডে রেখেছি। ৬ শত মন লাকড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের মজুরির টাকা দেই।
অপরদিকে গৌরনদী বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার সেলিম আহম্মেদ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “৬৪ জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল এবং জলাশয় পুনঃখনন (১ম পর্যায়)” প্রকল্পের আওতায় গৌরনদীর আমানতগঞ্জ থেকে কালকিনির শশিকর পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের কাজ চলছে।
ভেড়িবাঁধের উপর খাল খননের মাটি রাখার কারণে মাটি চাপায় ক্ষতিগ্রস্ত কিছু গাছ সুবিধাভোগী সদস্যরা কেটে হেফাজতে রেখেছে। খাল পুনঃখননের মাটি ভেড়িবাঁধের ওপর রাখার জন্য ভেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়নের গাছ অপসারণের ব্যবস্থা করার নিমিত্ত্বে মাদারীপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসিয়াল চিঠির প্রেক্ষিতে বরিশাল পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সম্প্রতি বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে অফিসিয়াল টিঠি দেন। চিঠি’র পরিপ্রেক্ষিতে ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে সমরসিংহ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের শিডলিং ১৪ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধের রিভার সাইডের গাছগুলো টেন্ডারের জন্য মার্কিং করা হচ্ছে। ভেড়িবাঁধ থেকে কাটা ৫ লডগাছ ও মার্কিং করা গাছগুলো চলতি মাসেই টেন্ডার দেয়া হবে।
উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির সভাপতি, ইউএনও বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাল পুনঃখনন কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, সে দিকে আমাদের নজর রয়েছে। খাল পুনর্খননের ম্বার্থে সরকারি বিধিমোতাবেক ভেড়িবাঁধের সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের গাছ অপসারণ করা হবে। টেন্ডার ছাড়া গাছ কাটার কোন সুযোগ নেই। অবৈধ ভাবে কেউ ভেড়িবাঁধের গাছ কেটে থাকলে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে ইউএনও জানান।