
সুজলা সুফলা, সবুজে ঘেরা আমাদের সোনার বাংলাদেশ। এদেশের মাটি যেনো সোনার চেয়েও খাঁটি। মূলত কৃষিবান্ধব দেশ আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু পূর্ব হতে বাংলার সাধারণ মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতো। সময়ের ব্যবধানে, দেশ স্বাধীন হবার পর বর্তমান সময় পর্যন্ত কৃষিতে ব্যাপক বিপ্লব ঘটেছে। পূর্বের সাধারণ সাদামাটা কৃষি থেকে এখন পরিপূর্ণ, ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশের কৃষক ও কৃষি সেক্টর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম একটি স্বপ্ন ছিলো দেশের কৃষি উন্নত করা। এক সফলকে দুই ফসলে রুপান্তর করা। কৃষকের ন্যায্যমূল্য আদায় করা ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম হ্রাস করা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন কৃষিবান্ধব কর্মসূচী হাতে নিয়েছেন। কৃষিখাত উন্নত করতে যোগ করেছে নানান ডিজিটাল প্রযুক্তি, উন্নত মেশিন এবং তা পৌঁছে দিয়েছেন প্রান্তিক কৃষকের দোরগোড়ায়। আর এতে বর্তমান কৃষকেরা ব্যাপক সুবিধা ভোগ করছে। ধান রোপণ থেকে ধান কাটা এবং মাড়াই সবই এখন ডিজিটাল পদ্ধতিতে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে।
বহুকাল পূর্বে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে অনেকে কৃষিতে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নিতে পারতো না৷ তবে এখন স্বল্পসুদে কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমানে লোন দেওয়া হয়৷ এতে কৃষকেরা তাঁদের প্রকল্পে বেশি পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ ও বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জন করে থাকে৷ কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত হবার পর থেকে প্রান্তিক কৃষকসহ ছোট বড় সকল কৃষি উদ্যোক্তারা ব্যাপক সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত বেকাররা কৃষিক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে, কৃষিতে দেখছে বিরাট সম্ভাবনার পথ৷ প্রযুক্তিগত ও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ পাবার পর শিক্ষিত বেকাররা কৃষিতে বিপ্লব ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ব্যায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রকল্প, ডিজিটাল পদ্ধতিতে হাঁস, মুরগী ও বিভিন্ন পাখি পালন করছে তাঁরা। গরু মোটাতাজাকরণ, দুগ্ধখামারসহ বিভিন্ন বারমাসি ফল এবং বছরের বিভিন্ন মৌসুমে মৌসুমি ফসল উৎপাদন করছে। এতে করে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে আর সেইসাথে স্থানীয় কৃষিপণ্যের চাহিদা মেটাচ্ছে৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য দেশের বাইরে রপ্তানি হচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। কমছে দেশের মোট বেকারত্বের হার।
আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে তরুণ-তরুণীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পর সরকারি-বেসরকারি চাকরির পেছনে ছুটছে। কিন্তু আত্নকর্মসংস্থান বা উৎপাদনশীলতার দিকে আগ্রহ কম। সরকারিভাবে কৃষিতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অনেকে সঠিক তথ্যের অভাবে পিছিয়ে পড়ছে৷ বাংলাদেশের কৃষিখাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে হলে শিক্ষিত যুবকদের এই সেক্টরে এগিয়ে আসতে হবে৷ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকদের সুদূর প্রসারি চিন্তাভাবনা বাংলাদেশের কৃষিকে আরো উন্নত করবে বলে আশাকরি। বিশ্বের সকল উন্নত দেশেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে কৃষি প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে। আমাদের দেশে উন্নত প্রযুক্তির কিছুটা অভাব রয়েছে গ্রামাঞ্চলের দিকে৷ সরকারের এদিকে আরো সুদৃষ্টি দিতে হবে৷ কৃষির উন্নতির স্বার্থে দেশের সকল কৃষক এবং কৃষিবিজ্ঞানীদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দিতে হবে যাতে তাঁরা দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পারে। আমাদের সকলেরই জানা উচিত যে, কৃষিতে উন্নত হলেই দেশ সার্বিকভাবে উন্নত হবে৷