২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি

শিরোনামঃ-
  • হোম
  • দেশজুড়ে
  • রাজশাহীতে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু রোগী: আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার সুযোগে চলছে নির্দয় ব্যবসা




রাজশাহীতে বেড়েই চলছে ডেঙ্গু রোগী: আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠার সুযোগে চলছে নির্দয় ব্যবসা

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী, করেসপন্ডেন্ট।

আপডেট টাইম : সেপ্টেম্বর ০৯ ২০২৩, ০২:১৯ | 628 বার পঠিত | প্রিন্ট / ইপেপার প্রিন্ট / ইপেপার

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা। এ বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এ বছর। রামেক হাসপাতালের হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম থেকেই রামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। কয়েক দিনের ব্যবধানে রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় ডেঙ্গু বিশেষায়িত ওয়ার্ড খুলতে বাধ্য হন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর একে একে ৫ টি ওয়ার্ড ডেঙ্গু রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। ৫ টি ওয়ার্ডই এখন ডেঙ্গু রোগীতে পূর্ণ। বর্তমানে ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত ৯৫৩ জন রোগী ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৬০ জন। এরমধ্যে রাজশাহীর স্থানীয় ৪৯১ জন। মারা গেছেন ৫ জন।
প্রাণ বাঁচাতে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে রামেক হাসপাতালসহ নগরীর লক্ষ্মীপুর ও এর আশপাশে অবস্থিত বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ছুটছেন রোগীরা। আর মানুষের এমন অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসায় দরকারি ওষুধপত্র থেকে শুরু করে রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসামগ্রীর দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মশারি, কয়েল, স্প্রে, ইলেকট্র্রিক ব্যাটসহ মশাপ্রতিরোধী সব ধরনের সামগ্রীর দামও বেড়েছে।
এর আগে করোনার অতিমহামারীর সময়েও মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে দেদারসে বাণিজ্য হয়েছে। সে সময়ে জরুরি ওষুধ, অক্সিজেন সিলিন্ডার, মাস্ক ও স্যানিটাইজারসহ সব ধরনের সুরক্ষাসামগ্রীর দাম রাতারাতি বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিপদগ্রস্ত মানুষকে কোণঠাসা করতে নিত্যপণ্যের মতো এসব পণ্যেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। বর্তমানে ডেঙ্গুর নাজুক পরিস্থিতির মধ্যেও চলছে এ ধরনের অমানবিক বাণিজ্য। এতে চিকিৎসাব্যয়ে জর্জরিত অসহায় মানুষ আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
রাজশাহী মহানগরীর হাসপাতালগুলোর নিকটস্থ ফার্মেসি ও পণ্যসামগ্রীর দোকানগুলোয় সবচেয়ে বেশি দাম বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে স্যালাইন, ক্যানোলা ও মাইক্রোপ্রোরের সেটের দাম বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। ৯০ টাকার স্যালাইন এখন ২০০ টাকা হয়েছে। মাত্র ৪০ টাকার ক্যানোলা কোনো কোনো দোকানে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে রোগীর পথ্য হিসেবে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় ৮০ থেকে ১০০ টাকার ডাবও দামে রেকর্ড করেছে। বর্তমানে একটি ডাব কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৪০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। ডাবের এতটা দাম অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
এদিকে, ডেঙ্গু রোগীর চাপ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের সামনের দোকানগুলোতে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়েছে অন্য রোগীদেরও। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সামনে গত বৃহস্পতিবার পাটি ও গামলা কিনতে এসে মো. কামাল হোসেন বলছিলেন, ডেঙ্গু রোগীর চাপে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে আমরা যারা ডেঙ্গু রোগী নই, তাদেরকেও এই বাড়তি দামে দরকারি জিনিসপত্র কিনতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু আতঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় মশার হাত থেকে রেহাই পেতে মশারি, কয়েলের মতো বিভিন্ন মশানিরোধক পণ্যের খোঁজে বাজারে ছুটছেন সাধারণ মানুষ। এতে এসব পণ্যের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে। আর বাড়তি এই চাহিদার সুযোগ নিয়ে লাগামহীন দামও বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসা ও ডেঙ্গু সুরক্ষায় খরচ অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। মানুষের কষ্ট বাড়লেও সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মাঠপর্যায়ে তেমন কার্যকর তদারকি দেখা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, চাহিদা অনুযায়ী একজন রোগীর ২ থেকে ৬ ব্যাগ পর্যন্ত স্যালাইনের প্রয়োজন হয়। তবে জুলাইয়ের শুরু থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ আকার ধারণ করলে ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজনীয় সাধারণ স্যালাইনের সংকট দেখা দেয়। শুরুতে সরকারি হাসপাতালে এই ঘাটতি দেখা দিলেও পর্যায়ক্রমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এর প্রভাব পড়ে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর চাপ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রোগীর অতিরিক্ত চাপের কারণে ভর্তির শুরুতে স্যালাইন দিলেও বাকিগুলো রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে ক্যানোলাও কিনতে হচ্ছে তাদের।
রামেক হাসপাতালের দায়িত্বরত একজন নার্স জানান, ‘জুলাইয়ের শুরুর দিক থেকে এই সংকট চলছে। রোগী অনেক, স্যালাইনের সরবরাহ কম। না থাকলে দেব কীভাবে?’
হাসপাতালের নিকটেই লক্ষ্মীপুরে রয়েছে বেশকিছু ওষুধের দোকান। এসব দোকানে এক ব্যাগ সাধারণ স্যালাইন ১২০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এখানকার একজন বিক্রেতা বলেন, ‘একাধিক কোম্পানি স্যালাইন দিতে সমস্যা করছে। তারা বলছে সরবরাহ কম। অন্যদিকে আমাদের পাশের দোকানসহ আশপাশের অনেক দোকান মজুদ করে রেখেছে। তারা বেশি দামে রাতে বিক্রি করে।’
রাজশাহী নগরীর কয়েকটি মশারির পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মশার উৎপাত থেকে রক্ষা পেতে সারাবছরই মশারির চাহিদা থাকে। তবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় গত এক মাসের ব্যবধানে চাহিদা অনেক বেড়েছে। তারা বলছেন, দাম সেভাবে বাড়েনি। অথচ খুচরা বাজারের চিত্র ভিন্ন। সেখানে ইচ্ছেমতো দামে বিক্রি হচ্ছে মশারি।
পাইকারি বাজারে পাঁচ ফুট বাই ছয় ফুটের ডাবল মশারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। তিন ফুট বাই ছয় ফুটের সিঙ্গেল মশারি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বহুল বিক্রি হওয়া ম্যাজিক মশারি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। এসব মশারিই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। ক্ষেত্রবিশেষে পাইকারির দেড়গুণ দামেও বিক্রি করছেন অনেক বিক্রেতা।
সাহেব বাজারের এক খুচরা দোকানি বলেন, চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে। আগের চেয়ে দাম ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি এখন। অপরদিকে মশা মারতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইলেকট্র্রিক ব্যাটের দামও বেড়েছে। প্রতিটা ব্যাটের দাম পড়ছে ৫০০-৬০০ টাকা। অথচ আগে এগুলো ৪০০-৪৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া গেছে। তার ওপর নকল পণ্যে সয়লাব বাজার। সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে আসলের দামে। মশা মারার ভেপোরাইজিং মেশিনসহ অন্যান্য ইলেকট্র্রনিক পণ্যের দামও আগের চেয়ে বাড়তি রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় বাসা কিংবা অফিসে সবাই এখন মশা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত। বিশেষ করে স্কুলগামী সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকরা বেশি আতঙ্কগ্রস্ত। তাই সাবধানতা অবলম্বনে অনেকেই ব্যবহার করছেন মশানিরোধক বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ক্রিম ও লোশন। জানা গেছে, এসব পণ্য কিনতেও আগের চেয়ে বেশি খরচ করতে হচ্ছে।
উন্নত এলাকাগুলোয় মশা মারার স্প্রে ও বৈদ্যুতিক কয়েলের ব্যবহার বেশি হলেও যেসব এলাকা স্যাঁতসেঁতে- সেখানে এবং নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে কয়েলের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। বাজারে দেশি-বিদেশি অর্ধশতাধিক ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের মশার কয়েল পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে নকল ও নি¤œমানের কয়েলের দামও বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অল্প সময়ে অতিমুনাফা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরা মানুষের অসুস্থতার সুযোগ নিতেও পিছপা হচ্ছেন না। অতিরিক্ত মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে উঠছেন তারা। এমনকি নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে তুলছেন তারা।
স্থানীয় সাংবিদক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় এমন নাজুক পরিস্থিতিরই অপেক্ষায় থাকে। এর আগেও করোনাকালে একই চিত্র দেখা গেছে। কিন্তু দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় বারবার এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। শাস্তির অভাবে অপরাধীর অপরাধপ্রবণতা আরও বাড়ছে। এমনকি যারা ব্যবস্থা নেবে, তাদেরকেই হাতে রাখছে সিন্ডিকেট চক্রগুলো। ফলে এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে না।

Please follow and like us:

সর্বশেষ খবর

এ বিভাগের আরও খবর

প্রধান সম্পাদক- খোরশেদ আলম চৌধুরী, সম্পাদক- আশরাফুল ইসলাম জয়,  উপদেষ্টা সম্পাদক- নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রধান সম্পাদক কর্তৃক  প্রচারিত ও প্রকাশিত

ঢাকা অফিস : রোড # ১৩, নিকুঞ্জ - ২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯,

সম্পাদক - ০১৫২১৩৬৯৭২৭,০১৬০১৯২০৭১৩

Email-dailynayaalo@gmail.com নিউজ রুম।

Email-Cvnayaalo@gmail.com সিভি জমা।

 

 

সাইট উন্নয়নেঃ ICTSYLHET