চলতি মৌসুমের অতি বর্ষণে ডুমুরিয়া উপজেলার ‘বিল ডাকাতিয়া’-সহ সর্বত্রই জলমগ্ন হয়ে পড়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-সহ প্রশাসনের উদ্যোগে শোলমারি স্লুইস গেটের সামনে পলি অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেখানে সাফল্য না আশায় উপজেলা প্রশাসন আসন্ন মৌসুমে বোরো চাষের আশায় গত অক্টোবর মাসে জরুরী ভিত্তিতে কয়েকটি বিলে সেচ-পাম্প বসিয়ে জলনিষ্কাশনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সেখানে বিএডিসি’র সঙ্গে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র মধ্যে বিদ্যুতের রেট(দাম) নিয়ে রশি টানাটানি চলায় বিগত ২০ দিনেও বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় সেচ-পাম্প গুলো পড়ে রয়েছে।
ডুমুরয়া উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, অতি বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ডুমুরিয়া উপজেলায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ বিল ডাকাতিয়া-সহ সংলগ্ন রংপুর, রঘুনাথপুর, রুদাঘরা, খর্ণিয়া, আটলিয়া, মাগুরাঘোনা, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও অধিক চিংড়ি ঘের তলিয়ে(ভেসে) যাওয়ায় দেড় হাজার কোটি টাকার মাছের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকার সবজির ক্ষতির পরও আসন্ন বোরো মৌসুমে ৮ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান ও দেড় হাজার হেক্টর জমির সবজি চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।
ডুমুরিয়ার বিল ডাকাতিয়া’র তলদেশ নিচু ও বাইরের নদীর তলদেশ উচু হয়ে যাওয়ায় সম্পূর্ণ তলানো থাকলেও শোলমারি স্লুইস গেটের মুখ থেকে পলি অপসারণ করলেও আশানুরুপ পানি বের হচ্ছে না। তারপরও আসন্ন বোরো মৌসুম বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন বিলের স্লুইস গেটের মুখে পলি ও খালের মুখে বাঁধ অপসারণ-সহ নানামুখি প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
জলাবদ্ধ মানুষের চাহিদা ও প্রশাসনের চেষ্টায় বিলের পানি নামিয়ে ধান চাষের আশায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশ(বিএডিসি) থেকে ২০ দিন আগে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরে গোলনা ফায়ার সার্ভিসের সামনে ২টি, চহেড়া স্লুইস গেটে ৫টি, ষষ্ঠিতলা স্লুইস গেটে ১টি, নরনিয়া স্লুইস গেটে ১টি ও দহকুলা গেটের জন্য ১টি সেচ-পাম্প সরবারাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে সংযোগ প্রদানের অনুরোধ জানান।
কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের আগে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানায়, পানি নিষ্কাশনের জন্য বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে হবে। এখানে উল্লেখ্য ইতোপূর্বে ২০২০ সাল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার বিল তাওয়ালিয়া, বিল দহকুলা, বিল বরুণা, বিল মধুগ্রাম, বিল মুজারঘুটা-সহ বিভিন্ন বিলে ৩৫টি বৈদ্যুতিক সেচ-পাম্প চালু থাকায় ৩ হাজার একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। সে-সকল পাম্পে সেচ/কৃষি খাতের আওতায় বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট ৫.২৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে বোরো ধান চাষের আশায় অন্যান্য বিল গুলোর জল নিষ্কাশনের জন্য সেই বিদ্যুৎ সমিতি মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ বসিয়ে ‘কৃষি’র জন্য সেচের কথা না বলে শুধু পানি নিষ্কাশনের কথা বলে বিদ্যুতের রেট ৯.৭১ টাকা দিতে বলছে।’ এবং সেই জটিলতায় আটকে আছে ডুমুরিয়ার কৃষক কুল।
এ প্রসঙ্গে সিংগা বিল কমিটির সম্পাদক বাবুল আকতার সবুর বলেন, আমরা বোরো চাষের জন্য পানি নিষ্কাশন করবো। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বলছে, না ওটা শুধু জলনিষ্কাশন। তাই, ৯.৭১টাকা রেট। আমাদের সাথে এতো বড় বৈষম্য কেন ?
বিএডিসি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল ফারুক বলেন, ডুমুরিয়ার বিল গুলোতে বোরো চাষাবাদ অব্যাহত রাখতে আমরা আরও কয়েকটি বিলে সেচ পাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎকে অনুরোধ করেছি। এখানে উল্লেখ্য ডুমুরিয়া উপজেলার বেশ-কয়েকটি বিলে বোরো চাষের জন্য আগে থেকেই ৩৫টি সেচ পাম্প চলছে ৫.২৫টাকা ইউনিট দরে। সেইসব বিল-সহ নতুন কয়েকটি বিলে ১০টি সেচপাম্পে সংযোগ চাইলে বিদ্যুৎ সমিতি ৫.২৫ টাকার পরিবর্তে ৯.৭১ টাকা দিতে বাধ্য করছে। এ কারণে এলাকার বোরো চাষিরা চরম ক্ষতির শিকার হবেন।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র ডিজিএম প্রকৌশলী কাজী রমজান আলী বলেন, ধানের গোড়ায় পানি দেওয়া বা চাষের ক্ষেত্রে সরকার ২০% ভর্তুকি দিয়ে প্রতি ইউনিটের দাম ৫.২৫ টাকা রেখেছে। আর জলাবদ্ধতা নিরসনের ক্ষেত্রে (এলটিডি-২) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন’র সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্ধারিত রেট ৯.৭১ টাকা। এ ক্ষেত্রে আমার কি করার আছে। তবে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ, আমাদের জেনারেল ম্যানেজার’র সঙ্গে ৯.৭১ টাকা রেটে ডিমান্ড নোটের ২ লক্ষাধিক টাকা চলতি মাসের মধ্যে পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছে। আমরা ১সপ্তাহের মধ্যে সংযোগ দেওয়া চেষ্টা করবো।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, বোরো চাষের জন্য আগে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রয়োজন। তবে জিএম মহোদয়কে কৃষকদের জন্য রেটের বিষয়টি বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছি।
Please follow and like us: