সিরাজী এম আর মোস্তাক, ঢাকাঃ ধর্ম ও মুক্তিযুদ্ধ একতার মূলমন্ত্র। যারা দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য জীবন দেন, তারা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ। ১৯৭১ সালে এদেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তাদের ৩০লাখ শহীদ হয়েছেন। বাংলাদেশের ১৭কোটি নাগরিক, তাদেরই প্রজন্ম। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা করি। তারা সকল বিতর্কের উর্দ্ধে। তাদের সংখ্যা ও তালিকা নিয়ে বিতর্ক, বাংলাদেশের কলঙ্কজনক অধ্যায়। স্বার্থান্বেষী রাজনীতিবিদগণ এ কলঙ্ক সূচণা করেছেন। ৩০লাখ বীর শহীদদের বঞ্চিত করে প্রায় ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করেছেন। তালিকাভুক্তদের ভাতা ও কোটাসুবিধা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট করেছেন। দেশে মুক্তিযোদ্ধা, অমুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, রাজাকার, আলবদর, স্বাধীনতার পক্ষশক্তি ও বিপক্ষশক্তি প্রভূতি বহু বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। শুধু বিভাজন নয়, নির্বাচনে এসকল ব্যাঙ্গাত্মক শব্দাবলি ব্যবহার করেন। এর অনিবার্য্য পরিণতি- পরাধীনতা, জাতি বিভাজন, বিশৃঙ্খলা ও ক্ষতি। সুতরাং নির্বাচন কমিশনের দায়, নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবহার যেন না হয়।
জনাব তারেক রহমান একটি নির্বাচনী বক্তব্যে ১০কোটি ভোটারকে মুক্তিযোদ্ধা বলেছেন। ভোটার ব্যতিত অন্যদের তিনি মুক্তিযোদ্ধা বলেননি। তবে তিনি ২লাখ মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও নিকৃষ্ট কোটা বৈষম্যের গন্ডি অতিক্রম করেছেন। আওয়ামীলীগ মুক্তিযোদ্ধাকোটা নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করেছেন। ১৪ দলের মুখপাত্র জনাব নাসিম একটি বক্তব্যে বারবার `স্বাধীনতাবিরোধী` বলেছেন। তিনি ভালোভাবেই জানেন, তাঁর পিতা জাতীয় চারনেতার অন্যতম হলেও প্রচলিত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত নন। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা তালিকাবহির্ভূত হলেই কেহ স্বাধীনতাবিরোধী নন। এভাবে তারা জেনেবুঝে স্বার্থের জন্য নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা ব্যবহার করেন। অথচ এটি তাদের নিজস্ব বা একার নয়। এটি দেশের ১৭কোটি জনতার।
নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের ব্যবহার তথা তফসিলে যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের লান্থণা বেড়েছে। আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন। ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক শব্দ থাকলেও তাতে বিচারক এবং অপরাধী সবাই বাংলাদেশি। বিচারকগণ ১৯৭১ সালে জঘন্য হত্যার দায়ে ঘাতক পাকবাহিনীর পরিবর্তে নিজেদের যুদ্ধবিধ্বস্থ অসহায় দেশবাসীকেই অভিযুক্ত করেছেন। এতে বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত হয়েছে, ১৯৭১ এর সকল হত্যাকান্ড বাংলাদেশিরাই করেছে। তারাই ৩০লাখ বাঙ্গালি হত্যা করেছে। পাকবাহিনী কোনো হত্যাকান্ড করেনি। বাংলাদেশের বিচারকগণ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বসে পাকবাহিনীর অপরাধ পায়নি। এখন পাকবাহিনীকে ঘাতক বা যুদ্ধাপরাধী বললে, তা আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের সুস্পষ্ট অবমাননা। নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবহারে, এটিই প্রত্যক্ষ পাওনা। এর চেয়ে লান্থণা, আর কিছু হতে পারেনা।