
একুশে পদক পেলেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চেচুড়ী গ্রামের কৃতি সন্তান দেশের বিশিষ্ট বংশীবাদক ওস্তাদ গাজী আব্দুল হাকিম। দেশের প্রথিতযশা বংশীবাদক শিল্পী রোববার একুশে পদকে ভূষিত হন।
তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের ময়দানে থাকা অবস্থায় তিনি তার মায়ের কষ্টের খবর নিতেন। তিনি যুদ্ধে যাওয়ার কারণে রান্না করার সময় তার মায়ের ভাতের হাঁড়ি রাইফেলের বাট দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়ে যেতেন রাজাকার। সব কিছুর পরেও যুদ্ধের সেসব দিনে তার সাথেই থাকতো বাঁশের বাঁশরী। মাটিতে খোঁড়া বাংকারে বসে মৃদু আওয়াজে বাজাতেন বেদনার করুন সুর। তার বড় কষ্ট হয় যখন তিনি দেখেন যে তৎকালীন অনেক রাজাকার এখন বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন আমার কোন শত্রু নাই কেবল রাজাকারেরাই আমার শত্রু।
তিনি ১৯৭৪ সালের শেষ দিকে খুলনা বেতারের সাথে জড়িত হন। এরপর ঢাকায় যান। বাংলাদেশের অধিকাংশ সঙ্গীত শিল্পীদের প্রথম অডিও এ্যালবামের কাজ তাঁর হাতে হয়। বাংলাদেশের চারটি সঙ্গীত প্রজন্মের সাথে তিনি কাজ করেছেন। লালন ফকিরের জীবন নিয়ে নির্মিত ছায়াছবি ‘মনের মানুষ’ এর সঙ্গীতায়োজনে তার অনবদ্য ভূমিকা ছিল। তিনি মানুষের মনন এবং বিভিন্ন মানসিক পরিস্থিতিকে বাঁশির সুরে প্রকাশ করেছেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি তার বাঁশির সুর ছড়িয়েছেন। সে সকল দেশের সরকার প্রধান তথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তার অসাধারণ পারফর্মেন্স দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে রেখে দিতে চেয়েছেন কিন্তু তিনি তখন বাংলাদেশের মাটির টানে ব্যাকুল ছিলেন। ফিরে এসেছেন তার চিরচেনা ভুবনে।
জল কাদা লেগে থাকা বাংলার মাটির সুরের সাথে তিনি ক্ল্যাসিক্যাল এবং ওয়েস্টার্ন ফিউশন করে সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য স্বতন্ত্র ঘরানা এবং সুরের এক ঐন্দ্রজালিক অভিব্যক্তি। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ যন্ত্র সঙ্গীত শিল্পী সংস্থার প্রেসিডেন্ট । বাঁশির সাথে তার এত সুগভীর প্রেম যে তিনি কামনা করেন বাঁশির সুরের মধ্য দিয়ে যেন তার দেহাবসান ঘটে এবং বাঁশির সুরের মধ্য দিয়েই অন্তিম যাত্রা হয়।
Please follow and like us: