ইমদাদুল হক,পাইকগাছা (খুলনা):- খুলনার পাইকগাছায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ঘর-বাড়ী। প্রায় দেড় হাজার ঘেরের কোটি কোটি টাকার চিংড়ী ও অন্যান্য মাছ ভেসে গেছে। ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার হেক্টর জমির আমন ও সবজি ফসল।
বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ও ১৭শ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন। লন্ডভন্ড করে দিয়েছে হাজার হাজার গাছ-পালা। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বে সবধরণের প্রস্তুতি থাকায় দুর্যোগে কোন প্রাণহানী ঘটেনি বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন, সড়কে পড়ে থাকা গাছ পালা অপসারণ ও দূর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও ইউএনও জুলিয়া সুকায়না।
শনিবার গভীর রাতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল উপকূলীয় অন্যান্য স্থানের ন্যায় অত্র উপজেলায় আঘাত হানে। রাতভর ঝড়ের গতিবেগ কম থাকায় রাতের তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। রোববার সকাল থেকে ৯টা পর্যন্ত ঝড়ের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে মুশলধারে বৃষ্টিপাতও হয়। ফলে সকালের কয়েক ঘন্টার ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় গোটা এলাকা। ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষ আগেভাগেই আশ্রয় কেন্দ্র সহ নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ায় কোথাও কোন প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
তবে ১০টি ইউনিয়ন সহ একটি পৌরসভায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। শত শত কাঁচা ঘর-বাড়ী বিধ্বস্ত হয়, গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয় আঁধাপাকা বাড়ী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হাজার হাজার বিঘা ঘের পানিতে ভেসে গিয়ে একাকার হয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়। আমন ও সবজি ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিধ্বস্ত হয়ে যায় গোটা বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। উপড়ে ও দুমড়ে মুচড়ে যায় হাজার হাজার গাছ পালা। এলাকার সকল সড়কে গাছ-পালা পড়ে বন্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা।উপজেলার দেলুটির কালিনগর ও গড়ইখালীর শান্তা এলাকার ওয়াপড়ার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনে মারাত্মক ক্ষতি হয়।
১০টার দিকে ঝড় থেমে গেলে উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আলী ও ইউএনও জুলিয়া সুকায়না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ও ওয়াপদার বেড়িবাঁধ পরিদর্শন এবং দূর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঘূর্ণিঝড়ে মোট আবাদী আমন ফসলের ২ হাজার ৭১৪ হেক্টর, সবজি ৫৬ হেক্টর ও ৯ হেক্টর পান ফসল আক্রান্ত হয়েছে। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস ও সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা এসএম শহিদুল্লাহ জানান, ৫ হাজার ১শ হেক্টর আয়তনের ১ হাজার ১৮২টি মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে একাকার হয়ে গেছে। এসব ঘেরের চিংড়ি ও মাছ ভেসে গিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোঃ রেজায়েত আলী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে পাইকগাছা-কয়রার ১ হাজার ৭৩৪ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কমপক্ষে ৯শ জায়গার তার ছিড়ে গেছে। ভেঙ্গে দুমড়ে মুচড়ে গেছে ১শ খুঁটি। পড়ে গেছে দেড়’শ খুঁটি। বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ১শ জন লোক রাতদিন কাজ করছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ গাছ কাঁটার কাজে সহযোগিতা না করায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুত স্বাভাবিক করতে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের এ কর্মকর্তা জানান। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, ঝড়ে উপজেলায় দেড় হাজার ঘর-বাড়ী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৬ হাজার আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করছি।উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুলিয়া সুকায়না জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্যোগ পূর্ব সব ধরণের প্রস্তুতি থাকায় এলাকায় কোন প্রাণহানী ঘটেনি। তবে গাছ-পালা, ঘর-বাড়ী, ঘের ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ঝড়ের আগে থেকেই সাধারণ মানুষের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা হয়। সড়কে পড়ে থাকা গাছ অপসারণ ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে দূর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে পরবর্তী সহায়তা প্রদান করা হবে বলে প্রশাসনের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এদিকে মায়ের চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থানরত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু ভিডিও কলের মাধ্যমে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিয়েছেন বলে জানাগেছে।